অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এক ভাগচাষির। তাঁর নাম লক্ষ্মীরাম হেমব্রম (৩০)। বাড়ি মেমারির রসুলপুরে। তবে ওই চাষির পরিবারের দাবি, আলু চাষে ক্ষতি হওয়ায় দেনার দায়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার দুপুরে বাড়িতেই কীটনাশক খান ওই চাষি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেমারি গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই রাতে মারা যান তিনি। রবিবার দুপুরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে দেহটির ময়নাতদন্ত হয়। হাসপাতালে দাঁড়িয়েই মৃত লক্ষ্মীরামবাবুর ভাই রবি হেমব্রম বলেন, “দাদা দু’বিঘে জমিতে ভাগে আলু চাষ করেছিলেন। কিন্তু ধসা রোগে আক্রান্ত হয়ে আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চাষের জন্য মহাজনের কাছ থেকে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেন দাদা। আলু ওঠার মুখে মহাজনেরা তাগাদা শুরু করেন। কিন্তু ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দাদার পক্ষে টাকা শোধ দেওয়ার উপায় ছিল না। তাই দাদা এ কাজ করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস।” লক্ষ্মীরামবাবুর প্রতিবেশী, পেশায় আলুচাষি বুধন মুর্মুর অভিযোগ, “আমাদের মেমারিতেই অনেক জায়গায় ধসা রোগের আক্রমন দেখা দিয়েছে। এর জেরে আলু চাষিরা বিপদে পড়েছেন। সরকার অবিলম্বে ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা না করলে, সমস্যা আরও বাড়বে।”
মেমারি থানার ওসি পার্থ ঘোষ বলেন, “ওই ব্যক্তির আত্মহত্যার পিছনে পারিবারিক অশান্তিই দায়ি। এ দিন সকালে মৃতের বাড়ির লোক ও গ্রামের মানুষ থানায় এসে একথাই বলে গিয়েছেন।”
জেলা জুড়ে আলু চাষে নাবিধসার প্রকোপ কেমন, ক্ষতিই বা কতটা হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হলে কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও সম্পূর্ণ রিপোর্ট তৈরি হয়নি। তবে জেলাতে প্রায় ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তার মধ্যে হাজারের কিছু বেশি জমিতে বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে। মেমারি ১ ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা অনিতা রায়চৌধুরী বলেন, “জেলায় অন্যান্য জায়গার মতো মেমারির এই ব্লকে আলুতে ধসা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিতেও কিছুটা ক্ষতি হয়েছে আলুর। তবে সেটা বিশাল কিছু নয়। যারা অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে আলু চাষ করেন, তাঁদের ততটা সমস্যা দেখা দেয়নি। কিন্তু এ বারে অনেকেই ধানের জমিতেও আলু চাষ করেন। বৃষ্টিতে সেই সব এলাকায় জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তবে এর মধ্যে রসুলপুরও রয়েছে কী না, তা খোঁজ না নিয়ে বলা সম্ভব হবে না।”
কৃষি মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “জেলায় আলুতে ধসা রোগের খবর এসেছে। তবে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেনি। আলুর ফলনে কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা জানতে ফসল পুরোপুরি ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যদি দেখা যায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ, তাহলে তাঁদের পাশে সরকার অবশ্যই দাঁড়াবে। বিনামূল্যে বীজ, সার দেওয়া হবে। কিছুটা ক্ষতিপূরন দেওয়ারও চেষ্টা করা হবে।” তবে ওই ভাগচাষির আত্মহত্যার ঘটনার পিছনে পারিবারিক কারণ রয়েছে বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “রাজ্যের চাষিরা জানেন, সরকার তাঁদের পাশে রয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy