Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

শহর-সাজ থমকে যেতেই বিদ্যুৎ বিলে কোপ

বিধানসভা নির্বাচনের মুখে হকার ও ব্যবসায়ীদের ভোট হারানোর আশঙ্কায় শহরের সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনায় দাঁড়ি বসিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী তথা বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১১
Share: Save:

বিধানসভা নির্বাচনের মুখে হকার ও ব্যবসায়ীদের ভোট হারানোর আশঙ্কায় শহরের সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনায় দাঁড়ি বসিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী তথা বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। তবে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনায় আলটপকা ছেদ পছন্দ হয়নি অনেক পুরকর্তাদের। পাল্টা চাপ তৈরি করতে এ বার নানা কৌশল নিচ্ছেন তাঁরাও।

পুরসভা সূত্রের খবর, ২৯ জানুয়ারি বোর্ডের বৈঠকে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের কার্যকলাপ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন পুর সদস্যেরা। আলোচনায় উঠে আসে, বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে উচ্চ বাতিস্তম্ভ লাগাচ্ছে, কিন্তু অন্ধকারে রয়ে যাচ্ছে পুরসভা (কার্যবিবরণীর ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ)। আবার ওই উচ্চ বাতিস্তম্ভগুলির বিদ্যুতের বিল দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে পুরসভার। ফলে এ বার থেকে বর্ধমান উন্নয় পর্ষদের লাগানো বাতিস্তম্ভের বিদ্যুতের বিল আর পুরসভা বহন করবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ এ বার থেকে শহরে উচ্চ বাতিস্তম্ভ লাগালে তার বিল দেওয়ার দায়িত্ব ওই সংস্থাকেই নিতে হবে বলেই জানিয়ে দেওয়া হয়।

সম্প্রতি বর্ধমান শহরের ভিতরে জিটি রোডের বীরহাটা থেকে স্টেশন পর্যন্ত রাস্তা সৌন্দর্যায়নে উদ্যোগ করে পুরসভা। প্রকাশ্যে মাছ-মাংসের দোকান না বসানো, একই ধরনের দোকান খোলার নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়। হকার, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বারেবারে বৈঠক করে সব পক্ষকে একরকম রাজিও করা হয়। এমনকী, ২১ জানুয়ারি থেকে সৌন্দর্যায়নের দিনও নির্দিষ্ট করে ফেলা হয়। এর মধ্যেই আচমকা এই উদ্যোগে ভোট হারানোর আশঙ্কায় বিধায়ক তথা বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় পুরসভা ও জেলা প্রশাসনকে সৌন্দর্যায়নের কাজ থেকে সাময়িক ভাবে সরে আসার কথা বলেন। বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতির ‘নির্দেশ’ মেনে সৌন্দর্যায়নের কাজকে হিমঘরে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয় পুরসভাও। এর পরেই পুরবোর্ডের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হওয়ায় তৃণমূলেরই অনেকের ধারণা, রবিরঞ্জনবাবুকে ‘চাপে’ ফেলতেই উচ্চ বাতিস্তম্ভের বিল না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিরোধীদেরও দাবি, “পুরপ্রধান বনাম মন্ত্রীর খেলা শুরু হয়েছে। খেলা দীর্ঘায়িত হলে শহরের উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে যাবে।”

পুরসভা সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের লাগানো ৩৮টি উচ্চ বাতিস্তম্ভ রয়েছে শহরে। এর জন্য পুরসভাকে প্রতি মাসে প্রায় তিন লক্ষ টাকা বিদ্যুতের বিল দিতে হয়। অথচ প্রতিটি উচ্চ বাতিস্তম্ভের গায়ে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের প্রচার করা হলেও পুরসভা নিয়ে একটি কথাও খরচ করা হয়নি, ক্ষোভ পুর সদস্যদের। বৈঠকে আর‌ও উঠে আসে, উচ্চ বাতিস্তম্ভগুলির বেশ কয়েকটির সংস্কার আশু প্রয়োজন, যার জন্য পুরসভার ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। বেশ কিছু সদস্য আপত্তিও জানান এ নিয়ে। তাঁদের দাবি, ‘‘বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদকেই ওই বাতিস্তম্ভ সংস্কার করতে হবে। আমরা পুরসভার কোনও টাকা খরচ করব না।” পুরপিতা পরিষদ সদস্য (আলো) শেখ সাহাবুদ্দিনও বলেন, ‘‘বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী জুনের পর থেকে ওই বাতিস্তম্ভের বিল দেওয়া পুরসভার পক্ষে সম্ভব নয়।’’

যদিও পাল্টা চাপ তৈরির কথা উড়িয়ে দিয়েছেন পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত। তাঁর দাবি, “পুর সদস্যদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত চলতি সপ্তাহেই বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদকে জানিয়ে দেওয়া হবে। সম্ভবত পুরসভার সম্মান ও আর্থিক চাপের কথা মাথায় রেখে পুর সদস্যরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে অন্য কোনও ব্যাপার নেই।” রবিরঞ্জনবাবুর ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের সহ-সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেন, “আমদের লাগানো উচ্চ বাতিস্তম্ভের আলো তো শহরবাসীর কাজেই লাগছে। তাহলে পুরসভা বিদ্যুতের বিল দেব না বললে তো চলবে না! আসলে রাগারাগি করে এই ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের ব্যাপার ঠিক মিটিয়ে নেব।” শুধু শহরবাসীর আশঙ্কা, বিল দেওয়ার ঠেলাঠেলিতে আলোটাই না হাওয়া হয়ে যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

city decoration electricity bill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE