Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দেদার চুরি বিদ্যুত্‌, সমস্যায় দফতর

বিদ্যুত্‌ চুরি বাড়ছে কালনা মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়। বিদ্যুত্‌ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার বিভিন্ন সাব স্টেশন থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুত্‌ সরবরাহ করা হচ্ছে, তার অর্ধেকের বেশির দাম মিলছে না।

অবাধে চলছে বিদ্যুত্‌ চুরি। কালনায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

অবাধে চলছে বিদ্যুত্‌ চুরি। কালনায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

বিদ্যুত্‌ চুরি বাড়ছে কালনা মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়।

বিদ্যুত্‌ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার বিভিন্ন সাব স্টেশন থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুত্‌ সরবরাহ করা হচ্ছে, তার অর্ধেকের বেশির দাম মিলছে না। তথ্য অনুযায়ী, মহকুমার মধ্যে সব থেকে বেশি বিদ্যুত্‌ চুরি হচ্ছে মন্তেশ্বর ব্লকে। বিদ্যুত্‌ দফতরের এক কর্তা জানান, মন্তেশ্বর এলাকায় গত এক বছরে ৭৬.৯৫ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুত্‌ সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে বিদ্যুত্‌ দফতর মাত্র ১৮.৫৪ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুতের টাকা পেয়েছে। সমস্যায় রয়েছে বিভিন্ন সাব স্টেশন এলাকাগুলিতেই। বৈদ্যপুর সাব স্টেশন এলাকায় ৩১.৯৭ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুত্‌ সরবরাহ করা হলেও বিদ্যুত্‌ দফতরের হাতে এসেছে মাত্র ১৯.৮২ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুতের দাম। পূর্বস্থলীতে ৬৩.৪৩ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুত্‌ পাঠানো হলেও বিদ্যুত্‌ দফতর মাত্র ২২.৮৫ মিলিয়ন ইউনিটের দাম পেয়েছে। ধাত্রীগ্রাম এলাকায় পাঠানো হয়েছিল ৫১.৬২ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুত্‌। তাঁত শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই এলাকা থেকে পাওয়া গিয়েছে মাত্র ১৮.২৯ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুতের দাম। জেলার আরও এক তাঁত শিল্পকেন্দ্র সমুদ্রগড় এলাকায় ৫১.৫১ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুত্‌ পাঠানো হলেও পাওয়া গিয়েছে মাত্র ২২.৯০ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুতের দাম।

কেন মিলছে না বিদ্যুতের দাম?

বিদ্যুত্‌ দফতর সূত্রে খবর, যে পরিমাণ বিদুত্‌ সরবরাহ করা হচ্ছে, তার বেশির ভাগই চুরি হয়ে যাওয়াতেই তৈরি হচ্ছে সমস্যা। এছাড়া নিয়মিত মিটার রিডিং না হওয়া, মিটার খারাপের মত সমস্যাও রয়েছে। তদন্তে নেমে বিদ্যুত্‌ দফতরের কর্তারা জানতে পেরেছেন, চাষের জমিতে বসানো শ্যালো পাম্প থেকেই বেশি বিদ্যুত্‌ চুরি হচ্ছে। বিদ্যুত্‌ দফতরের এক কর্তা বলেন, “এক শ্রেণির অসাধু লোক শ্যালো পাম্প চালানোর সময়ে বিদ্যুতের তারের সঙ্গে সরাসরি পাম্পের মোটরের সংযোগ করে দিচ্ছে। ফলে মিটার থাকলেও বিদ্যুত্‌ খরচের হিসেব সেখানে উঠছে না।” অনেক সময়ে বাড়ির বিদ্যুত্‌ সংযোগের ক্ষেত্রে চলছে মিটারে কারচুপি। বাড়িতে যে পরিমাণ বিদ্যুত্‌ খরচ হচ্ছে, সেটা মিটারে উঠছে না। এছাড়া নানা জায়গায় বিভিন্ন উপায়ে হুকিং তো আছেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদ্যুত্‌ কর্তা জানান, বিভিন্ন জায়গায় যে অবাধে বিদ্যুত্‌ চুরি হচ্ছে, সেটা জেনেও অনেক সময় ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। কারণ, বিদ্যুত্‌ চুরির ক্ষেত্রে অভিযান চালাতে গেলে অনেক সময়েই গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। সেখান থেকে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার মত পরিস্থিতিও ঘটেছে। ওই বিদ্যুত্‌ কর্তা বলেন, “পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অনেক জায়গাতেই আমরা অভিযান চালাই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দোষীরা পাল্টা প্রতিরোধের রাস্তা নিলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়।”

সমস্যার কথা স্বীকার করে বিদ্যুত্‌ দফতরের কালনা শাখার ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার চঞ্চল বিশ্বাস বলেন, “বিদ্যুত্‌ চুরি রুখতে অভিযান চলছে। প্রতি মাসেই গড়ে ১০টি করে বিদ্যুত্‌ চুরির মামলা দায়ের করা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। ভবিষ্যতে অভিযানের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।”

তবে অভিযানে কাজ হবে কী না, তা নিয়ে অবশ্য বিদ্যুত্‌ কর্তাদের মধ্যেই যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE