সভাস্থল ঘুরে দেখছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
সকালের রোদ তখনও সে ভাবে চড়া হয়নি। তার মধ্যেই ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ভিড়টা জমাট বাঁধতে শুরু করে দিয়েছে। সেই ভিড়ের তিনটে ভাগ। একটা দলের সদস্যরা খুঁটি পোঁতা, প্লাইউডে পেরেক মারার কাজ করছেন। দ্বিতীয় দল হাত নেড়ে নানা রকম নির্দেশ দিচ্ছে আর তৃতীয় দলটা মন দিয়ে সেই নির্দেশ শুনছে।
প্রথম দলটি ডেকরেটর সংস্থার কর্মীদের। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সভার জন্য মঞ্চ বাঁধার ভার তাঁদের উপরেই। দ্বিতীয় দলের সদস্যরা পুরসভা-পুলিশ দমকলের পদস্থ কর্তা। ছিলেন দমকলের ডিজি সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ও কলকাতা পুরসভার যুগ্ম কমিশনার (উন্নয়ন) সৃষ্টিধর সাঁতরা। আদালতের নির্দেশে মঞ্চ বাঁধার কাজ দেখভাল করতে এ দিন সাতসকালেই ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁরা। আর তৃতীয় দলে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা বিজেপির নানা স্তরের নেতা-কর্মী। দ্বিতীয় দলের সদস্যদের কথা শুনে মঞ্চ বাঁধার কাজ তদারকি করছেন তাঁরা।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে রবিবার সভা করার অনুমতি মিলেছে। তার পরেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। শুক্রবার রাত থেকে প্রাথমিক কাজটা শুরু করে দিয়েছিলেন তাঁরা। শনিবার সকাল থেকে চূড়ান্ত ব্যস্ততায় কখনও রাস্তার মাপ নিয়েছেন, কখনও ডেকরেটরের লোকেদের নির্দেশ দিয়েছেন। এক বার তো রাস্তা মাপতে আসরে নেমে পড়লেন রাজ্য বিজেপি নেতা তথা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তথাগত রায় নিজেই। তারই মধ্যে সভাস্থলের প্রস্তুতি দেখতে আসেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। কিছু পরে আসেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। মঞ্চ তৈরির কাজ খুঁটিয়ে দেখেন তাঁরা। দিনভর অনেক বিজেপি নেতাই আসেন সভাস্থলে। গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে সভামঞ্চ গড়ার কাজ শেষ করেন সকলে মিলে।
এ ছবির সঙ্গে তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতির মিল রয়েছে বিস্তর। সে সভার আগের দিনও ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে মঞ্চ তৈরির কাজ দেখভাল করেন মুকুল রায়, সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা। তদারক করতে আসেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
তবে ফারাকও রয়েছে বিস্তর। তৃণমূলের সভার প্রস্তুতি শুরু হয় অন্তত এক সপ্তাহ আগে। সে সভার জন্য তাদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় না! তৃণমূলেরই অনেকে একান্তে মেনে নিচ্ছেন, যে ভাবে মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিসে বিজেপি সভার প্রস্তুতি নিয়েছে, তা অবাক করার মতোই।
হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে এ দিন তথাগতবাবু এবং বিজেপির অফিস সেক্রেটারি অলোক গুহরায় দমকলের ডিজি-র কাছে জানতে চান, কী কী নিয়ম মানতে হবে তাঁদের। ডিজি জানান, মঞ্চের দু’দিকে কমপক্ষে ১০ ফুট জায়গা ছাড়তে হবে। বেলা ১১টা নাগাদ বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে মাপজোক শুরু করেন তথাগতবাবুরা। সৃষ্টিধরবাবু বিজেপি নেতাদের কাছে জানতে চান, কত লোক আসতে পারে? বিজেপি নেতাদের দাবি, রবিবার লক্ষাধিক লোকের ভিড় হবে ধর্মতলায়।
ধর্মতলায় একাধিক নেতা যখন মঞ্চ তৈরির কাজে ব্যস্ত, তখন দলের কর্মী-সমর্থকদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন বেশ কয়েক জন রাজ্য বিজেপি নেতা। দলীয় সূত্রের খবর, অমিত শাহের সভায় যোগ দিতে বিজেপির হাজার পাঁচেক কর্মী-সমর্থক শনিবারেই চলে এসেছেন শহরে। তাঁদের সিংহভাগ উত্তরবঙ্গের। বড় অংশই কোচবিহারের। ওই জেলায় বিজেপির সংগঠন তুলনায় শক্ত হওয়ায় তাদের ভিড় অন্য জেলার চেয়ে কিছুটা বেশি। বিজেপি নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, আজ, রবিবার সকালের মধ্যে আরও ১০ হাজার কর্মী-সমর্থক আসবেন রেলপথে। তাঁদের জন্য কলকাতা, শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে অস্থায়ী বিশ্রামঘর বানানো হয়েছে।
এ ছাড়াও দূরান্তের দলীয় কর্মী-সমর্থকদের রাত্রিবাসের জন্য মাহেশ্বরী সদন, গিরিশ পার্কের হরিয়ানা ভবন ও বড়বাজারের একাধিক ধর্মশালা নিয়েছে বিজেপি। বড়বাজারের অতিথিশালায় মহিলাদেরই অগ্রাধিকার। এর বাইরে বিজেপির রাজ্য সদর দফতরের সামনেও ম্যারাপ বেঁধে কর্মীদের রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, আজ, সভার দিন কমবেশি পাঁচ হাজার গাড়ি কলকাতা শহরে ঢুকবে। দুই মেদিনীপুর, বর্ধমান, পুরুলিয়া ও হাওড়ায় তাঁদের তেমন সংগঠন না থাকলেও প্রাথমিক ভাবে সদর দফতরে খবর এসেছে, ওই সব জেলা থেকেও বহু গাড়ি আসছে কলকাতায়। এক বিজেপি নেতা বলেন, আগের বারের সমাবেশেও রাজ্য কমিটির তরফে গাড়িভাড়ার খরচ দেওয়া হয়েছিল। এ বার জেলা নেতৃত্বই সেই খরচ মেটাবেন।
শনিবার রাতের খবর, আজ বেলা ১টা নাগাদ সভা শুরু হওয়ার পরে প্রথম বক্তৃতা দেবেন দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তার পরে একে একে আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, বসিরহাটের বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য, রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ও সবশেষে অমিত শাহ। রবিবার কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে অমিত সরাসরি পৌঁছবেন সভাস্থলে। সেখান থেকেই দিল্লি ফিরবেন তিনি। বিজেপি সূত্রের খবর, অমিতের বক্তৃতায় সারদা কেলেঙ্কারি, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ, অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গ গুরুত্ব পাবে। থাকবে তৃণমূলের নানা কাজের সমালোচনাও।
সদর দফতরেও ছিল এ দিন সাজো সাজো রব। মঞ্চ সাজানোর পতাকা থেকে শুরু করে ব্যানার, ফেস্টুন ডাঁই করে রাখা সেখানে। রাস্তায় কোথায় কী ভাবে দলের পতাকা লাগাতে হবে, কারা লাগাবেন সেগুলো, ফেস্টুন-ব্যানারই বা লাগবে কোথায়, সে সব নিয়ে কর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছিলেন এক নেতা। বাইরের এই প্রস্তুতির মধ্যেই ভিতরে বসে আলোচনায় ব্যস্ত ব্যারি ও’ব্রায়েন, নিমু ভৌমিক ও জয়প্রকাশ মজুমদাররা। বিজেপির অন্দরের খবর, অমিত শাহ ছাড়া আর কারা সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন, তার তালিকা তৈরি হবে রাতে। রাজ্যনেতারাই তা চূড়ান্ত করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy