ফাইল ছবি
আগামী সপ্তাহে দিল্লিতে বিরোধী দলগুলির একটি বৈঠকের আয়োজন করতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকের স্থান, কাল নির্দিষ্ট করে ইতিমধ্যেই বিজেপি- বিরোধী রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের ও বিরোধী নেতাদের কাছে ব্যক্তিগত চিঠিও পাঠিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। ১৫ জুন দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বিকেল ৩টেয় এই বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এমন উদ্যোগ যে হচ্ছে, বিরোধী শিবির থেকে তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু মমতা নিজে চিঠি পাঠানোর পরে বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে। বিরোধীদের একাংশের মধ্যে দেখা দিয়েছে সংশয় ও প্রশ্ন। যার ফলে প্রস্তাবিত ওই বৈঠকের ‘ভবিষ্যৎ’ সম্পর্কেও শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন বৈঠকের ব্যাপারে গোড়া থেকেই মমতা সব থেকে বেশি উৎসাহী। উদ্দেশ্য, বিরোধীদের পক্ষে সর্বসম্মত ভাবে প্রার্থী দেওয়া। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী, এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার, ডিএমকে’র এম কে স্ট্যালিনের মতো অনেকের সঙ্গেই তিনি ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেছিলেন। তবে শনিবার তিনি নিজে চিঠি দিয়ে সবাইকে বৈঠকের নির্ধারিত সূচি জানানোর পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কংগ্রেস শিবিরের প্রশ্ন, সনিয়া গান্ধী তো নিজেই মমতা, পওয়ারকে ফোন করে কথা বলে ঠিক করেছিলেন, তাঁর হয়ে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে পওয়ার, মমতা, স্ট্যালিন-সহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে বৈঠকের প্রস্তুতি নেবেন। মুম্বইয়ে পওয়ারের সঙ্গে খড়্গের কথাও হয়েছে। রবিবার থেকে খড়্গের বাকি সব দলের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা ছিল। ১৫ জুন সবাই মিলে বৈঠক হবে, এমন লক্ষ্য নিয়েই এগোনো হচ্ছিল। আচমকা মমতা একতরফা সনিয়া-সহ সবাইকে চিঠি পাঠিয়ে আমন্ত্রণ জানালেন কেন?
উল্টোদিকে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর), দিল্লির অরবিন্দ কেজরীওয়ালের মতো কেউ কেউ কংগ্রেসের সঙ্গে একত্রে বসা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন বলে সূত্রের খবর। মমতার সঙ্গে ফোনে কেসিআর-এর এ নিয়ে কিছুটা মতভেদও হয়েছে। তবে কেজরীওয়াল যদি বৈঠকে না-ও থাকেন, তবু বিরোধী শিবিরের সঙ্গেই থাকবেন বলে আশ্বাস পেয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। ওড়িশার নবীন পট্টনায়কের অবস্থান অবশ্য এখনও খুব স্পষ্ট নয়। আর অন্ধ্রপ্রদেশের জগন্মোহনকে এই মঞ্চে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি মমতার এই উদ্যোগকে বিরোধী ঐক্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হিসেবেও মনে করছেন।
সনিয়ার সঙ্গে মমতার কথা হয় দু’দিন আগে। কংগ্রেস সভানেত্রী এখন অসুস্থ। তাই মমতা তাঁকে অনুরোধ করেন, অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে চাপ নিতে হবে না। তিনি অনুমতি দিলে মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গের কথা বলে ঠিক করে নেওয়া যাবে। সনিয়াকে লিখিত ভাবে বৈঠকের যে চিঠি মমতা পাঠিয়েছেন, সেখানেও আলাদা করে নিজের হাতে এই কথাগুলি লিখে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
খড়্গে শনিবার সন্ধ্যায় মুম্বই থেকে দিল্লিতে ফিরে মমতার চিঠির কথা জানতে পারেন। কংগ্রেস যেখানে নেতৃত্ব দিতে চাইছিল, সেখানে মমতা আগেই নেমে পড়ায়, কংগ্রেসের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। মমতা যে ২২ জনকে চিঠি লিখেছেন বলে তৃণমূল তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের নাম প্রথমে, সনিয়ার নাম নবম স্থানে। তা দেখেও কংগ্রেস নেতৃত্ব স্তম্ভিত হয়ে যান। দলের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘সনিয়া গান্ধী পওয়ার, মমতা ও অন্যদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁর অসুস্থতার জন্য খড়্গেকে বাকিদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কংগ্রেসের মত হল, দেশের এমন এক রাষ্ট্রপতি দরকার, যিনি সংবিধান, প্রতিষ্ঠান, নাগরিকদের শাসক দলের নিশানা থেকে রক্ষা করতে পারবেন। কংগ্রেস কারও নাম প্রস্তাব করেনি। দেশের মানুষই কাউকে নির্বাচিত করবেন।’’ আঞ্চলিক দলগুলিতে বার্তা দিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘এখন দেশের স্বার্থে মতভেদের ঊর্ধ্বে উঠে দাঁড়ানোর সময়। খোলা মনে আলোচনা করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, কংগ্রেস অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’ মমতার ডাকা বৈঠকে তারা যাবে কি না, কংগ্রেস তা স্পষ্ট করেনি। তবে বুঝিয়ে দিয়েছে, কংগ্রেস নিজেদের হাতেই রাশ রাখতে চাইছে।
মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে কেরলের পিনারাই বিজয়ন মমতাকে ফোনে জানিয়েছেন, তিনি তাঁর দল সিপিএমের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করবেন। বিজয়নকে ফোন করেছিলেন মমতা। পরে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকেও অনেক বার ফোনে ধরার চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। সফল হননি। কিন্তু প্রস্তাবিত ওই বৈঠকের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানিয়ে ইয়েচুরি প্রকাশ্যেই বলেন, ‘‘আমি শুনেছি, আমাকেও নাকি একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এই ধরনের বৈঠক আয়োজন করার আগে সাধারণত পরস্পরের মধ্যে কথাবার্তা বলে নেওয়া হয়। কিন্তু মমতা নিজেই সব কিছু ঠিক করে একতরফা একটি চিঠি পাঠিয়ে দিলেন। এটা তিনি করতে গেলেন কেন?’’ তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, কথাবার্তা বলেই মমতা এই পদক্ষেপ করেছেন। কিন্তু ইয়েচুরির মতে, ‘‘এই ধরনের কাজ বিরোধী ঐক্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।’’ যদিও সিপিএম ওই বৈঠকে যোগ দেবে কি না, সেটা ইয়েচুরির বক্তব্যে খোলসা হয়নি।
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন যখন দোরগোড়ায় তখন পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে এক জনকে এগিয়ে আসতেই হয়। মমতা সেই কাজটিই করতে চেয়েছেন। চিঠিতেও তিনি লিখেছেন, ‘বিভেদকামী শক্তিকে প্রতিহত করতে সব প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।’ এখানে কেউ বড়, কেউ ছোট নন। তাই ‘ইগো’ ভুলে সবাই এগিয়ে আসবেন, এটাই প্রত্যাশিত বলে ওই নেতার মত।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy