Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Sukanta Majumdar

নিউ টাউনের আস্তানা থেকে লালবাজারের লক আপ, সুকান্ত কি অবশেষে ‘নেতা’ হলেন?

চুপিচুপি উলুবেড়িয়া যান দিলীপ ঘোষ। কিন্তু পূর্বসূরির রাস্তায় যাননি সুকান্ত। পুলিশকে জানান, তিনি হাওড়া যাবেন। সেটাই তাঁর ‘মাস্টারস্ট্রোক’।

লালবাজার থেকে বেরোনোর পর শনিবার এ ভাবেই নেতার সংবর্ধনা সুকান্তকে।

লালবাজার থেকে বেরোনোর পর শনিবার এ ভাবেই নেতার সংবর্ধনা সুকান্তকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২২ ১৩:২০
Share: Save:

জানাজানি হতে একটু সময় লাগলেও শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই পুলিশের সঙ্গে সুকান্ত মজুমদারের সংঘাত শুরু হয়ে যায়। আর তার পর থেকে নাটকের পর নাটক। সব শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময়ে যখন লালবাজারের লক আপ থেকে বার হলেন, তখন তাঁকে ঘিরে কর্মী-সমর্থকদের বিপুল উল্লাস আর স্লোগান। ‘সুকান্ত মজুমদার জিন্দাবাদ’ ধ্বনির সঙ্গে রাজ্য সভাপতিকে রজনীগন্ধার মালায় বরণ করে নেওয়া হয়। বীরদর্পে গাড়িতে উঠে রাজভবনের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন সুকান্ত। তখনই সেখানে উপস্থিত এক বিজেপি কর্মীকে বলতে শোনা গেল, ‘‘সুকান্তদা আজ সত্যি সত্যি নেতা হলেন।’’

গত সেপ্টেম্বরে বিজেপি রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব পান সুকান্ত। এর পর থেকে অনেক ঘোষিত কর্মসূচিতে পথে নামলেও সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়ে নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেননি। পারলেন শনিবার। রাজ্যে প্রধান বিরোধী দলের ‘সভাপতি’ থেকে ‘নেতা’ হয়ে ওঠার একটি ধাপ এগোলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। সেই মহল মনে করাচ্ছে, আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘জননেত্রী’ হয়ে ওঠার পথে বার বার এমন বাধার মুখে পড়েছেন। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম তো বটেই, বাম জমানায় আরও অনেক জায়গায় যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন। কখনও পথেই বসে পড়েছেন, কখনও কলকাতায় ফিরে এসে আন্দোলন শুরু করেছেন। সুকান্তও পথ ছাড়েননি শনিবার। যদিও এ ভাবে মমতার সঙ্গে তাঁর তুলনা টানা অনেকের কাছেই বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে। তাঁদের কথায়, পুলিশের সঙ্গে একদিন মহড়া নিলেই আর কয়েক ঘণ্টা লক আপে কাটিয়ে ফেললেই মমতা হওয়া যায় না। তবে একটা কথা সবাই মানছেন, মাস কয়েক ধরে মুকুট পরে বসে থাকা ‘অনভিজ্ঞ’ সভাপতি, এ বার দলের কর্মীমহলের চোখে সত্যিকারের নেতার সম্মান পেলেন।

সুকান্তর এই ‘নেতা হয়ে ওঠা’র নেপথ্যে কি অমিত শাহ আর জেপি নড্ডার ‘বুস্টার ডোজ’? দু’দিন আগে কলকাতায় এসেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডা। পথে নামতে বলেন বিজেপির রাজ্য নেতাদের। একই নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন শাহ। তার পরই এই নতুন ভূমিকায় দেখা গেল সুকান্তকে।

গ্রেফতার করে গাড়িতে তোলা হল সুকান্তকে।

গ্রেফতার করে গাড়িতে তোলা হল সুকান্তকে।

নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্য এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে গত কয়েক দিন অগ্নিগর্ভ ছিল হাওড়ার বেশ কিছু অঞ্চল। শুক্রবার বিকেলে রাজ্য বিজেপি দাবি করে, উলুবেড়িয়ার মনসাতলায় দলের কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বিজেপি সূত্রে খবর, এর পরেই সুকান্ত উলুবেড়িয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। তবে তা প্রকাশ্যে আনেন বেশি রাতে। শনিবার সকালে খানিকটা চুপি চুপিই উলুবেড়িয়া চলে যান বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁকে পুলিশ আটকাতে পারেনি। কিন্তু পূর্বসূরির রাস্তায় যাননি সুকান্ত। রাজ্য প্রশাসনকে তাঁর কর্মসূচির কথা জানিয়ে দেন তিনি। তত ক্ষণে হাওড়ায় উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে ১৪৪ ধারা জারি করে দিয়েছে প্রশাসন। সুকান্ত-ঘনিষ্ঠরা বলছেন, উলুবেড়িয়া যাওয়ার অনুমতি পাবেন না বুঝেও প্রশাসনকে তা জানান সুকান্ত। লক্ষ্য ছিল, পুলিশের বাধাকে সর্বসমক্ষে নিয়ে আসা। সেই কৌশলে তিনি যে সফল তা দিনের শেষে স্পষ্ট। পুলিশ বনাম সুকান্তর দিনভর দ্বন্দ্বই তাঁকে শিরোনামে রেখে দিল শনিবার।

নিউ টাউনের যে বাড়িতে সুকান্ত থাকেন সেখান থেকে বেলা ১১টায় তাঁর রওনা হওয়ার কথা ছিল। তার আধ ঘণ্টা আগেই সেখানে পৌঁছে যায় পুলিশ। সুকান্তর সঙ্গে কথাবার্তা চলতে থাকে। এসে যায় সংবাদমাধ্যমও। অন্য দিকে, বিজেপি কর্মীদের একটি দলও পৌঁছে যায় সেখানে। পৌঁছে যান দলের এক আইনজীবী নেতাও। পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদের মধ্যেই দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ সুকান্ত টুইটে দাবি করেন, তিনি ‘গৃহবন্দি’ হয়ে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি ফেসবুক লাইভে দিতে থাকেন। তিনি বলেন, “আমি হাওড়া যেতে চাই। পুলিশ কোনও ভাবেই অনুমতি দিচ্ছে না। পুলিশ দলদাসের মতো ব্যবহার করছে। কেন আমাকে গৃহবন্দি করে রাখা হল বুঝতে পারছি না। পুলিশ কোনও আইনি কাগজ দেখাতে পারেনি।” এর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পুলিশকে সুকান্ত বলেন যে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি দলের রাজ্য দফতরে যেতে চান। পুলিশ মুচলেকা দিতে বললে রাজি হননি তিনি। উল্টে সেখানে উপস্থিত আইনজীবী নেতার কাছে ওকালতনামায় সই করে জানিয়ে দেন, তাঁকে আটকে রাখার অভিযোগে আদালতে যাবেন।

পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি সুকান্তর।

পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি সুকান্তর।

বিজেপি কর্মীদের সাহায্যে পুলিশের বাধা টপকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন সুকান্ত। সেখানেও বাধা দেয় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত দুপুর সওয়া ২টো নাগাদ গাড়িতে চেপে হাওড়ার উদ্দেশে রওনা দেন। পুলিশও থেমে থাকেনি। বিদ্যাসাগর সেতুতে ওঠার আগে পিটিএসের কাছে তাঁর কনভয় আটকায় পুলিশ। গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন সুকান্ত। ফের গাড়িতে ওঠেন। বিদ্যাসাগর সেতুর টোল প্লাজার কাছ থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয় বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ। সাড়ে চার ঘণ্টা লালবাজারের লক আপে ছিলেন। সেখানে গ্রেফতার হওয়া বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে হাততালি দিয়ে গান গাইতে দেখা যায় সুকান্তকে। ‘কারার ওই লৌহকপাট’ গাওয়ার পাশাপাশি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কথাও বলতে থাকেন ফোনে। একের পর এক টুইটে আক্রমণ করেন রাজ্য সরকারকে।

কথা ছিল, লালবাজার থেকে বেরিয়ে ৭টার সময়ে রাজভবনে যাবেন তিনি। পুলিশ সেই মতো কাগজপত্র তৈরিও রেখেছিল। কিন্তু সুকান্তই বেঁকে বসেন। তাঁর সঙ্গে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছিলেন, এবং পরে কলকাতায় বিক্ষোভ দেখিয়ে যে সব বিজেপি কর্মী-সমর্থক গ্রেফতার হন, তাঁদের না ছাড়া পর্যন্ত বেরোবেন না বলে জানিয়ে দেন নেতা সুকান্ত। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে লালবাজার থেকে বার হন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ। ফুলের মালা পরে রাজভবনের উদ্দেশে রওনা দেন সেখান থেকেই। নেতা সুকান্ত।

অন্য বিষয়গুলি:

Sukanta Majumdar BJP West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy