অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
২০১৯ সালে রাজ্যে লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে ‘ক্রনোলজি’র কথা বলেছিলেন অমিত শাহ। জানিয়ে যান, প্রথমে সিএবি (তখনও নাগরিকত্ব আইন পাশ হয়নি সংসদে, তা ছিল বিলের আকারে। তাই সিএবি) হবে, তার পরে এনআরসি হবে। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগেও তিনি সিএএ চালু করার কথা বলেন। বুধবার কলকাতার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের জনসভাতেও এর অন্যথা হল না। এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ-র বিরোধিতা করছেন। সিএএ কার্যকর করতে দিচ্ছেন না। মমতাদিদি, সিএএ দেশের আইন। কেউ এটাকে রুখতে পারবে না। সিএএ আমরা চালু করবই।’’ একই সঙ্গে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ নিয়েও বঙ্গের সরকারকে আক্রমণ করেন তিনি।
পরে এর জবাবে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ভুল চিরকুট নিয়ে ভুলভাল বক্তৃতা করেছেন! অনুপ্রবেশ হলে তা সীমান্ত দিয়ে হয়। সীমান্ত সামলায় অমিত শাহের বিএসএফ। তা হলে তো ওঁর আগে নাকখত দেওয়া উচিত!’’ প্রায় এক সুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও বলেছেন, ‘‘অনুপ্রবেশ হয়ে থাকলে তো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যর্থ! তাঁরই তো দায়িত্ব অনুপ্রবেশ আটকানো।’’ একই সঙ্গে মমতাকে সেলিমের খোঁচা, ‘‘মমতাও অতীতে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগই করতেন। কারণ, তখন তিনি বিজেপির জোটে ছিলেন।’’ অন্য দিকে, সিএএ কবে থেকে কার্যকর করা হবে, তা নিয়ে অমিত শাহ স্পষ্ট দিনক্ষণ না দেওয়ায় মতুয়াদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আগে ঝাঁক বেঁধে ডাঙ্কা-কাঁশি বাজিয়ে বনগাঁ, গাইঘাটা, হাবড়া এলাকার লোকজন বিজেপির সভায় আসতেন। সেই উৎসাহেও এ দিন দৃশ্যত ভাটা দেখা গিয়েছে।
লোকসভা ভোটের আগে এ দিন শাহ কার্যত বুঝিয়ে দিলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকেও তাঁরা প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার করবেন। সেই সঙ্গে অনুপ্রবেশ নিয়েও রাজ্য সরকারকে বিঁধতে ছাড়বেন না। সভা থেকে এ দিন শাহের তোপ, “অনুপ্রবেশের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদ চলতে দিতেন না। সেই মমতা বন্দোপাধ্যায় এখন খোলাখুলি অনুপ্রবেশকারীদের আধার কার্ড দিচ্ছেন।” বিজেপি শাসিত রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করে তাঁর দাবি, “অসমে বিজেপি সরকার হওয়ার পরে সেখানে অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়েছে। আর এখানে ভুয়ো আধার কার্ড তৈরি করা হয়। যেখানে ৩০ লক্ষ ভুয়ো অনুপ্রবেশ ঘটে সেখানে ‘বিকাশ’ সম্ভব?’’ এর পরেই সিএএ-র হয়ে সওয়াল করে বলেন, ‘‘আমি এই সভা থেকে বলে যাচ্ছি, সিএএ কেউ রুখতে পারবে না। বাইরে থেকে যে সব হিন্দু ভাইবোন এসেছেন, তাঁদের এই দেশের উপর অধিকার রয়েছে।”
সিএএ চালু না হলে যে ক্ষোভ বাড়বে মতুয়াদের, তা বিলক্ষণ জানেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর শাহের সভার পরে বলেন, ‘‘স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলে গেলেন, সিএএ কার্যকর করা হবেই, তখন তা হবেই। উনি নির্দিষ্ট দিনক্ষণ উল্লেখ না করলেও আমরা আশাবাদী, লোকসভা ভোটের আগেই তা কার্যকর হবে।’’ দিন কয়েক আগে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র (টেনি) ঠাকুরবাড়িতে এসে বলে গিয়েছেন, আগামী বছর ৩০ মার্চের মধ্যে সিএএ-র নিয়মকানুন তৈরি হয়ে যাবে। সে কথাও মনে করিয়ে দেন শান্তনু।
যদিও অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের (যার সঙ্ঘাধিপতি তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মমতা ঠাকুর) সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘উনি (শাহ) বলছেন সিএএ কার্যকর করবেন। এ দিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলছেন, শান্তনু ঠাকুরের দেওয়া কার্ডেই (মতুয়াদের সাংগঠনিক পরিচয়পত্র) মতুয়াদের যাবতীয় সমস্যা মিটে যাবে। এ সব পরস্পর বিরোধী কথা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আসলে কেন্দ্র সিএএ কার্যকর করতে পারবে না। পারলে এত দিনে হয়ে যেত।’’ তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসও বলেন, ‘‘নতুন করে ভাঁওতা দিচ্ছেন অমিত শাহেরা। লোকসভা ভোটের আগে সিএএ কার্যকর করতে পারবেন না, এটা নিশ্চিত বুঝে শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে চলেছেন।’’
বনগাঁ ব্লকের ধর্মপুকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা, মতুয়া দলপতি বলাই বাড়ুই অবশ্য বলছেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে ভাল লাগছে। তবে আর আশ্বাস নয়, আমরা চাই দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’’ মতুয়া ভক্ত মিহিরকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার বয়স ৫৫ বছর। এ দেশেই আমার জন্ম। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সবই আছে। নিয়মিত ভোট দিই। নাগরিকত্ব দিলে নেব। কিন্তু আমার প্রশ্ন, আমি কি নাগরিক নই?’’
মিহির-বলাইদের ক্ষোভ আর মতুয়াদের এই উৎসাহহীনতা বিজেপির জন্য সিঁদুরে মেঘ হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy