বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী (বাঁ দিকে)। মুকুটমণির স্ত্রী স্বস্তিকা (ডান দিকে)। ছবি: ফেসবুক।
স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগের মামলায় জামিন না পাওয়া পর্যন্ত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন না বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। গত ৭ জুন তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রী স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী কলকাতার তিলজলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিয়ের মাত্র ১১ দিনের মাথায় অভিযুক্ত হন রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক। সেই খবর জানাজানি হয় রবিবার সন্ধ্যায়। তার পর থেকেই মুকুটমণির কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না! বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন মুকুটমণির বাবা এবং ভাই।
ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশ বিজেপি বিধায়ককে ডেকে তাঁর স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে জেরার প্রস্তুতি শুরু করেছে বলেই সূত্রের খবর। জেরার জন্য তাঁকে নোটিসও পাঠানো হতে পারে। বিষয়টি মুকুটমণির ‘ব্যক্তিগত’ বলে প্রকাশ্যে জানালেও ঘটনাপ্রবাহে স্বভাবতই খানিকটা ‘অস্বস্তি’-তে বিজেপি। তাই মুকুটমণির সঙ্গে যোগাযোগ করে কয়েক জন রাজ্যনেতা কথা বলেছেন। জানতে চেয়েছেন, কেন তিনি এ বিষয়ে প্রকাশ্যে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন না। সূত্রের খবর, তার পরেই মুকুটমণি নিজের অবস্থান দলের নেতাদের জানিয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, আদালত ওই মামলায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করলেই প্রকাশ্যে এসে স্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন বিজেপির চিকিৎসক-বিধায়ক। আপাতত সাংসদ, বিধায়কদের আদালতে জামিনের আবেদন জানিয়েছেন মুকুটমণি। পাশাপাশি, পৃথক ভাবে আদালতে জামিনের আবেদন জানিয়েছেন তাঁর বাবা ও ভাই।
মুকুটমণির সঙ্গেই তাঁর বাবা এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশিই আনা হয়েছে তোলাবাজি, বিশ্বাসভঙ্গ, আটকে রাখা ও হুমকি দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও। মোট ৬টি ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর স্ত্রী স্বস্তিকা। উল্লেখ্য, গত মে মাসের ২৮ তারিখে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন মুকুটমণি-স্বস্তিকা। তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রীর পুলিশি অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুকুটমণির মোবাইলে বার বার ফোন করা হলেও তিনি এক বারও ফোন ধরেননি। সূত্রের খবর, মুকুটমণি ও তাঁর স্ত্রী পূর্বপরিচিত। গত ১৩ মার্চ তাঁরা একসঙ্গেই রেজিস্ট্রি বিয়ের আবেদন করেন। ২৮ মে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে তাঁদের। কিন্তু বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটায় ‘অস্বস্তি’-তে পড়েছে রাজ্য বিজেপি। তবে এই ঘটনা প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতে নারাজ বিজেপি নেতারা। তাঁদের কথায়, ‘‘যে হেতু ব্যক্তিগত ভাবে মুকুটমণির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাই তিনিই অভিযোগের জবাব দেবেন।’’
মুকুটমণি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পছন্দসই বলেই বিজেপি মহলে পরিচিত। শাহের পছন্দের ভিত্তিতেই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রথমে তাঁকে রানাঘাট থেকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু স্বাস্থ্যভবন চাকরি থেকে তাঁর ইস্তফা গ্রহণ না-করায় ভোটে দাঁড়ানো হয়নি মুকুটমণির। পরে জগন্নাথ সরকারকে ওই আসনে প্রার্থী করে বিজেপি। তার পরে অবশ্য বেশি দিন চাকরি করেননি মুকুটমণি। চলে আসেন সক্রিয় রাজনীতিতে। মতুয়া সমাজ থেকে উঠে আসা এই যুবা রাজনীতিক ২০২১ সালে রানাঘাট দক্ষিণ থেকে বিজেপির টিকিটে বিধায়ক হন। দলীয় একটি সূত্রের দাবি, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী— সকলেই পছন্দ করেন মুকুটমণিকে। তাই তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রী স্বস্তিকা অভিযোগ দায়ের করলেও বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর পাশেই থাকবেন বলে দাবি রাজ্য বিজেপির একাংশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy