গণনাকেন্দ্রের বাইরে কড়া পাহারা। —নিজস্ব চিত্র।
মিডিয়া সেন্টারের বড় টিভির পর্দায় টানা ভেসে উঠছে রাজ্যে লোকসভা ভোটের হাল হকিকত। ব্রেকিং নিউজবর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রে এগিয়ে বাম প্রার্থী সাইদুল হক।
কিন্তু পাশে ফলাফলের স্কোরবোর্ড যে ফাঁকা! তাহলে কী সত্যিই সাইদুল শেখ এগিয়ে? কোন বিধানসভায় কত ভোট পড়ল? জমছে একের পর এক প্রশ্ন। প্রশাসনিক কর্তা থেকে রিটার্নিং অফিসার মোবাইল ফোন বেজে চলেছে তো চলেছেই। কেউ কোনও উত্তর দিতে চাইছেন না।
১৬ মে, ভোট গণনার দিনে বর্ধমানের ইউনির্ভাসিটি ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি বা ইউআইটির একতলায় মিডিয়া সেন্টারে বসে দুশ্চিন্তায় ঘামছি আমরা। লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল জানতে পারব তো সময়ে? তার মধ্যেই অফিস থেকে ফল জানতে চেয়ে ফোনের পর ফোন। গতকালই অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রণব বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, প্রতি রাউন্ডের গণনা শেষ হলেই মিডিয়া সেন্টারে কাগজ পৌঁছে যাবে। কিন্তু কোথায় কী? তার মধ্যেই টিভিতে ঘোষণা, বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে এগিয়ে তৃণমূলের মমতাজ সঙ্ঘমিতা। তাহলে কী টিভি দেখেই সব জানতে হবে? দুশ্চিন্তায় সাংবাদিকেরা মিডিয়া সেন্টার ভেঙে ফেলেন আর কী! দেখা হল জেলা তথ্য আধিকারিক মুনমুন হোরসিংহের সঙ্গে। সাংবাদিকদের বিক্ষোভে পড়ে তিনি ছুটলেন ইউআইটির ছ’তলায় রিটার্নিং অফিসারের ঘরে। গেলেন, তো গেলেনই। বাধ্য হয়ে রিটার্নি অফিসারের ঘরে যেতে হল সাংবাদিকদের।
এ কী! ইভিএম গুটিয়ে গণনাকারীরা ঘর মুখো। কোথাও ১০ রাউন্ড, কোথাও ১২ রাউন্ড গণনা ১১টার মধ্যেই শেষ। এ দিকে একটা বিধানসভার ফলও হাতে নেই। গলসি বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলও গোনা হচ্ছে ইউআইটিতে। সেটার ফলও জানা যাচ্ছে না। দেখা হতে জেলাশাসক তথা রিটার্নি অফিসার সৌমিত্র মোহন বলেন, “কমপাইলেশনের গোলমালের জন্য এখনও ফলাফল ঘোষণা করতে পারছি না!” শেষে তিনি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ধরে কিছু ফল জানালেন।
জেলাশাসকের চাপে কমপাইলেশন শুরু হল। মিডিয়া সেন্টারে একে একে পৌঁছোতে শুরু করল রাউন্ড ভিত্তিক ফলাফল। ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে লাগলেন গতবারের সাংসদ সাইদুল হক।
দ্বিতীয় রাউন্ডের পরে মমতাজ সঙ্ঘমিতা পেলেন ৯৮,৭০৪ ভোট। সাইদুল ৭৬,২৮৫। ব্যবধান ২২, ৪১৯। তৃতীয় রাউন্ডের শেষে সঙ্ঘমিতা ১৩৮৮৪৫। সাইদুল ১১৮৫১১। ব্যবধান কমে২০৩৩৪। সিপিএমের কর্মী সমর্থকেরা তখনও আশায়। মনে হচ্ছে, সাইদুল এগিয়ে যাবেন। ততক্ষণে বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী ৫৮৪৭৮ ভোট পেয়ে গিয়েছেন। সিপিএমের এক নেতা বললেন, “মনে হচ্ছে মোদি লহর উঠবে। তারই ঢেউয়ে সাইদুলভাই সোজা দিল্লি পৌঁছে যাবেন।”
ষষ্ঠ রাউন্ডের শেষে অবশ্য সাইদুল ৬০,৫১২ ভোটে পিছনে। পোড়খাওয়া রাজনীতিক বুঝে গিয়েছেন, যা বোঝার। কোনও দিকে না তাকিয়ে নীরবে গণনাকেন্দ্র ছেড়ে চলে গেলেন তিনি। কানে মোবাইল গোঁজা।
দশম রাউন্ডে ব্যবাধান বেড়ে ৭০ হাজারের উপর। তখন সব বিধানসভা কেন্দ্রেই সিপিএম হারছে। ব্যতিক্রম গলসি আর দুর্গাপুর পূর্ব। সেখানে তখনও পিছিয়ে তৃণমূল। মমতাজ গলসিতে ৭০৯৯৪ ভোট পেয়েছেন, সাইদুল পেয়েছেন ৭২৭৩৩। দুর্গাপুর পূর্বে মমতাজ ২০১৯৮, সাইদুল ২০৪৪৮। সিপিএম কর্মীরা ভাবছিলেন, দুটি বিধানসভায় জিতলেও কিছুটা মুখরক্ষা হয় পারকার্স রোডের। তবে সে সান্তনাও রইল না। ১২ রাউন্ডের শেষে গলসিতে সামান্য বাবধানে সাইদুল এগিয়ে থাকলেও, দুর্গাপুর পূর্বে এগিয়ে গেলেন মমতাজ। ১৩ রাউন্ডে গলসিতেও এক ছবি। চূড়ান্ত রাউন্ডে গিয়ে ব্যবধান দাঁড়াল ১ লক্ষ ৫ হাজার ৩৬৫ ভোটের।
জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের ঘরে হাসিহাসি মুখে জয়ের শংসাপত্র নিয়ে মমতাজ বললেন, “মানুষকে ধন্যবাদ। তাঁরা আসলে আমাকে জেতাননি। জিতিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ছেলেবেলার শহরের জন্য যতটা পারি উন্নয়নের চেষ্টা করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy