Advertisement
E-Paper

ভিড় টানে কার্তিকের ‘থাকা’, ড্রোন-ক্যামেরায় তৈরি পুলিশও

এক সময় ভাগীরথীর জলপথেই কাটোয়ায় এসে বণিকেরা ব্যবসা করতেন। বাবুদের আনাগোনা শুরু হয় সে দিনের কন্টকনগরে, যা এখন কাটোয়া।

কাটোয়ায় কার্তিকের থাকা।

কাটোয়ায় কার্তিকের থাকা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রণব দেবনাথ

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৭
Share
Save

বাঁশবেড়িয়া, বেলডাঙা-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় কার্তিক পুজো হলেও কাটোয়ার ঐতিহ্যবাহী কার্তিকের শোভাযাত্রা অতুলনীয়। দেবসেনাপতি কার্তিককে মুখ্য ভূমিকায় রেখে ১৫-২০টি বা তারও বেশি পুতুল বাঁশের কাঠামোয় থাকে থাকে সাজিয়ে নানা পৌরাণিক কাহিনী তুলে ধরা হয়। চলতি কথায় এর নাম ‘থাকা কার্তিক’। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে অগণিত মানুষ আসেন ভাগীরথী পাড়ের প্রাচীন শহর কাটোয়ায়।

এক সময় ভাগীরথীর জলপথেই কাটোয়ায় এসে বণিকেরা ব্যবসা করতেন। বাবুদের আনাগোনা শুরু হয় সে দিনের কন্টকনগরে, যা এখন কাটোয়া। সে সময় বাবুদের বিনোদনের জন্য নদী সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠতে থাকে একের পর এক বারবনিতাদের আস্তানা। তাঁদের অনেকেই পুত্রসন্তান লাভের জন্য কার্তিক পুজো শুরু করেন। পুজোয় বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এসে প্রচুর অর্থ খরচ করতেন। কে কত বেশি অর্থ খরচে কার্তিক পুজো করবেন, তা নিয়ে কার্যত লড়াই দেখা যেত। সেই সময় থেকেই পুজো উদ্যোক্তারা বাঁশ দিয়ে সিঁড়ির মতো পিরামিড আকারের বড় কাঠামো তৈরি করে থাকেন। সবার উপরে দেবসেনাপতির মূর্তি বসানো হত। সিঁড়ির বাকি অংশে অন্য দেবদেবীর পুতুল ধাপে ধাপে বা থাকে থাকে সাজিয়ে পৌরাণিক নানা কাহিনী তুলে ধরে ‘থাকা কার্তিকের’ পুজো শুরু হয়।

কাটোয়া শহরের চাউলপট্টি যুব সম্প্রদায় এ বছর কামরূপ কামাখ্যার দৃশ্য তুলে ধরে থাকা সাজিয়েছে। ক্লাবের সম্পাদক সুমন দাস বলেন, “আমাদের থাকা কার্তিকের পুজো প্রায় ২০০ বছর ধরে চলছে।” কুমোরপাড়া কার্তিক পুজো কমিটি ‘সীতাহরণ’ পৌরাণিক কাহিনী তুলে ধরে থাকা সাজিয়েছে। পুজো কমিটির সভাপতি গৌরসুন্দর সাহা বলেন, “প্রত্যেক বছরই আমরা থাকা কার্তিকে বৈচিত্র আনি। দর্শনার্থীরা থাকা দেখতেই বেশি পছন্দ করেন।” শাঁখারিপট্টি শিব-পার্বতীর বিয়ের দৃশ্য তুলে ধরেছে। কাছারিপাড়ার ঝংকার ক্লাবের থাকা কার্তিকে এ বছর বিষ্ণুর দশ অবতারের কাহিনী দেখানো হবে। ক্লাবের সম্পাদক কালীচরণ চট্টোরাজ বলেন, “প্রত্যেক বছরই আমরা থিমের পাশাপাশি লড়াইয়ের শোভাযাত্রায় কার্তিকের থাকা নিয়ে শামিল হই। চলমান আলোকসজ্জা দেখে দর্শনার্থীরা মোহিত হয়ে যাবেন।”

কাটোয়া শহরের প্রবীণ বাসিন্দা মৃদুলমলয় শর্মাসামন্ত বলেন, “কার্তিকের থাকা নিয়ে লড়াইয়ের শোভাযাত্রায় এমন উন্মাদনা অন্য কোথাও দেখা যায় না। বহু মানুষ আমাদের এখানে কার্তিকের থাকা দেখতে আসেন।” কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আধুনিকতার যুগে অনেক পরিবর্তন হলেও কাটোয়ার কার্তিকের থাকার জনপ্রিয়তা আজও অমলিন।”

এ বছর দাঁইহাটে রাস উৎসবের শোভাযাত্রার পরের দিনই কাটোয়ার ঐতিহ্যবাহী কার্তিক লড়াইয়ের শোভাযাত্রা হতে চলেছে। পুলিশ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে এ বছর এক হাজারেরও বেশি পুলিশ রাস্তায় মোতায়েন থাকবে। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব দেবে ১৩ জন ডিএসপি, ১৩ জন ইনসপেক্টর ও ২৫ জন অফিসার। মহিলা পুলিশের পাশাপাশি ৫০ জন সাদা পোশাকের পুলিশ কড়া নজরদারি রাখবেন। ইতিমধ্যে দুই শহরেই সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। শোভাযাত্রায় ড্রোন উড়িয়ে লাগাতার নজরদারি চালান হবে। বৃহস্পতিবারই পুলিশকর্মীরা কাটোয়া শহরে চলে এসেছে। দুই শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে পুলিশ ক্যাম্প করা হবে। কেন্দ্রীয় ভাবে দুই শহরে বড় ক্যাম্পে পুলিশ আধিকারিকেরা সিসিটিভিতে নজরদারি চালাবেন। কাটোয়ার এসডিপিও কাশীনাথ মিস্ত্রি বলেন, “রাস ও কার্তিক পুজো সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছি।”

Kartik Puja Katwa

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}