এভাবেই পারাপার। ফাইল চিত্র।
এক দিকে বীরভূমের জয়দেব। অন্য দিকে বর্ধমানের শিবপুর। মাঝখান দিয়ে বইছে অজয় নদ। নদী পারাপারের একমাত্র উপায় হল নৌকা। কিন্তু পারাপারে কোনও পাকা সেতু নেই। অজয় নদে যখন জল থাকে না তখন ভরসা বলতে একটি অস্থায়ী বাঁশের সেতু। সেটিও বছরের বেশির ভাগ সময়েই আস্ত থাকে না। যাতায়াতের সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী সেতুর দাবি জানালেও এতদিন কোনও সমাধান হয়নি। অবশেষে, দিন কয়েক আগে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কাঁকসার এক অনুষ্ঠানে বাসিন্দাদের দাবি মেনে অজয়ের উপরে স্থায়ী সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সম্প্রতি কাঁকসায় একটি অনুষ্ঠানে এসে সেতুর দাবির কথা জানতে পারেন সুব্রতবাবু। তারপরে তিনি বলেন, “অজয় নদের উপরে সেতু হলে দুই জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ উপকার পাবেন। দুর্গাপুর, কাঁকসায় বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অন্য পাড়ের পড়ুয়ারা সহজেই সেখানে যাতায়াত করতে পারবেন।” মন্ত্রী আশ্বাস দেন, “সেতু তৈরিতে কোনও সমস্যা হবে না। সেচ দফতর করতে পারে। আমার দফতর করতে পারে কিনা আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। তবে সেতু হবেই।” ওই অনুষ্ঠানেই মন্ত্রী জানান, বর্ধমান ও বীরভূমের মধ্যে যে কোনও একটি জেলা পরিষদ যদি লিখিত ভাবে সেতু না থাকার সমস্যার কথা তাঁকে জানায় তাহলে কাজের সুবিধা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পেশাগত কারণে বীরভূমের বহু মানুষকে অজয় পেরিয়ে বর্ধমানে আসতে হয়। তাঁদের মধ্যে যেমন সবজি বিক্রেতা ও ইটভাটার শ্রমিক রয়েছেন, তেমনই আছেন কলেজ পড়ুয়া থেকে চাকুরিজীবী। কিন্তু স্থায়ী সেতু না থাকায় কারণে বর্ষায় যাতায়াতে ভরসা হল নৌকা। কিন্তু জল কমলেই সমস্যা বাড়ে। তখন অজয়ে বালি বেড়ে জন্য বেশ কিছুটা জলের মধ্যে হেঁটে তবে নৌকার কাছে পৌঁছানো যায়। অন্য পাড়েও একই সমস্যা হয়। এই সময়ে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েন মহিলারা। জল একেবারেই কমে গেলে তৈরি করা হয় অস্থায়ী বাঁশের সেতু। তার উপর দিয়েই সাইকেল, মোটরবাইক নিয়ে চলে যাতায়াত। কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই কিছু দিন পরেই সেই সেতু ভেঙে যায়। তখন বাধ্য হয়ে বালির উপর দিয়ে ঠেলে নিয়ে যেতে হয় মোটরবাইক ও সাইকেল। জয়দেব কেন্দুলির মেলার সময় হাজার হাজার মানুষ বর্ধমান থেকে বীরভূমে যান। সেই সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীর উপরে অস্থায়ী বালির বাঁধ গড়ে তোলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা হৃদয় গোপ, কল্লোল ভট্টাচার্যরা জানান, অজয়ের উপরে সেতু গড়ে উঠলে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে মুচিপাড়া-শিবপুর রাস্তা ধরে শান্তিনিকেতন যাওয়ার দূরত্ব প্রায় ১৫ কিমি কমে যাবে। শুধু বর্ধমান ও বীরভূমই নয়, সেতুটি হলে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুর্গাপুরের মানুষও উপকৃত হবে।
বর্ধমান জেলার সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “অজয় নদের ওই দিকে একটি সেতু তৈরি করা হলে স্থানীয় মানুষ উপকৃত হবেনই। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযাগের আরও একটি রাস্তা খুলে যাবে।” এই বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy