Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
বার্ন স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে রায়ে আশা

কারখানা চালু করার দাবি জেকেনগরেও

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেকেনগরে বেসরকারি অ্যালুমিনিয়াম কারখানা ১৯৭৩ সালে বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। ১৯৭৮ সালে সরকারের মধ্যস্থতায় নতুন সংস্থা কারখানা চালানোর দায়িত্ব নেয়।

রানিগঞ্জে উৎপাদনহীন সেই কারখানা। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

রানিগঞ্জে উৎপাদনহীন সেই কারখানা। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০১:৩৮
Share: Save:

প্রায় সতেরো বছর ধরে পড়ে রয়েছে কারখানা। অস্থায়ী সাফাইকর্মী ছাড়া আর কেউ নেই। কারখানা চালু করার দাবি বারবারই তুলেছেন শ্রমিক-কর্মী ও এলাকাবাসী। কিন্তু ফল হয়নি। সম্প্রতি বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বন্ধ বেআইনি ঘোষণার পরে রানিগঞ্জের জেকেনগরের অ্যালুমিনিয়াম কারখানা নিয়েও পদক্ষেপের দাবি তুলছেন তাঁরা।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেকেনগরে বেসরকারি অ্যালুমিনিয়াম কারখানা ১৯৭৩ সালে বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। ১৯৭৮ সালে সরকারের মধ্যস্থতায় নতুন সংস্থা কারখানা চালানোর দায়িত্ব নেয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৮২ সালে কেন্দ্র কারখানা অধিগ্রহণ করে। ২০০০ সালের মার্চে সরকার কারখানার ৫১ শতাংশ অংশীদারি বিলগ্নিকরণ করে। তা কিনে নেয় একটি বেসরকারি সংস্থা। কিন্তু সে বছর ১ মে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০২ সালের মধ্যে কারখানায় কর্মরত ৩২৬ জন কর্মীর বেশিরভাগ জনকেই ওই বেসরকারি সংস্থার ছত্তীশগঢ়ের কোরবা ইউনিটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যাঁরা যেতে চাননি তাঁদের অবসর দিয়ে দেওয়া হয়।

কারখানার সঙ্গে এখন যুক্ত রয়েছেন ৮ জন অস্থায়ী কর্মী। তাঁদের কাজ কারখানা চত্বর সাফ রাখা। এ ছাড়া কোনও কাজ সেখানে হয় না। কর্মীদের দাবি, ২০০৭ সালে বেসরকারি সংস্থার তরফে এলাকায় সমীক্ষা করা হয়। বছর দুয়েকের মধ্যে কারখানা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা হয়নি। উল্টে, কর্মী আবাসন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কারখানার বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি কোরবা ইউনিটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আইএনটিইউসি নেতা সাধন মিশ্রের দাবি, কারখানার অধীনে ২৭৩ একর জমি রয়েছে। আগে ২৪ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছিল। নতুন বেসরকারি সংস্থা পনেরোশো মেগাওয়াটের নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অ্যালুমিনিয়াম-সামগ্রী তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও তা হয়নি। সাধনবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা সংগঠনের তরফে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও এডুকেশন হাব চালু করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তার পরে একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাকি পাঁচটি ইউনিট চালু করার আবেদন জানিয়েছিলাম। কোনওটাই হয়নি। রাজ্য সরকারের উচিত, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচন করে কারখানা চালুর উদ্যোগ হয়। কিন্তু দুই সরকারই উদাসীন।’’

সিটুর রাজ্য সহ-সভাপতি বিবেক হোমচৌধুরী দাবি করেন, “এই কারখানার পাশেই রয়েছে ইসিএলের দু’টি খনি। এই কারখানা অ্যালুমিনিয়াম তৈরির এশিয়ায় পরিচিত ছিল। জোর করে কেন্দ্র কারখানাটি বিলগ্নিকরণ করে দেওয়ায় এলাকার অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে। আমরা বরাবর চালু করার দাবিতে বিভিন্ন স্তরে আবেদন জানিয়ে আসছি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ৪৯ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকা সত্ত্বেও কারখানা চালু না হওয়াটা কতটা আইনি, সে নিয়ে আমরা লোকসভায় লড়াই করব।’’

আসানসোলের মেয়র তথা তৃণমূল নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির অভিযোগ, ‘‘আগে থেকে কারখানার যথেষ্ট জমি থাকা সত্ত্বেও ওই বেসরকারি সংস্থা আরও প্রায় তিনশো একর জমি চাইছিল। সরকারের তরফে তাদের জানানো হয়, আগে পুরনো কারখানায় কাজ শুরু হোক। তার পরে প্রয়োজনমতো সম্প্রসারণের জমি দেওয়া হবে। কিন্তু তারা তা চালু করেনি।’’

কারখানার সঙ্গে যুক্ত অস্থায়ী কর্মী রঞ্জিত মজুমদার, অমরেশ মণ্ডলেরা জানান, কারখানা বন্ধ কোনও দিন ঘোষণা করা হয়নি। রঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘কারখানা চালু হলে এলাকার অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। আমরাও উপকৃত হব।’’ কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Burn Standard Company Limited Workers NCLT
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE