কয়েক দিন ধরে মন্দিরের আটচালায় আশ্রয় নিয়েছেন বৃদ্ধা। দুর্গাপুরের
নিউ টাউনশিপ থানার দক্ষিণপল্লির দুর্গা মন্দিরের আটচালায় আশ্রয়
নেওয়া বছর পঁচাশির বেলারানি বর্মণকে দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি, মশারি টাঙিয়ে ঘুমোনোর ব্যবস্থাও করছেন তাঁরাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলারানির স্বামী প্রয়াত শ্রীকান্ত বর্মণ শহরের বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এমএএমসি-র কর্মী ছিলেন। আইএনটিইউসি সংগঠন করতেন। সেই সুবাদে তৎকালীন কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গেও ওঠাবসা ছিল। বেলা এমএএমসি হাসপাতালে আয়ার কাজ করতেন। পরে ডিএসপি হাসপাতালেও কাজ করেছেন। থাকতেন উত্তরপল্লিতে। তাঁদের ছোট ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। বড় ছেলে বিয়ের পরে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে অভিরামপুরে শ্বশুরবাড়িতে চলে যান। বেলাও উপায়ান্তর না পেয়ে সেখানেই চলে যান।
বৃদ্ধার অভিযোগ, মাঝে মাঝেই অশান্তি হত। কিছু দিন আগে বাধ্য হয়ে দুর্গাপুরে চলে আসেন। আশ্রয় নেন এই মন্দিরের আটচালায়। প্রায় ১৫ দিন ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা
যত্ন করেন। এর পরে আবার ছেলের কাছে ফিরে যান। কিন্তু দিন সাতেক আগে ফের চলে এসেছেন। কাঁদতে কাঁদতে বেলা বলেন, ‘‘নিজের লোকজন দেখে না। আমারও অশান্তি আর ভাল লাগে না।’’
স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ রিয়াজ খান বলেন, ‘‘পাড়ার লোকজন
যতটা পারেন করেন। মন্দির হলেও জায়গাটি ফাঁকা। মশা, সাপের উপদ্রব আছে। তাই মশারি টাঙিয়ে দেওয়া হয়।’’ বেলাকে দেখভালের দায়িত্ব কার্যত নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন পাড়ার বধূ সঞ্জু কুমারী। তাঁর দাবি, ‘‘আগের বার ছেলে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন, ঠিক ভাবে মাকে রাখবেন। তার পরেও উনি আবার চলে এসেছেন। নিশ্চয় তেমন কিছু ঘটেছে।’’
বার বার চেষ্টা করেও মঙ্গলবার বৃদ্ধার বড় ছেলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। পুরসভার প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় ভবঘুরেদের জন্য গড়ে তোলা পুরসভার অভয়াশ্রমে বৃদ্ধার আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)