দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের একাংশে চলছে কাজ। ছবি: উদিত সিংহ।
কাজ শুরু হয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিলে। প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সেই কাজ আড়াই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেই হিসাবে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই ডানকুনি থেকে পানাগড় পর্যন্ত ১৩৪ কিলোমিটারের দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ছ’লেন তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু রাস্তা চওড়া করা, সার্ভিস লেন, উড়ালপুল বা ফুট ওভারব্রিজ তৈরির মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণকাজে এখনও হাতই দিতে পারেননি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)। তাঁদের দাবি, কয়েকটি এলাকায় কিছু বাসিন্দার নানা দাবিতে বিক্ষোভের কারণে কাজ ব্যাহত হয়েছে। ফলে, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে যে যানজট নিত্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা শীঘ্র কাটার আশা নেই বলে মনে করছেন যাত্রীরা।
এই রাস্তার পানাগড় থেকে পালশিট পর্যন্ত ৬৭.৫ কিলোমিটার অংশের মধ্যে ৫৪.৫ কিলোমিটারে কাজ সম্পূর্ণ। বাকি ১৩ কিলোমিটারের কাজ করতে গিয়েই বার বার ‘বাধা’ পেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। এনএইচএআই কয়েক বার প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, গলসির পুরসা, গলিগ্রাম, ভাসাপুল, বর্ধমানের তেজগঞ্জ, শক্তিগড়ের আমড়ায় কাজ করতে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। ভাসাপুলে প্রায় ১০ মাস কাজ বন্ধ। স্থানীয় কিছু বাসিন্দার দাবি, ওই সব জায়গায় আন্ডারপাস তৈরি করতে হবে। কিন্তু তেজগঞ্জ বা ভাসাপুলে সুরক্ষা সংক্রান্ত কারণে আন্ডারপাস গড়া সম্ভব নয় বলে এনএইচএআই-এর পাশাপাশি, পূর্ত দফতরও সমীক্ষা করে জানিয়েছিল। এই জায়গাগুলিতে ফুট ওভারব্রিজের প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন সড়ক কর্তৃপক্ষ। দু’একটি জায়গায় লিফ্ট-সহ ফুট ওভারব্রিজের প্রস্তাবও মেনেছেন তাঁরা।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, পালশিট থেকে পানাগড় পর্যন্ত ৭টি আন্ডারপাস ও চারটি উড়ালপুলের প্রস্তাব ছিল। সেখানে ৪১টি আন্ডারপাস ও ৭টি উড়ালপুল তৈরি হচ্ছে। আরও কয়েকটি আন্ডারপাস, ফুট ওভারব্রিজের দাবি রয়েছে। সব ক’টির অনুমোদন এখনও আসেনি। বর্ধমানের উল্লাস মোড়ের কাছকাছি-সহ তিনটি মৌজায় জায়গা দখল সংক্রান্ত কিছু সমস্যাও রয়েছে। বর্ধমানের নবাবহাট ও উল্লাস মোড়েও উড়ালপুলের কাজ ধীরে হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে, গলসি থেকে শক্তিগড় পর্যন্ত যানজট লেগে থাকছে। এনএইএচএআই-এর প্রকল্প আধিকারিক (দুর্গাপুর) মণীশ কুমার বলেন, “কবে কাজ শেষ হবে, এখনই বলতে পারছি না।”
পালশিট থেকে ডানকুনি পর্যন্ত প্রায় ৬৭ কিলোমিটার অংশে কাজ করতে গিয়েও আন্ডারপাস ও ফুট ওভারব্রিজের দাবিতে নানা জায়গায় বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে, দাবি সড়ক কর্তৃপক্ষের। কাজ আটকে থাকায় যানজট পাকছে। আধিকারিকদের দাবি, এই অংশে ১৯টি আন্ডারপাস ও ৫টি ফুট ওভারব্রিজ তৈরি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া, এলাকাবাসীর দাবি মেনে সিঙ্গুরের কাছে ১ কিলোমিটারের বেশি ‘সার্ভিস লেন’ তৈরি হচ্ছে। প্রকল্প অধিকর্তা (কলকাতা) পি কে শ্রীবাস্তব বলেন, “কাজ বেড়ে যাওয়া, অনুমোদন মেলা– এ সব কারণে সময়সীমা বাড়াতে হয়েছে। আগামী বছর এপ্রিলের মধ্যে রাস্তা তৈরি হয়ে যাবে বলে মনে করছি।”
মোটা টাকা টোল দিয়ে যে সড়ক ব্যবহার করতে হয়, সেখানে নিত্য যানজট সহ্য করতে হবে কেন, প্রশ্ন যাত্রীদের অনেকের। এনএইচএআই-এর হিসাবে, প্রতিদিন এই এক্সপ্রেসওয়ের তিনটি টোলপ্লাজ়া দিয়ে গড়ে ৬২ হাজারের বেশি গাড়ি চলে। এক আধিকারিকের বক্তব্য, “যানজট ও দুর্ঘটনা কমানোর জন্য ছ’লেনের রাস্তা তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় দাবি মানতে গিয়ে বাজেটের চেয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। বাসিন্দাদেরও বুঝতে হবে, যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে সব দাবি মানা সম্ভব নয়।” পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েষা রানি এ বলেন, ‘‘জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy