Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ফের চাষির অপমৃত্যু ভাতারে, অভিযোগ ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে

বুধবার রাতে ভাতারের কুবাজপুরের চাষি গৌতম ঘোষ (৩২) আত্মঘাতী হন। গৌতমবাবু যে খেতে চাষ করতেন, সেখানেই চাষ করতেন ভাতারের খেঁড়ুর গ্রামের বাসিন্দা জগাই দাস (৩০)।

ক্ষতি: পোকার আক্রমণে ক্ষতি হয়েছে আমন ধানে। মাথায় হাত চাষির। কালনায়।

ক্ষতি: পোকার আক্রমণে ক্ষতি হয়েছে আমন ধানে। মাথায় হাত চাষির। কালনায়।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৮
Share: Save:

মাত্র দেড় দিনের ব্যবধান। ফের চাষে ক্ষতির জেরে অবসাদে ভুগে চাষির আত্মঘাতী হওয়ার অভিযোগ উঠল। ঘটনাস্থলও সেই একই, ভাতার। পরিবারের দাবি, এক দিকে শোষক পোকার আক্রমণ, অন্য দিকে বোরো চাষে ক্ষতিপূরণ না মেলার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। চাষিদের দাবি, এই সমস্যা এ বার জেলা জুড়েই।

বুধবার রাতে ভাতারের কুবাজপুরের চাষি গৌতম ঘোষ (৩২) আত্মঘাতী হন। গৌতমবাবু যে খেতে চাষ করতেন, সেখানেই চাষ করতেন ভাতারের খেঁড়ুর গ্রামের বাসিন্দা জগাই দাস (৩০)। জগাইবাবুর নিজের দেড় বিঘা এবং সাড়ে তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন। বৃহস্পতিবার মাঠেই কীটনাশক পান করেন জগাইবাবু। শুক্রবার ভোরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতের দাদা মাধাই দাস, গ্রামবাসী সমীর দাসদের অভিযোগ, ‘‘চাষ করতে গিয়ে জগাইয়ের ৩০ হাজার টাকা ধার হয়েছিল। স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে টাকা ধার করেন জগাই। দশ হাজার টাকা মহাজনের কাছেও ধার ছিল। বোরো চাষের ক্ষতিপূরণও মেলেনি। এই সব কারণেই হয়তো জগাই আত্মহত্যা করেছে।’’

এ দিন হাসপাতালে টাকা আদায় করতে যান ওই মহাজন। যদিও পরিবারের লোক জন ওই মহাজনকে দেখেই তেড়ে যান বলে অভিযোগ। মোটরবাইক ফেলে চম্পট দেন ওই মহাজন। তাঁর মোটরবাইকটি আপাতত পুলিশের কাছে রয়েছে। এই দু’জন চাষির মৃত্যুর ক্ষেত্রেই প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, আত্মহত্যার সঙ্গে চাষের কোনও সম্পর্ক নেই।

ভ্যানভ্যানে পোকা। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

তবে এই ঘটনার পরে ফের ক্ষতিপূরণ বিলিকে কেন্দ্র করে অনিয়ম এবং শোষক পোকার আক্রমণের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছেন চাষিরা এবং বিরোধীরা। সিপিএমের কৃষকসভার জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেনের দাবি, “ক্ষতিপূরণ বিলিকে কেন্দ্র করে দলবাজি, গোষ্ঠীবাজিও যে হয়েছে, তা তালিকা দেখলেই বোঝা যায়। এই সময় জেলা জুড়েই বাদামি শোষক পোকা, মাজরা পোকায় মাঠ ছেয়ে গিয়েছে।’’

চাষিদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে খানিকটা হলেও অবস্থার সামাল দিতে পারত বোরো চাষের ক্ষতিপূরণ। কিন্তু তা ঠিক মতো দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবারই মেমারির বড়পলাশন ২ পঞ্চায়েতের মির্জাপুরের এক দল চাষি জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) ও সভাধিপতির কাছে অভিযোগ করেন, নিয়ম মতো ফর্ম পূরণ করার পরেও ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের তালিকায় তাঁদের নাম নেই। তাঁদের অভিযোগ, এমন ঘটনাও ঘটেছে, যাঁরা চাষ করেনি, তাঁরাও টাকা পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা তদন্তের দাবি জানান। ওই গ্রামেরই চাষি শেখ আব্দুল হাসিব, সাবির মোল্লাদের অভিযোগ, “আমরা ক্ষতিপূরণের ন্যায্য দাবিদার। অথচ ক্ষতিপূরণ পায়নি। অথচ মুম্বই-বাংলাদেশে থাকা লোকেদের নাম ক্ষতিপূরণের তালিকায় রয়েছে।” ওই সব চাষিদের দাবি, ক্ষতিপূরণের তালিকায় থাকা ৯২৩ জনের মধ্যে ১৮১ জনের নাম ‘ভুয়ো’। ওই গ্রামের তৃণমূল নেতা আব্দুল হানিফ শেখও বলেন, “প্রকৃত চাষিরা কিন্তু ক্ষতিপূরণ পায়নি।” পূর্বস্থলী ১-র নাদনঘাটের চাষি রফিক শেখের দাবি, ‘‘পরপর দু’বার নিম্নচাপের জেরে ধান চাষের ক্ষতি হয়েছে। তার উপরে শোষক পোকার হামলা। সরকারি ক্ষতিপূরণ না দিলে চাষির সমস্যা বাড়বে।’’

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু অবশ্য বলেছেন, “কী ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে আমাদের সরকার চাষিদের পাশে থাকার জন্য নানা রকম প্রকল্প নিয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে চাষের ক্ষতিপূরণও করা হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

distribution Compensate Farmer Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE