Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ভিক্ষার পেশা ছেড়ে স্বনির্ভরতার পথে বাঁদরেরা

‘ভিক্ষার’ পেশা ছেড়ে ‘স্বাভাবিক জীবনে’ ফিরেছে বৈকুণ্ঠপুরের আট মাইল এলাকার বাঁদরেরা! সৌজন্যে বেঙ্গল সাফারি পার্ক। বছরখানেক আগেও শিলিগুড়ি থেকে শালুগাড়া পেরিয়ে আট মাইলের কাছে এলে রাস্তার দু’ধারে বাঁদরের পাল দেখা যেত। প্রায় ভিখারির ভঙ্গিতে গাড়ি থেকে ছুড়ে দেওয়া চিপস, চানাচুর, বাদাম, ভুট্টা বা কলার আশায় বসে থাকতে দেখা যেত তাদের।

বেঙ্গল সাফারি পার্কের নতুন ঠিকানায়।—নিজস্ব চিত্র

বেঙ্গল সাফারি পার্কের নতুন ঠিকানায়।—নিজস্ব চিত্র

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৩
Share: Save:

‘ভিক্ষার’ পেশা ছেড়ে ‘স্বাভাবিক জীবনে’ ফিরেছে বৈকুণ্ঠপুরের আট মাইল এলাকার বাঁদরেরা! সৌজন্যে বেঙ্গল সাফারি পার্ক।

বছরখানেক আগেও শিলিগুড়ি থেকে শালুগাড়া পেরিয়ে আট মাইলের কাছে এলে রাস্তার দু’ধারে বাঁদরের পাল দেখা যেত। প্রায় ভিখারির ভঙ্গিতে গাড়ি থেকে ছুড়ে দেওয়া চিপস, চানাচুর, বাদাম, ভুট্টা বা কলার আশায় বসে থাকতে দেখা যেত তাদের। মজা নেওয়ার জন্য অনেকে গাড়ি থেকে খাবারও ছুড়তেন। কখনও সেই খাবার রাস্তা থেকে কুড়োতে গিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে আসা গাড়ির ধাক্কায় জখম হতো তারা। কখনও ট্রাকের তলায় পড়ে মারাও যেত।

বছরখানেক আগে বেঙ্গল সাফারি পার্কের উদ্বোধন হয়। তার পর থেকেই ছবিটা বদলে গিয়েছে। এখানে প্রকৃতির অফুরন্ত ভাণ্ডার। তাই গত এক বছর ধরে দলে দলে বাঁদর এসে এই পার্কে ভিড় জমিয়েছে। এখন এখানে বাঁদরের সংখ্যা অন্তত দু’শো। খাদ্যের তো অভাব নেই এখানে। উল্টে অনেক সময়ে বাঁদরামো করে হরিণ বা পাখিদের জন্য ছড়ানো খাবারেও ভাগ বসাচ্ছে তারা। কখনও আবার হরিণের জন্য রাখা জল বোঝাই নিচু চৌবাচ্চায় চলেছে হুটোপাটি করে স্নান!

বেঙ্গল সাফারি পার্কে তাই তোফা রয়েছে বাঁদরের দল।

এই ঘটনায় আবার আর এক দিক থেকে চিন্তা বেড়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষের। সম্প্রতি বাঁদর-সুমারির পরে বনকর্তারা এখন কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন। কারণ, কোনও পার্কে বাঁদর বেশি বাড়লে দর্শনার্থীদের উপরে চড়াও হওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। ছোঁ মেরে খাবারের প্যাকেট কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। পুরীতে নন্দনকানন বা কলকাতার চিড়িয়াখানায় বাঁদর-হনুমানের পাল যাতে সংখ্যায় বেশি না বাড়তে পারে, সে দিকে বিশেষ ভাবে নজর রাখা হয়। বেঙ্গল সাফারির ডিরেক্টর অরুণ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পার্ক এটা। সেই হিসেবে কিছু বাঁদর তো থাকবেই। কিন্তু, জায়গার আয়তনের তুলনায় বাঁদরের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমরা সংখ্যার দিকেও নজর রাখছি।’’ তিনি জানান, বাঁদর বেড়েছে বলে হরিণের জন্য বরাদ্দ খাবারের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘বাঁদর শুধু নয়। পাখিও বেড়েছে বেঙ্গল সাফারি পার্কে।’’

বাঁদরদের কেড়ে খাওয়ার অভ্যাস যে মজ্জাগত, তার প্রমাণ এখনও সেবকে গেলে পাওয়া যায়। এখানকার বাঁদরের পাল এখনও জঙ্গলমুখো হয়নি। সকাল থেকে সন্ধ্যা তারা খাবারের আশায় ঠায় বসে থাকে পথের ধারে। কখনও আবার পর্যটকদের কাছ থেকে খাবার ছিনিয়ে নিতে ঝাঁপিয়েও পড়ে। ক’দিন আগে এমনই খাবার টানাটানির সময়ে খাদে পড়ে এক মহিলার মৃত্যুও হয়েছে। আবার ইট-ঢিল-গুলতির আঘাতে মারা গিয়েছে কয়েকটি বাঁদরও।

সে দিক থেকে বেঙ্গল সাফারি অন্তত আট মাইল এলাকাকে কিছুটা হলেও বাঁদর-মুক্ত করতে পেরেছে। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘আট মাইল থেকে সেবকের মধ্যে রাস্তা থেকে খাবার কুড়োতে গিয়ে কম বাঁদর তো মরেনি। বাঁদরের উপদ্রবে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তবে ইদানীং বেঙ্গল সাফারিটা হওয়ায় সেখানে ঝুঁকিবিহীন খাবার, থাকার জায়গা মিলছে বলেই আট মাইলের বাঁদরেরা ঢুকছে।’’

অনিমেষবাবু এখন সেবকের বাঁদরদের জন্য বেশি ভাবিত। বলেন, ‘‘এ বার ওদের ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের চেষ্টা করতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bengal Safari park Monkeys
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE