Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
পুলিশ ফাইল থেকে

চার বছর পার, হদিস নেই খুনির

২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি। পূর্বস্থলী কলেজের ভোটে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) এবং এসএফআই। আহত হয়ে নবদ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি হন তিন ছাত্র— টিএমসিপি-র দু’জন ও এসএফআইয়ের এক জন।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০২:৫২
Share: Save:

• ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি নবদ্বীপ হাসপাতাল চত্বরে গুলিতে খুন পূর্বস্থলীর তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ।

• সিপিএম নেতা প্রদীপ সাহা-সহ ছ’জন গ্রেফতার।

• মূল অভিযুক্ত লোকনাথ দেবনাথ এখনও অধরা।

• ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর নবদ্বীপ আদালতে বেকসুর খালাস প্রদীপবাবুরা।

কলেজের একটা সংঘর্ষ থেকে এত বড় ঘটনা ঘটে যাবে, কেউই বোধহয় আঁচ করতে পারেননি।

২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি। পূর্বস্থলী কলেজের ভোটে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) এবং এসএফআই। আহত হয়ে নবদ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি হন তিন ছাত্র— টিএমসিপি-র দু’জন ও এসএফআইয়ের এক জন।

অসুস্থ ছাত্রনেতাদের দেখতে রাতে পূর্বস্থলী থেকে কয়েক জন নেতা-কর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। সেই দলেই ছিলেন পূর্বস্থলীর তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ। রাত ১১টা নাগাদ হাসপাতাল চত্বর থেকেই উদ্ধার হয় তাঁর গুলিবিদ্ধ দেহ।

তৃণমূল নেতা পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, হাসপাতালের দোতলায় আহত ছাত্রদের দেখার সময়ে অপরিচিত এক জন এসে সজলবাবুকে নীচে ডেকে নিয়ে যান। খানিক পরে গুলির শব্দ শুনে অন্য নেতারা দৌড়ে গিয়ে দেখেন, গেটের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে সজলবাবু। মোটরবাইকে চড়ে পালিয়ে যাচ্ছে দু’জন। পঙ্কজবাবু পুলিশের কাছে এসএফআই নেতা লোকনাথ দেবনাথ, পূর্বস্থলীর সিপিএম নেতা প্রদীপ সাহা-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। লোকনাথই গুলি চালিয়েছিল বলে অভিযোগ।

সেই রাতেই প্রদীপবাবুকে তাঁর বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয়। পরে বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হলেও শুধু লোকনাথকেই ধরতে পারেনি পুলিশ। প্রদীপবাবু ছাড়া বাকি সব অভিযুক্ত জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। শিক্ষক নেতা প্রদীপবাবু জেল-হাজতে থাকাকালীনই মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানি চলাকালীন মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার আদালতকে জানিয়েছিলেন, নানা জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও মূল অভিযুক্ত লোকনাথের খোঁজ মেলেনি। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর মামলার রায় দেয় নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত। বেকসুর খালাস হন প্রদীপবাবু।

তার পরে আরও বছর দেড়েক পেরোতে চলেছে। পুলিশের খাতায় এখনও পলাতক লোকনাথ। জেলার এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘লোকনাথকে খুঁজে বার করার বহু চেষ্টা করেছি আমরা। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান মেলেনি।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লোকনাথের আসল বাড়ি বাংলাদেশে। পূর্বস্থলীর পারুলিয়ায় বৃদ্ধা দিদিমার কাছে থাকত সে। স্থানীয় বাসিন্দা কাকলি দেবনাথ বলেন, ‘‘ছেলেটা ডাকাবুকো ছিল। কিন্তু খুনের ঘটনায় তার নাম জড়িয়ে যাবে, এলাকার কেউ ভাবেনি। তার পর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি।’’

সজল বাবুর স্ত্রী ইন্দ্রাণীদেবী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। রায় বেরনোর পরে তিনি আর এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্যে রাজি নন। তবে সজলবাবুর এক আত্মীয় বলেন, ‘‘ছেলেটা খুব সহজ-সরল ছিল। রাজনীতি ছিল ওর নেশা। বিচার শেষ হয়ে গেল। কিন্তু খুনিরা সাজা পেল না। একটা ধোঁয়াশা রয়েই গেল।’’

এই মামলায় বেকসুর খালাস হওয়ার পরে ফের সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরেছেন প্রদীপবাবু। সিপিএমের পূর্বস্থলী ২ লোকাল সম্পাদক প্রদীপবাবুই এ বার পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রে দলের প্রার্থী। ভোটের মরসুমে ফের পূর্বস্থলীর মানুষের মুখে ফিরে আসছে এই সজল ঘোষ খুনের কথা। সিপিএমের পূর্বস্থলী জোনাল সম্পাদক সুব্রত ভাওয়াল বলেন, ‘‘আদলতের রায়ে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, বিনা দোষে প্রদীপবাবুর মতো এক জন শিক্ষককে দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয়েছিল। তার প্রতি অবিচারের জবাব মানুষ ভোটবাক্সে দেবেন।’’ প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘সজলবাবু অন্য তৃণমূল নেতাদের থেকে একটু আলাদা ছিলেন। জেল থেকে বেরিয়েই আমি বলেছিলাম, আসল খুনিকে খুঁজে বের করুক পুলিশ।’’

তৃণমূলও ভোটের প্রচারে এই হত্যা মামলার কথা তুলছে। বিদায়ী বিধায়ক তথা পূর্বস্থলী উত্তরের এ বারের তৃণমূল প্রার্থী তপন চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘লোকনাথ কথায় গেল? কেন তাকে আজও গ্রেপ্তার করা গেল না?’’ প্রদীপবাবুকে সিপিএম প্রার্থী করায় পূর্বস্থলীতে প্রার্থী করায় মানুষের স্মৃতিতে সেই খুনের ঘটনা আবার ফিরে আসবে এবং তাতে তাঁদেরই লাভ হবে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতারা।

চার-চারটে বছর পেরিয়ে গেল। এখনও খুনির হদিস মিলল না কেন, প্রশ্ন তুলছে সব পক্ষই।

অন্য বিষয়গুলি:

killer missing police file
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE