অভিযোগ এলে তবে শুরু হতো তদন্ত। আর তেমনটা করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে একশো দিনের কাজে বিভিন্ন প্রকল্পে খামতি থেকে যাচ্ছিল। এই পরিস্থিতির বদল আনতেই বর্ধমানের জেলাশাসকের নির্দেশে শুরু হয়েছে সরাসরি প্রকল্প-পরিদর্শন। আর পরিদর্শন শুরু হতেই উঠে আসছে ভুরিভুরি অভিযোগ।
জেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, একশো দিনের কাজ নিয়ে ব্লক থেকে জেলা নোডাল অফিসে অভিযোগ পাওয়ার পরে তদন্ত শুরু হতো। অভিযোগ না মিললে কার্যত হাত গুটিয়ে বসে থাকতেন প্রশাসনের কর্তারা। এর ফলে একশো দিনের বিভিন্ন কাজে খামতি থেকে যাচ্ছিল বলে প্রশাসনের একটি অংশের মত। এই দিকে তাকিয়েই পুজোর ঠিক আগে জেলাশাসক তথা প্রকল্পের জেলা অধিকর্তা সৌমিত্র মোহন ব্লক স্তরের কর্তাদের নিয়মিত ভাবে একশো দিনের কাজ পরিদর্শনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রশাসনের সূত্রে খবর, প্রতিটি বিডিওকে জেলাশাসক চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বেশ কিছু ব্লকে পরিদর্শনের মান খুবই দুর্বল। আবার অনেক সময়ে পরিদর্শনে গেলেও ঠিক মতো নথি সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে না। তা ছাড়া অভিযোগ নিতে বিভিন্ন পঞ্চায়েতেরও অনীহা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খরচের তুলনায় নিম্নমানের কাজ, প্রকল্প বাস্তবায়নে পঞ্চায়েতের গড়িমসি-সহ বহু অনিয়ম হচ্ছে বলে মত প্রশাসনের কর্তাদের। জেলা ভিজিল্যান্স ও মনিটরিং কমিটির একশো দিনের স্থায়ী কমিটি বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে লক্ষ করেছে, খাতায়-কলমে প্রকল্প চালু থাকলেও বাস্তবে হাতেগোনা প্রকল্প চলছে। এই পরিস্থিতিতে একশো দিনের কাজে স্বচ্ছতা আনতে ও কাজের গুণগত মান ঠিক করার জন্য বিডিও, যুগ্ম বিডিওদের মাসে দু’টি করে, পঞ্চায়েতের অফিসারদের ৫টি ও অন্যান্য আধিকারিকদের মাসে ৩টি করে প্রকল্প দেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
পরিদর্শন শুরু হতেই বিভিন্ন অভাব-অভিযোগ সামনে এসেছে বলে জানান প্রশাসনের কর্তারা। যেমন, মেমারির নিমো ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দেউলিয়া ও আলিপুর গ্রামে পরদর্শকদের কাছে সুপারভাইজারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কর্মীরা। জামালপুরের একটি পঞ্চায়েতে গিয়ে পরিদর্শক দলকে বাসিন্দারা জানান, খাতায়-কলমে যতগুলি কালভার্ট তৈরির কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবে তার থেকে কম হয়েছে। বর্ধমান ১ ব্লকের বণ্ডুল গ্রাম পঞ্চায়েতেও নির্দিষ্ট পুকুরের বদলে অন্য একটি পুকুর সংস্কার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। দু’টি ক্ষেত্রেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিদর্শনের রিপোর্ট প্রকল্প আধিকারিকের কাছে পাঠাবেন ব্লক কর্তারা। ওই রিপোর্ট দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। ইতিমধ্যেই মেমারি ১-এর বিডিও যেমন রিপোর্ট দিয়েছেন, দেউলিয়া ও আলিপুর গ্রামের সাত জন সুপারভাইজার পরপর তিনটি আর্থিক বর্ষে ৬৬ জন শ্রমিকের টাকা পোস্ট অফিস ও ব্যাঙ্ক থেকে সই জাল করে তুলে নিয়েছিলেন। ওই সব শ্রমিকের জবকার্ড থেকে পাসবই সুপারভাইজাররা নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। একশো দিনের প্রকল্পের জেলা আধিকারিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “ওই রিপোর্ট পেয়ে এফআইআর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ মেনে বিডিও এফআইআর করেছেন।”
এমন পরিদর্শনের ভাল ফল মিলবে বলেই আশা প্রশাসনের কর্তাদের। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রণব বিশ্বাস বলেন, “জেলাশাসকের নির্দেশে ব্লক আধিকারিকরা নিয়মিত ভাবে পরিদর্শন শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ফল আসতে শুরু করেছে। দুর্নীতি আটকানোর পাশাপাশি ভাল প্রকল্প উঠে এলে আমরা অন্য পঞ্চায়েতেও করতে উৎসাহ দেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy