Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বাংলার রেল ফের বঞ্চিতই

কার্যত নতুন প্রকল্পের ছিটেফোঁটাও জুটল না রাজ্যের কপালে। এক ধাক্কায় বরাদ্দ কমল অধিকাংশ ঘোষিত প্রকল্পেরই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

ভোটমুখী বাজেটেও মন ভরল না রেলের। বঞ্চিত হল পশ্চিমবঙ্গ। কার্যত নতুন প্রকল্পের ছিটেফোঁটাও জুটল না রাজ্যের কপালে। এক ধাক্কায় বরাদ্দ কমল অধিকাংশ ঘোষিত প্রকল্পেরই।

ভোটের বছর। তাই অযাচিত কিছু প্রাপ্তির আশা ছিল সব শিবিরে। কিন্তু জনমোহিনী পথে না হেঁটে বিগত বছরগুলির মতোই সুরক্ষা ও পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগে জোর দিয়েছেন পীযূষ গয়াল। বাজেট নথি বলছে, মূলধনী খাতে বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৫৮,৬৫৮ কোটি। কেন্দ্রীয় সাহায্যের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৬৪,৫৮৭ কোটি, যা এ যাবৎ সর্বোচ্চ। ওই টাকার মধ্যে ৭ হাজার কোটি টাকা নতুন লাইন পাততে, ২০০ কোটি টাকা গেজ পরিবর্তন ও ৭০০ কোটি টাকা ডাবলিং-এর জন্য খরচ হবে। সিগন্যালিং-এর পিছনে ১৭৫০ কোটি টাকা ধার্য করেছে রেল। সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিকরণের কাজে। আগামী ২০২১-’২২ সালের মধ্যে ডিজেলের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে বলে আজ দাবি করেছে রেল মন্ত্রক। মন্ত্রকের দাবি, চলতি আর্থিক বছরেই নয়াদিল্লি-নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে বৈদ্যুতিকরণের কাজ শেষ হয়ে যাবে। কাজ চলছে হাওড়া-মালদহ লাইনেও।

যাত্রী সুরক্ষা প্রশ্নে টিপিডব্লিউএস (ট্রেন প্রোটেকশন ওয়ার্নিং সিস্টেম), লাইনে ফাটল খুঁজতে জিপিএস যুক্ত ট্র্যাক নজরদারি ব্যবস্থা বসানোর উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে বাজেটে। যাত্রী খাতে আয় আশানুরূপ হওয়ায় উৎসাহী রেল মন্ত্রক আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে অপারেটিং রেশিও (একশো টাকা খরচ করতে রেলের যত টাকা খরচ হয়) ৯৬.২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯৫ শতাংশে নিয়ে আসার নতুন লক্ষ্য নিয়েছে। নতুন ঘোষণার মধ্যে দেশের পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির উন্নয়নে একাধিক নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে রেল। তাতেও ব্রাত্য পশ্চিমবঙ্গ। গত এক বছরে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা ট্রেন-১৮-এর সাফল্যে উৎসাহিত রেল মন্ত্রক আগামী দু’বছরের মধ্যে আরও ৩০টি নতুন ট্রেন-১৮ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেলের দাবি, মার্চ মাসের মধ্যেই মোট দু’টি ট্রেন-১৮ চালু হয়ে যাবে।

মোদী সরকারের আমলে বেকারত্ব আকাশ ছুঁয়েছে বলে সরব বিরোধীরা। ওই অভিযোগের জবাব দিতে রেলকেই বেছে নিয়েছে শাসক শিবির। রেলে গত কয়েক মাস ধরে দেড় লক্ষ কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। আজ রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনোদ কুমার যাদব বলেন, ‘‘আগামী তিন মাসের মধ্যে আরও ১.৩ লক্ষ কর্মী নিয়োগ করবে রেল। এর পর আগামী দু’বছরে আরও ১ লক্ষ কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে মন্ত্রকের।’’ দেশ জুড়ে যখন চাকরির জন্য হাহাকার, তখন রেলের নিয়োগকেই বড় করে তুলে ধরে বিরোধীদের জবাব দিতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

তবে গত কয়েক বছরের মতো এ বারেও পশ্চিমবঙ্গের বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। রেলের নথি বলছে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোতে প্রায় দু’শো কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে। একই দশা কমবেশি অন্য মেট্রো প্রকল্পগুলির। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে ঘোষিত কাঁচরাপাড়া রেল কারখানার জন্য বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৩০ লক্ষ টাকা। গত বার যা ছিল এক কোটি। ডানকুনিতে দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ গড়তে ১.৫ কোটি বরাদ্দ করেছে রেল। খড়্গপুরে রিমোট টার্মিনাল ইউনিট বানাতে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ টাকা। বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগে সংসদে সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। বঞ্চনার অভিযোগ উড়িয়ে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনোদ যাদবের বক্তব্য, ‘‘গত এক বছরে যে প্রকল্পে যেমন টাকা খরচ হয়েছে, সেই হিসেবে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Budget 2019-20 Union Budget Indian Railway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE