এ ভাবেই ফাটল ধরে বিপজ্জনক হয়ে গিয়েছে ১২ নম্বর মদন দত্ত লেনের বাড়িটি। নিজস্ব চিত্র।
নতুন করে মেট্রো বিপর্যয়ে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে জুটেছিল মেট্রোর তরফে ব্যবস্থা করা হোটেলের ঘর। যদিও সমস্যার শেষ সেখানেও হয়নি। রবিবার থেকে চালু হওয়া সহায়তা কেন্দ্রে এসে এঁদের অনেকেই নানা অভিযোগ করে গেলেন। বস্তাপট্টির কেউ যেমন কাজ হারানোর আশঙ্কা করলেন, কেউ আবার কবে ঘরে ঢুকতে পারবেন সেই প্রশ্ন তুলে অভিযোগ জানালেন। ২০১৯-র ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে আবার প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ তুলে সোচ্চার হলেন রবিবার।
মেট্রোর কাজ চলাকালীন শুক্রবার নতুন করে বৌবাজারের মদন দত্ত লেনের একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। নতুন করে ঘরছাড়া হতে হয় প্রায় দশটি পরিবারকে। এ ছাড়া দুর্ঘটনাস্থলের ৫০ মিটারের মধ্যে আরও ৩৫টি বাড়ির বাসিন্দাদের সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। ফাটলের জেরে বন্ধ হয় বস্তাপট্টির কাজ। ভোগান্তি কমাতে শনিবার মেট্রো কর্তৃপক্ষকে বৌবাজারে সহায়তা কেন্দ্র খোলার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ মতোই রবিবার গোয়েঙ্কা কলেজে সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়। সহায়তা কেন্দ্রে মেট্রোর আধিকারিকেরাও ছাড়াও ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। আর সেই সহায়তা কেন্দ্রে এসে হোটেল নিয়ে নানা অভিযোগের পাশাপাশি অনেকে আবার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় হোটেল মেলেনি বলে অভিযোগ জানালেন এ দিন।
কাজ হারানোর আশঙ্কাতেও সহায়তা কেন্দ্রে হাজির হলেন বস্তাপট্টির একাংশ। রবিবার সহায়তা কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়িয়ে সুরেশ সাউ বলেন, ‘‘আমাদের যা কাজ ছিল, সবই তো বস্তাপট্টিতে। সেই কাজই তো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হোটেলে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হলেও রোজগারটাই তো বন্ধ হয়ে গেল। চলবে কী করে!’’ অনেকে আবার বস্তাপট্টিতে কাজ করলেও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় হোটেলে ঘর পাননি বলে সহায়তা কেন্দ্রে অভিযোগ করেন। তাঁদের একজন এ দিন বলেন, ‘‘কাজ তো বন্ধ হয়েছেই, কাগজপত্র না থাকায় মাথা গোঁছারও ঠাঁই মেলেনি। কী হবে জানি না!’’
ঘর কবে মিলবে তা জানতে চেয়ে এ দিন সহায়তা কেন্দ্রে হাজির হন রাজকুমার সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘দিনের পর দিন হোটেলে রেখে দেবে এটা তো চলবে না। একটা সময় তো বেঁধে দেবে। তা ছাড়া ক্ষতিপূরণের কী হবে, কিছুই তো বুঝতে পারছি না।’’
আগের দু’বারের ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে আবার এ দিন প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ তুলে সোচ্চার হন। তাঁদেরই একজন রাজেন পাণ্ডে বলেন, ‘‘গত বার আমার গয়না তৈরির কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন ক্ষতিপূরণ দেবে বলা হয়েছিল। কয়েক মাস পেরিয়ে গিয়েছে। সেই ক্ষতিপূরণ আজও মেলেনি।’’ সরাসরি প্রতারণার অভিযোগে সোচ্চার হতে দেখা যায় ঋক গুপ্তাকে। তিনি বলেন, ‘‘যা যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল অধিকাংশই পূরণ হয়নি। আমরা এমন একজন নির্দিষ্ট লোককে চাই, যাঁকে আমাদের সমস্যার কথা জানাতে পারি।’’ মেট্রো আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা।
এলাকার কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে বলেন, ‘‘প্রত্যেকের সমস্যার কথা শোনা হয়েছে। বস্তাপট্টিতে অনেক মানুষ কাজ করেন। তাঁদের অনেকের কাগজপত্র নিয়েও সমস্যা আছে। প্রত্যকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাঁদের সমস্যা সমাধানে যা যা প্রয়োজন, তা করা হবে।’’
এ দিন সকালেও ঘরছাড়া একাধিক পরিবারকে ঘটনাস্থলে এসে জিনিসপত্র বের করতে দেখা যায়। বাড়ি থেকে কাগজপত্র নিতে আসা সুস্মিতা কর বলেন, ‘‘কিছুই তো নিয়ে যেতে পারিনি। ক্ষতিপূরণ নিতে গেলেও তো এখন কাগজ চাইবে। হাতছাড়া করি কী করে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy