বিমল গুরুঙ্গদের ‘ভাষা আন্দোলনে’ একেবারে গোড়াতেই জল ঢেলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জানিয়ে দিলেন, পাহাড়ে বাংলা আবশ্যিক ভাষা নয়, ঐচ্ছিক। বুঝিয়ে দিলেন, পরীক্ষা না দিলেও বাংলা পড়তে হবে পাহাড়ের মানুষকে।
বস্তুত, এ দিন ভাষা নিয়ে বৃহত্তর প্রেক্ষিতেও বার্তা দিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি একটি মহল থেকে সর্বভারতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দিকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাহাড়ের ছোট্ট বসতি মিরিকে দাঁড়িয়ে মমতা কিন্তু বোঝালেন, এই এক ভাষার তত্ত্বের বিরোধী তিনি। সেই সূত্রে সারা দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভাষার কথা উল্লেখ করলেন এ দিনের বক্তৃতায়।
একই ভাবে যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করলেন দার্জিলিং পাহাড়ে নেপালি ভাষার একাধিপত্যকেও। বিমল গুরুঙ্গরা পুরভোটের সময় থেকেই নেপালি ভাবাবেগকে চাগিয়ে তুলতে চাইছেন বারবার। কিন্তু পাল্টা হাওয়ায় মিরিক দখল করেছে তৃণমূল। বাকি তিন পুরসভাতেও মোর্চার ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে বিরোধীরা। এই অবস্থায় জিটিএ ভোটের আগে নিজেদের প্রাসঙ্গিক করতে নেপালি ভাষার আবেগকে হাতিয়ার করতে চাইছিলেন গুরুঙ্গ। অভিযোগ করেন, পাহাড়ের মানুষের উপরে বাংলা ভাষা চাপিয়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: তোর্সা প্রস্তাবে সমীক্ষা কেন্দ্রের
এ দিন মমতা সাফ বললেন, ‘‘কখনও বলিনি পাহাড়ে বাংলা আবশ্যিক। তা একেবারেই ঐচ্ছিক।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘চতুর্থ ভাষা হিসেবে দশম শ্রেণি অবধি বাংলা শিখলে পাহাড়ের ছেলেমেয়েদেরই ভাল। ওরা কলকাতা, শিলিগুড়িতে চাকরি করতে গেলে সুবিধে পাবে।’’ পাশাপাশি, পাহাড়ে নেপালি ছাড়াও যে অনেক ভাষাভাষী লোক রয়েছেন, মমতা তারও উল্লেখ করলেন বারবার। মঞ্চেই ছিলেন লেপচা উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারপার্সন লেয়াংসন তামসাঙ্গ লেপচা। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, উনি লেপচা ভাষায় রবীন্দ্রনাথ অনুবাদ করেছেন। লেয়াংসনও বলেন, ‘‘হিন্দি, নেপালি, ইংরেজি এবং বাংলাও শিখেছি আমি। ছাত্রজীবনে যত বেশি ভাষা শেখা যায়, ততই লাভ। ভাষা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়।’’
পাহাড়ের বিভিন্ন জনজাতির জন্য আলাদা বোর্ড গড়েছেন মমতা। একই ভাবে পাহাড়ের বিভিন্ন ভাষাকেও তিনি এ দিন বক্তৃতায় গুরুত্ব দেন। লেয়াংসনের হাতে মাইক তুলে দেওয়াও সেই কৌশলের অন্যতম। যা দেখে অনেকেই বলছেন, এমনিতেই বাংলাকে ঐচ্ছিক ভাষা করায় গুরুঙ্গদের আন্দোলন জোর হারিয়েছে। এ বার অন্য পাহাড়ি ভাষাগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে মমতা মোর্চাকে আরও কোণঠাসা করার চেষ্টা করলেন। তবে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘যা বলার সঠিক সময়ে জানাব।’’
মোর্চার তরফে প্রশ্ন, সমতলের জন্য তিনটি ভাষা হলে পাহাড়িদের জন্য চারটে ভাষা কেন? এর উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমরাও তো ছোটবেলায় চারটে ভাষা শিখেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy