মামরা বাজারে ডিপিএলের প্রধান লাইন থেকে তার জুড়ে বেআইনি ভাবে নেওয়া হয়েছে সংযোগ।
হুকিং করে নেওয়া বিদ্যুতে দিব্যি চলছিল দোকানের গুদাম। র্যাক কিনতে গিয়ে তড়িদাহত হয়ে ক্রেতার মৃত্যু না হলে তা কারও নজরেও পড়ত না। দুর্গাপুরের মামরা বাজারে ওই বাসনের দোকান মালিক পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, বাজারে নিয়মিত কেনাকাটা করতে যান যে বাসিন্দারা, ঘটনার পরে তাঁদের প্রশ্ন, প্রকাশ্যে হুকিং চললেও তা বন্ধ করতে নজরদারি নেই কেন?
মামরা বাজার এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)। বুধবার ওই বাজারে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ডিপিএলের প্রধান সংযোগের লাইন থেকেই তার দিয়ে হুকিং করা হয়েছে ইচ্ছে মতো। বহু দোকান বা গুদামেই গিয়েছে সেই অবৈধ সংযোগ। প্রকাশ্যে এমন বেআইনি কাজ দিনের পর দিন চলছে কী ভাবে, সে নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি বাজারের কেউই। তবে হুকিংয়ের জেরে এই বাজার এলাকা যে বেশ বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে, তা স্বীকার করেছে ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মামরা বাজারের এক ব্যবসায়ী এ দিন বলেন, “দু’এক জায়গায় তো বেশ বিপজ্জনক ভাবেই সংযোগ টানা হয়েছে। বৃষ্টি হলে শর্ট সার্কিটের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে যেতে পারে বাজারে, আমরা এ নিয়ে বেশ ভয়ে থাকি।” বাজারের এক সব্জি ব্যবসায়ী অধীর দাসের দাবি, “আমরা যে দিকে বসে ব্যবসা করি, সেখানে হুকিংয়ের ব্যাপার নেই। তবে অন্য দিকে বেশ হুকিং করে বিদ্যুৎ নেওয়ার চল রয়েছে বলে শুনতে পাই।”
বাজারের দোকান বা গুদামে হুকিং করে বিদ্যুৎ নেওয়া নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ছিলই। এ দিন তার পরিণতিতে এক ক্রেতার মৃত্যুর পরে তা বেড়েছেই, সঙ্গে তৈরি হয়েছে আতঙ্কও। অনেক ক্রেতারই বক্তব্য, দোকানের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা যদি এমন বিপজ্জনক হয়, তবে মানুষ কেনাকাটা করতে যাবেন কোন ভরসায়। মামরা বাজারে নিয়মিত কেনাকাটা করতে যান মনোজ ভট্টাচার্য। এ দিনের ঘটনা শোনার পরে তাঁর অভিযোগ, “এই বাজারেই হুকিংয়ের এমন রমরমা দেখতে পাই। বেনাচিতি বাজার বা চণ্ডীদাস বাজারেও তো গিয়েছি। সেখানে তো এমন বেআইনি ব্যবস্থা চোখে পড়ে না।” এমএএমসি টাউনশিপ এলাকার বাসিন্দা সৌরভ রায় বলেন, “এক ব্যবসায়ীর গাফিলতির জন্য কোনও নিরীহ ক্রেতার প্রাণ চলে গেল, এই ঘটনার নিন্দা করার মতো ভাষা নেই। এ সব বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত নজরদারি চাই।”
মামরা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশিস ঘোষের দাবি, “এ দিনের ঘটনার খবর আমরাই প্রথম ডিপিএল-কে জানিয়েছি। আমরা চাই, হুকিং বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অভিযান চালানো হোক।” নজরদারি না রাখার কথা মানতে চায়নি ওই বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা ডিপিএল। সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “মাঝে-মধ্যেই অভিযান চালানো হয়। ধরপাকড়ও করা হয়। ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, এ দিনই সেখানে হুকিং বন্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। শীঘ্রই ওই বাজারে আরও অভিযান চালানো হবে।” নিউটাউনশিপ থানার পুলিশ জানায়, হুকিং বন্ধে ডিপিএল সহযোগিতা চাইলেই তারা তা করে থাকে। এ দিনও যাহায্য করা হয়েছে।
এক ক্রেতার প্রাণ যাওয়ার পরে এখন কিছু অভিযান হয়তো হবে। কিন্তু তাতে হুকিং কতটা বন্ধ করা যাবে, সে নিয়ে সংশয় কাটছে না শহরবাসীর।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy