—ফাইল চিত্র।
গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন নিয়ে সাজ-সাজ রব সাগরদ্বীপে। সোমবার মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আবহে নদীপথে কড়া নজরদারি শুরু করেছে রাজ্য পুলিশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী এলাকায় বেড়েছে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা। বাংলাদেশ থেকে যাতে কোনও ভাবেই অবৈধ অনুপ্রবেশ না হয়, সেই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বার্তা পাঠিয়েছে রাজ্য সরকারকে। নবান্ন সূত্রে খবর, তার পর থেকেই অনুপ্রবেশ রুখতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসন। তা করতে গিয়ে রাজ্য পুলিশ ইঙ্গিত পেয়েছে গঙ্গাসাগর মেলার ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে নদীপথে হতে পারে বেআইনি অনুপ্রবেশ। আর সেই আভাস পেয়েই মেলা শুরুর আগে গঙ্গা এবং সাগরের মিলনস্থলে বেড়েছে পুলিশি নিরাপত্তা। রাজ্যের তরফে মূলত এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে। সাংবাদিক বৈঠক করে জেলা পুলিশের তরফে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, সুন্দরবন জেলা পুলিশ-প্রশাসনের ওই সাংবাদিক বৈঠকের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কড়া বার্তা পাঠানো। জলপথে অনুপ্রবেশের চেষ্টা হলে যে রাজ্য পুলিশ ছেড়ে কথা বলবে না, সে কথা সাংবাদিক বৈঠকের স্পষ্ট করে দিয়েছেন সুন্দরবন জেলা পুলিশের সুপার কোটেশ্বর রাও। তিনি বলেছেন, ‘‘গঙ্গাসাগর মেলায় মোট ১২ হাজার পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নদীপথে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেই জন্য বিশেষ ভাবে নজরদারি চালানো হচ্ছে।’’ সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় বেশ কয়েক জন বাংলাদেশি জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছেন। গত বছর ডিসেম্বরে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া এলাকা থেকে দুই জেএমবি (জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ) জঙ্গি আব্বাস শেখ এবং মিনারুল শেখকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া, নওদা থানার দুর্লভপুর এলাকা থেকে সাজিবুল ইসলাম নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যিনি পূর্বে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি জঙ্গি সাব শেখের পিসতুতো ভাই। এই গ্রেফতারির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয়তা সম্পর্কে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
সম্প্রতি, হাবড়া ও ক্যানিং এলাকা থেকেও কিছু ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাঁদের সঙ্গে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই গ্রেফতারিগুলি পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনগুলির ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এই বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। সম্প্রতি এমন তথ্য প্রকাশ্যে আসতে থাকায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বেআইনি অনুপ্রবেশ নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ। তা ছাড়া, গঙ্গাসাগর মেলার মতো এত বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, তা-ও নিশ্চিত করতে চাইছে পুলিশ-প্রশাসন। তাই প্রথম থেকেই শক্ত হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে নেমেছে পুলিশ। আগামী ১০ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সাগরদ্বীপে বসছে গঙ্গাসাগর মেলার আসর। এই ব্যস্ততার সুযোগে বেআইনি অনুপ্রবেশ রক্ষা আপাতত ‘পাখির চোখ’ জেলা পুলিশ-প্রশাসনের।
নবান্ন সূত্রে খবর, গঙ্গাসাগর মেলায় আসার ক্ষেত্রে মূলত দু’টি পথকে ব্যবহার করেন তীর্থযাত্রীরা। সবচেয়ে বেশি তীর্থযাত্রী আসেন কাকদ্বীপের লট নম্বর-৮ থেকে। সাগরের দ্বিতীয় প্রবেশপথ হল নামখানার চেমাগুড়ি থেকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় ১৫০ কিমি বিস্তীর্ণ। তাই মেলার সময় বঙ্গোপসাগরে উপকূলরক্ষী বাহিনী ও নৌবাহিনী কড়া নজরদারি চালানো শুরু করেছে। সুন্দরবন পুলিশ জেলার পক্ষ থেকেও বঙ্গোপসাগর এবং নদীতে এফআইবি দিয়ে সার্চিং অপারেশন ও পেট্রলিংয়ের কাজ চালানো হচ্ছে। গোবর্ধনপুর, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, কাকদ্বীপ ও সাগর জুড়ে চলছে এই পেট্রলিং। এমনকি মৎস্যজীবীদের ট্রলারেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের বৈধ পরিচয়পত্র, লাইসেন্স খতিয়ে দেখছে জেলা পুলিশ। জলপথে অচেনা কিছু চোখে পড়লে পুলিশকে খবর দিতে বলা হয়েছে মৎস্যজীবীদের। উপকূলরক্ষী বাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিএসএফের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy