জলের অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র।
বেলা বাড়তেই রোদের তেজে নাজেহাল অবস্থা। তার উপর মিলছে না জল। সমস্যা মেটাতে নতুন পাইপলাইন পাতার কাজ চলছে। তবে এই প্রকল্প থেকে জল পেতে বছর ঘুরে যাবে। এর মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, পুরনো জল প্রকল্পের পাইপলাইন থাকা সত্ত্বেও বসানো হচ্ছে নতুন পাইপলাইন। এ ভাবেই দিনযাপন করছেন উখড়া পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সালে স্থানীয় বাসিন্দাদের আন্দোলনের চাপে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অধীন আসানসোল পুরসভা নিয়ন্ত্রিত কালাঝরিয়া জলপ্রকল্প থেকে জল সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু তার পরেও মেটেনি সমস্যা। কারণ, ওই জলপ্রকল্প থেকে উখড়ার দুরত্ব প্রায় ৪২ কিলোমিটার। ফলে পাইপলাইন পাতা হলেও ফলে কিছু বছর যাওয়ার পরেই উখড়ার নানা এলাকায় জলসঙ্কট শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কালাঝরিয়া জলপ্রকল্প থেকে পাইপলাইন পাতার পর উখড়ার মুসলিমপাড়া, চুনারিপাড়া, দাসপাড়া, পুরনো হাটতলা প্রভৃতি এলাকায় কল দিয়ে বছর দু’য়েক জল পড়েছিল। কিন্তু তারপর ওই সব কল দিয়ে আর জলের দেখা মেলেনি। আবার সুভাষপাড়া, শুকোপাড়া়, ধীবরপাড়া, উখড়া বাজার, বাজপেয়ি মোড়, কারারডাঙা, সফিকনগর, গুলজারবাঁধ এলাকায় সমস্যাটা অন্য রকম। এখানকার কলগুলিতে ১৫ দিন অন্তর জল আসে বটে, কিন্তু সেই জল থাকে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট। ফলে ওই কলগুলি থেকে খুব কম মানুষই জল নিতে পারেন। বেশির ভাগ স্থানীয় বাসিন্দাই কুয়ো ও অন্যান্য জলাশয়ের জল ব্যবহার করতে বাধ্য হন।
সমস্যা মেটাতে বছর খানেক আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর পাণ্ডবেশ্বরে অজয় নদের ধারে একটি নতুন জলপ্রকল্পের কাজ শুরু করছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৯ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পের অধীনে এখন চলছে নতুন পাইপলাইন পাতার কাজ। কিন্তু এই প্রকল্প শেষ হতে এখনও বেশ দেরি। ফলে এই গরমে জল সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না বলেই উখড়াবাসী মনে করছেন। যে এলাকায় জল সঙ্কট তীব্র সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্যাঙ্কার করে জল দেওয়া শুরু হলেও অনেক এলাকাতেই এখনও সেই ট্যাঙ্কারের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় নকশাল নেতা সাধন দাসের অভিযোগ, “পুরনো জল প্রকল্পের অধীন পাইপলাইনগুলিকেই নতুন জলপ্রকল্পে ব্যবহার করা যেত। তাতে কাজটাও তাড়াতাড়ি শেষ হত। সেটা না করে নতুন করে পাইপলাইন পেতে দুর্নীতি করা হচ্ছে।” রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলি দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “পুরনো জলপ্রকল্পের পাইপলাইনও ব্যবহার করা হবে।”
গরম বাড়ার পর কুয়ো ও জলাশয়গুলিও শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। ফলে স্বাভাবিক জলের উত্স প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জলের জন্য কয়েক কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে আসতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। উখড়ার প্রাক্তন উপপ্রধান কালিয়া বাউরি বলেন, “জল সঙ্কট থেকে বাঁচার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় ২ কিলোমিটার দূর থেকে সাইকেল করে জল নিয়ে এলে সমস্যা মেটাচ্ছেন। অনেকে টাকার বিনিময়ে জল কিনছেন।”
উখড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান আশিস কর্মকারের দাবি, “পঞ্চায়েতের প্রথম ১৫ বছর কংগ্রেস ও তারপর ১০ বছর বামফ্রন্ট এই পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় ছিল। তখন জল সমস্যা মেটাতে কোনও স্থায়ী সমাধানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। আমাদের সরকার এলাকায় নতুন জলপ্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। আপাতত জল সমস্যা মেটাতে ইসিএল, ডিভিসির অন্ডাল ইউনিট ও অন্ডাল বিমাননগরী নির্মাণে নিযুক্ত সংস্থার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy