জিআই তকমার পরে মিলেছে এই লোগো।
জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) সূত্রে বাংলার জন্য আর এক সুখবর। রসগোল্লা তো বটেই, সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত গোবিন্দভোগ চালের জিআই তকমাও পেয়েছে রাজ্য। মঙ্গলবার সম্মান পেয়েছে রসগোল্লা। তার আগে, সোমবার কেন্দ্র সরকারের ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অফ ইন্ডিয়ার’ কাছ থেকে ‘বাংলার গোবিন্দভোগ’ চালের জিআই শংসাপত্রটি পেয়েছে রাজ্য কৃষি দফতর।
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বলেন, ‘‘রাঢ়বঙ্গে খাস চাল বলে পরিচিত গোবিন্দভোগ। জিআই রেজিস্ট্রি করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দফতরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। গোবিন্দভোগ সেই মান্যতা পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী ওই চাল রফতানি করতে সুবিধা হবে।”
২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর ‘বাংলার গোবিন্দভোগ’ চালের জন্য জিআই তকমা চেয়ে আবেদন করেছিল রাজ্য কৃষি দফতর। আবেদনে বলা হয়েছিল, গোবিন্দভোগ চাল—বাংলার ঐতিহ্য। রাঢ়বঙ্গ ও গাঙ্গেয় উপত্যকায় তিন শতাব্দী আগে গোবিন্দভোগ চালের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়। কলকাতা শহর তৈরির সময় হুগলির বসাক ও শেঠ পরিবার গোবিন্দপুর গ্রামের জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে গোবিন্দ মন্দিরের খোঁজ পান। গঙ্গার ধারেই তাঁরা এই সুগন্ধী চালের চাষ শুরু করেন। গোবিন্দের উদ্দেশে ওই চালের ভোগ দেওয়া হতো বলে তার নাম হয় ‘গোবিন্দ ভোগ’।
ভাতারে গোবিন্দভোগের জমি। নিজস্ব চিত্র
বর্ধমান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া ও দুই চব্বিশ পরগনার কয়েক হাজার চাষি গোবিন্দভোগ চাষ করেন। সংগঠিত ও অসংগঠিত ভাবে বছরে কয়েকশো কোটি টাকার গোবিন্দভোগ চাল বিক্রি হয়। গোবিন্দভোগ ধান ভাঙিয়ে চাল করার জন্য বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর এলাকাতেই অন্তত গোটা তিরিশ চালকল গড়ে উঠেছে। দক্ষিণ ভারত তো বটেই গোবিন্দভোগ চাল রফতানি হচ্ছে শ্রীলঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে ব্রাজিলেও। জার্মানি, কানাডা এবং লন্ডন থেকেও বরাত আসছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, “জিআই তকমা পাওয়ার ফলে দেশে-বিদেশের বাজার ধরার সুযোগ আমাদের সামনে চলে এল। বিদেশে বাজার ধরার জন্য আমরা রফতানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করে দিয়েছি।” কাল, শুক্রবার বর্ধমানে আন্তর্জাতিক স্তরে চালকলের যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিয়ে মেলা শুরু হচ্ছে। সেখানেও দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোবিন্দভোগ চাল কী ভাবে রফতানি করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে বলে প্রদীপবাবু জানিয়েছেন। রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত জানান, মূলত জৈব সারে চাষ হওয়ায় বিদেশের বাজারে গোবিন্দভোগ চালের আলাদা গুরুত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে বাজার ধরার জন্য বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণে গোবিন্দভোগের চাষ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
‘বর্ধমান গোবিন্দভোগ মিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর দাবি, অসংগঠিত ভাবে বছরে ২৫ হাজার টন চাল বিদেশে যায়, যার রফতানি মূল্য প্রায় ১২০ কোটি টাকা। সংগঠনের সভাপতি শ্যামল রায় বলেন, “জিআই তকমা পাওয়ার ফলে বিদেশের বাজারে চালের গুণমান নিয়ে সংশয় থাকবে না। সরকারি সাহায্যে সংগঠিত ভাবে ব্যবসার সুযোগ আমাদের সামনে চলে এল।” বাংলার পায়েস-পিঠে-পোলাওয়ের ‘গোবিন্দভোগ’ এ বার বিদেশের বাজারেও সুগন্ধ ছড়াবে বলে আশা শ্যামলবাবুদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy