Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বরুণের মৃত্যুদিন ভুলেছে সুটিয়া

বৃহস্পতিবার, বরুণের মৃত্যুদিনে সুটিয়ায় গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির সামনে তাঁর মূর্তিতে নমো নমো করে মালা দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হাজির মেরেকেটে কয়েক জন। এলাকার অনেককে জিজ্ঞেস করে বোঝা গেল, দিনটার কথা আর তাঁদের মনেই নেই। তবে মনে করিয়ে দেওয়ার পরে কুণ্ঠিত সকলেই।

ফাঁকা: সুটিয়ায় বরুণ বিশ্বাসের মূর্তির সামনে ভিড় হল না তেমন। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

ফাঁকা: সুটিয়ায় বরুণ বিশ্বাসের মূর্তির সামনে ভিড় হল না তেমন। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪৭
Share: Save:

বৃষ্টিভেজা বিকেলে প্রতিবাদী তরুণের দেহ পৌঁছেছিল এলাকায়। বিশাল মাঠে তখন কাতারে কাতারে লোক। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন। চোখের জলে ভাসছেন কত জন! তাঁদের মুখে একটাই কথা, ‘‘প্রতিবাদীর মৃত্যুতে প্রতিবাদ শেষ হয় না।’’ প্রতিবাদী তরুণটির নাম বরুণ বিশ্বাস।

২০১২ সালের ৫ জুলাই উত্তর ২৪ পরগনার সুটিয়ার যুবক বরুণকে গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে গুলি করে মারে দুষ্কৃতীরা। গাইঘাটায় একের পর এক গণধর্ষণের ঘটনায় এলাকায় প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ওই সব ঘটনায় কয়েক জন দুষ্কৃতী ধরা পড়ে। সাজাও হয়। কয়েকটি মামলায় মূল সাক্ষী ছিলেন বরুণ। সে কারণেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে সরিয়ে দিল, এই অভিযোগে উত্তাল হয় সুটিয়া। মিত্র ইন্সটিটিউশনের (মেন) বাংলার শিক্ষক বছর চল্লিশের বরুণ রাজ্যে হয়ে ওঠেন প্রতিবাদের মুখ।

পরবর্তী দু’বছর বরুণের মৃত্যুদিনে বিশাল স্মরণসভা হয়েছে সুটিয়ায়। বরুণকে নিয়ে তৈরি ফিল্ম দেখাতে কলকাতায় বাস-ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুটিয়ার অনেককে।

বৃহস্পতিবার, বরুণের মৃত্যুদিনে সুটিয়ায় গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির সামনে তাঁর মূর্তিতে নমো নমো করে মালা দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হাজির মেরেকেটে কয়েক জন। এলাকার অনেককে জিজ্ঞেস করে বোঝা গেল, দিনটার কথা আর তাঁদের মনেই নেই। তবে মনে করিয়ে দেওয়ার পরে কুণ্ঠিত সকলেই।

বরুণের দিদি প্রমীলা রায় অবশ্য বলেন, ‘‘সুটিয়ার মানুষ এখনও ভাইকে ভালবাসেন। কিন্তু শাসক দলের ভয়ে এবং কম দামে সরকারি চাল-আটা পেয়ে চুপ করে গিয়েছেন।’’

গণধর্ষণ কাণ্ডের পরে যে প্রতিবাদী মঞ্চ তৈরি হয়েছিল সুটিয়ায়, তার নেতা ননীগোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘বিষয়টি বিচারাধীন। তবে এ নিয়ে নতুন করে আন্দোলনের জায়গা বিশেষ নেই। এলাকার মানুষ তেমন ভাবে সামিল হতে চাইছেন না।’’ গত কয়েক বছরে প্রতিবাদী মঞ্চের সঙ্গেও দূরত্ব বেড়েছে বরুণের পরিবারের।

বরুণ-খুনে ১০ জনের নামে বনগাঁ আদালতে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। তবে বরুণের পরিবার তদন্তে অসন্তুষ্ট। সিবিআই তদন্তের দাবি করেছে তারা। বরুণ-হত্যায় খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে ‘ইন্ধন’ দেওয়ার অভিযোগ এনেছিল পরিবার। মন্ত্রী পাল্টা মানহানির মামলা করেছেন। ওই অভিযোগ প্রসঙ্গে এ দিন নতুন করে মন্তব্য করতে চাননি তিনি। শুধু বলেন, ‘‘বরুণ ভাল ছেলে ছিল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE