নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি মতো দেশে ‘আচ্ছে দিন’ আসবে কি না, তা বলার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের ছ’ মাসের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে ‘আচ্ছে দিন’ এসে গেল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-এর।
রাজ্যের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে লড়াই এত দিন সীমাবদ্ধ ছিল লাল এবং সবুজের মধ্যে, সেখানে এখন গৈরিক পতাকা নিয়ে হাজির নয়া প্রতিদ্বন্দ্বী এবিভিপি। ওই ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, ছ’ মাসে রাজ্যে তাদের কলেজ ইউনিট তিন গুণ বেড়ে হয়েছে ৩১৪। কলকাতায় তাদের ইউনিট গড়ে উঠেছে ৩৬টি কলেজে। সেখানেও বৃদ্ধি তিন গুণ। কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেরুয়া রং নতুন লেগেছে, তার মধ্যে আছে স্কটিশ চার্চ কলেজ, সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাস, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।
এবিভিপি-র এই আত্মপ্রসারের দাবি যে অসত্য নয়, তা মেনে নিচ্ছেন শাসক দলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-র নেতারাও। তাঁদের বক্তব্য, আগামী দিনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দখলে রাখতে লড়তে হবে এবিভিপি-র সঙ্গে। এবিভিপি-র রাজ্য সম্পাদক সুবীর হালদার জানান, প্রতি বছরই তাঁদের সদস্যকরণ এবং সদস্যপদ নবীকরণ অভিযান হয়। এ বছর জুলাই মাসের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের গোড়া পর্যন্ত ওই অভিযান চলেছে। তাতে গোটা রাজ্যে এবিভিপি-র সদস্যসংখ্যা পাঁচ গুণেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ৪৬ হাজার ৬৩১।
এই বাড়বাড়ন্তের কৃতিত্ব পুরোপুরি বিজেপি-কে দিতে চান না গেরুয়া ছাত্র সংগঠনটির নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপির সঙ্গে এবিভিপি-র মতাদর্শের মিল আছে ঠিকই। কিন্তু বিজেপি-র হাওয়াই তাদের পালে লেগেছে, এমন ভাবা ভুল। সুবীরবাবু বলেন, “আসল ব্যাপার হল, এ রাজ্যের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবককুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি এবং তার জেরে হিংসা দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ। বাম জমানায় এসএফআই ও বর্তমানে টিএমসিপি-র দুর্নীতি এবং হিংসার দাপট দেখার পর তাঁরা দলীয় রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চান। আর এবিভিপি-র ঘোষিত নীতিই সেটা। তাই আমাদের সমর্থন বাড়ছে।”
গত রবিবার অমৃতসরে এবিভিপি-র তিন দিনের জাতীয় সম্মেলন শেষ হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, বঙ্গে সংগঠনের শক্তিবৃদ্ধিকে পুঁজি করে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। যার উদ্দেশ্য ‘বিকল্প ছাত্র’ গড়ে তোলা। তাই নেশামুক্ত কলেজ ক্যাম্পাস গড়ার স্লোগান নিয়ে আসরে নামবেন সংগঠনের কর্মীরা। এবিভিপি-র পূর্ব ক্ষেত্র সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, “পেশিশক্তি প্রদর্শন আমাদের কাজ নয়। নেশার প্রকোপ বাড়ায় ছাত্রসমাজের একাংশ দিগ্ভ্রষ্ট হচ্ছে। নারী নির্যাতন-সহ অন্যান্য অপরাধ বাড়ছে। তাই আমরা নেশামুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার আন্দোলন করব।”
এবিভিপি-র শ্রীবৃদ্ধিতে প্রত্যাশিত ভাবেই টিএমসিপি-র কপালে ভাঁজ পড়েছে। টিএমসিপি সূত্রের খবর, সম্প্রতি তাদের এক নেতার চোখে পড়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার বহু কলেজের বাইরে দেওয়ালে এবিভিপি-র পোস্টার লাগানো আছে। তড়িঘড়ি ওই ছাত্রনেতা কলেজের টিএমসিপি সমর্থকদের নির্দেশ দেন, পোস্টারগুলি ছিঁড়ে দিতে। সেইমতো সব পোস্টার ছেঁড়াও হয়। পোস্টার ছিঁড়ে বা দেওয়াল লিখন মুছে যে এবিভিপি-কে ঠেকানো যাবে না, তা মানছেন জনৈক টিএমসিপি নেতা।
শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের এক নেতার কথায়, “শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছাত্রনেতাদের মতপার্থক্যে এবিভিপি-র সুবিধা হচ্ছে।” ওই নেতার ব্যাখ্যা, শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নাক গলানো বন্ধ করার বার্তা পেয়ে তাঁদের সংগঠনের অনেক নেতাই কিছুটা গুটিয়ে গিয়েছেন। সেই সুযোগে জমি দখল করছে এবিভিপি।
টিএমসিপি নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে এবিভিপি-কে গুরুত্বই দিচ্ছেন না। টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “কল্পনার উপর ভিত্তি করে কয়েক জন কিছু কথা প্রচার করছেন। কিন্তু কলেজে ইউনিট খুলতে গেলে যে পরিমাণ পড়ুয়াদের সমর্থন দরকার, তা এবিভিপি-র নেই। ওরা সংবাদমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে বেড়ালকে বাঘ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে!’
রাজ্যে এবিভিপি-র সদস্য বেড়েছে, তা মানতে রাজি নন এসএফআই নেতৃত্বও। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস বলেন, “এ রাজ্যে টিএমসিপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে এবিভিপি কিছু বেড়েছে। তবে আমরাও সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা চালাচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy