প্রতীকী ছবি।
সংরক্ষণ কেন্দ্রিক রাজনীতিকে ঘিরে সাম্প্রতিক কালে উত্তপ্ত হয়েছে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানার মতো একের পর এক রাজ্য। অবরুদ্ধ হয়েছে সড়ক, রেল। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় সংরক্ষণের আঁচ এনে ফেলতে চাইছে বিজেপি।
সরকারি চাকরিতে অন্যান্য অনগ্রসরদের (ওবিসি) জন্য ২৭% সংরক্ষণের দাবি তুলে আজ, বুধবার কলকাতায় পথে নামছে কেন্দ্রের শাসক দল। বিজেপি-র ওবিসি মোর্চার উদ্যোগে ওই মিছিল হয়তো আড়ে-বহরে চমকে দেওয়ার জায়গায় পৌঁছবে না। কিন্তু মিছিলের নেপথ্যের রাজনীতি ভাবিয়ে তুলতে পারে রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশকে। কারণ, যে রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৪৫% এখন ওবিসি, সেখানে কেন ২৭% সংরক্ষণ তাঁদের দেওয়া হবে না— এই দাবি নিয়ে রাস্তায় নামলে তা জনতার বড় অংশের মনোযোগ টানতে সফল হতেই পারে।
বিজেপি-র ওবিসি সেলের যুক্তি, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ বা অসমের মতো নানা রাজ্যেই ওবিসি জনসংখ্যার আনুপাতিক হার বিবেচনায় রেখে সংরক্ষণ চালু আছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখন যে ১৭% সংরক্ষণ আছে, তার মধ্যে ওবিসি-র জন্য প্রাপ্য ৭%। বাকি ১০% সংরক্ষণের সুযোগ ‘এ’ ক্যাটিগরিতে সংখ্যালঘুরা পেয়ে থাকেন, যা ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিযোগ বিজেপি-র ওবিসি মোর্চার রাজ্য সভাপতি স্বপন পালের। তাঁদের দাবি, ওবিসি-র জন্যই ২৭% সংরক্ষণ এ রাজ্যে চালু হোক। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, এমন দাবিকে হাতিয়ার করলে এক দিকে অনগ্রসরদের মন পাওয়ার চেষ্টা করা যায়। একই সঙ্গে তৃণমূলের ‘সংখ্যালঘু-তোষণে’র রাজনীতিকেও কৌশলে নিশানা করা যায়। তাতে হিন্দুত্ববাদী ভাবাবেগই অন্য পথে সক্রিয় করে দেওয়া যায়। ওই অংশের বক্তব্য, মেরুকরণের রাজনীতিকে এ রাজ্যে জাঁকিয়ে বসার বন্দোবস্ত করেছে বিজেপি। তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে তৃণমূলও। এ বার সংরক্ষণকে কেন্দ্র করে ওবিসি-আবেগ আমদানি করার চেষ্টা হলে রাজনৈতিক সমীকরণে তার প্রভাব পড়বে।
রঙ্গনাথ কমিশনের সুপারিশের পরে ওবিসি সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু করেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। পরিবর্তনের পরে মমতার সরকার এসে বাম আমলের সেই আইন বাতিল করে নতুন বিল পাশ করিয়েছে। ওই আইনের সুবাদে মুসলিমদের ৯৯%-ই এখন সংরক্ষণের আওতায় চলে এসেছেন বলে দাবি করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই দাবিকে নিশানা করেই অন্যান্য অনগ্রসরদের মধ্যে ‘বঞ্চনা’র যন্ত্রণা উস্কে দিতে চাইছে বিজেপি। অন্যান্য রাজ্যে অবশ্য বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংগঠনের হাত ধরেই সংরক্ষণের আন্দোলন উঠে এসেছে। বাংলায় সেখানে একটি শাখা সংগঠনকে দিয়ে আন্দোলনে যাচ্ছে বিজেপি-ই। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও মিছিলে থাকার কথা। দিলীপবাবুদের যুক্তি, ওবিসি নেতা-কর্মীদের নিয়েই তাঁদের ওই মোর্চা কাজ করে। তাই অসুবিধা কোথায়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy