Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
রাজুর

রাস্তা সারাতে কোদাল হাতে বাসিন্দারা

দিন তিনেক আগের এক রাতে সাপে কেটেছিল গ্রামেরই এক জনকে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে গাড়িও ডেকে এনেছিলেন রাজুর গ্রামের কয়েকজন। কিন্তু গ্রামে ঢোকার রাস্তা এতটাই বেহাল যে মরণাপন্ন রোগীকে নিয়ে যেতেও রাজি হননি চালক।

রাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত গ্রামবাসীরা। —নিজস্ব চিত্র।

রাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত গ্রামবাসীরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫১
Share: Save:

দিন তিনেক আগের এক রাতে সাপে কেটেছিল গ্রামেরই এক জনকে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে গাড়িও ডেকে এনেছিলেন রাজুর গ্রামের কয়েকজন। কিন্তু গ্রামে ঢোকার রাস্তা এতটাই বেহাল যে মরণাপন্ন রোগীকে নিয়ে যেতেও রাজি হননি চালক। গ্রামের বাসিন্দারা সে দিনই ঠিক করেছিলেন, আর প্রশাসনের ভরসা নয়। এ বার রাস্তা সারাবেন নিজেরাই। রবিবার থেকে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের রাজুর গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা ইট, কোদাল নিয়ে নেমে পড়েছেন রাস্তা সংস্কারে।

দীর্ঘদিন ধরেই মাসুন্দি মোড় থেকে রায় খাঁ ক্যানেল পর্যন্ত ওই ছ’কিলোমিটার মোরাম রাস্তা খানাখন্দে ভরা। ধানের ট্রাক যাতায়াতে ভেঙে গিয়েছে গ্রামে ঢোকার মূল রাস্তাও। বর্ষাকালে গর্তে জল জমে রাস্তা একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে বলেো বাসিন্দাদের অভিযোগ। ফলে দুর্ভোগে পড়েন গ্রামের হাজার আটেক বাসিন্দা। তাঁদের দাবি, পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন, সর্বত্র আবেদন করেও কোনও সুরাহা হয়নি। তাই হাল ধরেছেন নিজেরাই।

সোমবার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা সংস্কারে বড়দের সাথে হাত মিলিয়েছে রাজুর বান্ধব বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির দুই ছাত্র। বিজন মাঝি ও চন্দন মাঝি নামে ওই দুই পড়ুয়ার কথায়, ‘‘ছোট থেকে দেখছি রাস্তার অবস্থা। স্কুলে যেতেও সমস্যা হয়। পড়ে যাই। তাই রাস্তা সারানোয় হাত লাগালাম।’’ সাইকেল চালিয়ে রাজুর গ্রামের উপর দিয়ে আড়াই কিলোমিটার পথ পার হয়ে কীর্ণাহারের স্কুলেও যায় অনেক ছাত্র। আবার জুনিয়র গার্লস স্কুলের প্রায় চারশো পড়ুয়াও আসে বাইরের গ্রাম থেকে। এ ছাড়াও ডাকঘর, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পঞ্চায়েত কার্যালয় যাওয়ার জন্য ভরসা এই ভাঙা রাস্তা। রাস্তায় ইট ও ইট ভাটার ছাই ফেলতে ফেলতে স্থানীয় আনন্দ হাজরা, সঞ্জিত মাঝি, মোশা শেখ, সুশান্ত মাঝিরা জানান, বাদশাহি রোড থেকে কান্দরা যাওয়ার মূল রাস্তা এটি। কান্দরা কলেজ, ব্লক অফিস হোক বা কেতুগ্রাম থানা— এই রাস্তায় যাতায়াতের একমাত্র পথ। এমনকী, রোগী নিয়ে যেতেও গাড়ি ঢুকতে চায় না গ্রামে। সবুজ শেখ নামে এক জন বলেন, ‘‘স্কুলে যাওয়ার জন্য সরকার সাইকেল দিচ্ছে। কিন্তু সাইকেলটা চালাবে কোথায়?’’ গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ, রাস্তায় হাঁটা যায় না বলে বাধ্য হয়ে বেশির ভাগ মানুষ ভ্যানে যাতায়াত করেন। ফলে ভ্যানের ভাড়া ক্রমাগত বাড়ছে।

রাজুর পঞ্চায়েত সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা অনুমোদিত হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’ রাস্তা সংস্কার দ্রুত শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক খুরশিদ আলি কাদরিও।

অন্য বিষয়গুলি:

Villagers Road reformation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE