Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বড় হয়ে অভাবি পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে চায় তৌফিক

অভাব পড়াশোনার পথে অন্তরায় হতে পারেনি। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে এসেছে তারা। কিন্তু এ বার কী হবে, সে নিয়েই এখন চিন্তায় পড়েছে রথীন পাল, তৌফিক আলি, চায়না মাহাতোরা। দুর্গাপুরের ইছাপুর এনসি উচ্চ বিদ্যালয়ের শেখ তৌফিক আলি উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪২৬ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। ইছাপুরের এই ছাত্রের বাবা শেখ মফিজুদ্দিন দিনমজুর।

বাঁ দিক থেকে, তৌফিক আলি, রথীন পাল ও চায়না মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিক থেকে, তৌফিক আলি, রথীন পাল ও চায়না মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০১:৫৫
Share: Save:

অভাব পড়াশোনার পথে অন্তরায় হতে পারেনি। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে এসেছে তারা। কিন্তু এ বার কী হবে, সে নিয়েই এখন চিন্তায় পড়েছে রথীন পাল, তৌফিক আলি, চায়না মাহাতোরা।

দুর্গাপুরের ইছাপুর এনসি উচ্চ বিদ্যালয়ের শেখ তৌফিক আলি উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪২৬ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। ইছাপুরের এই ছাত্রের বাবা শেখ মফিজুদ্দিন দিনমজুর। কোনও দিন কাজ পান, কোনও বাড়িতেই বসে থাকতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘কোনও ভাবে ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়িয়েছি। জানি না এ ভাবে আর কত দিন চালাতে পারব।’’

উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করলেও টাকার অভাবে জয়েন্ট দেওয়া হয়নি তৌফিকের। তার ইচ্ছে, রসায়ন অথবা জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়ে গবেষণা করার পরে শিক্ষকতা করার। কিন্তু সাধপূরণ হবে কি না, সংশয়ে তৌফিক। সে বলে, ‘‘বাবার রোজগার কম। মাধ্যমিকের পরে কোনও রকমে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে। এর পরে টাকা জোগাড় কী ভাবে হবে কে জানে!’’ সে বলে, ‘‘পড়াশোনা করে বড় হলে আমার মতো ছাত্রদের পাশে থাকতে চাই, তাদের সাহায্য করতে চাই।’’

ইছাপুরের ওই স্কুলেরই কলা বিভাগের ছাত্র রথীন পাল এ বার ৪১৫ পেয়েছে। জব্বরপল্লির গরিব পরিবারের এই ছাত্রের বাবা রবিন পালও দিনমজুর। ভূগোল নিয়ে পড়তে চায় রথীন। সে জানায়, মাধ্যমিকের পরে গ্রামের দু’জন পড়াশোনা দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা পারিশ্রমিক নিতে চাইতেন না। কিন্তু সে সাধ্য মতো সামান্য পারিশ্রমিক দিয়েছে। তার ফলের পিছনে ওই দুই শিক্ষকের অবদান যথেষ্ট বলে জানায় সে। রবিনবাবু ছেলের ফলে খুশি হলেও এ বার কলেজে পড়ার খরচ কী করে চালাবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি, অনার্স নিয়ে পড়তে বই, খাতা, টিউশনের অনেক খরচ। সংসার চালিয়ে সেই খরচ কোথা থেকে পাব জানি না।’’

দুর্গাপুরের বিধাননগর স্পনসর্ড গার্লস হাইস্কুলের চায়না মাহাতো উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছে ৪৩৬। বাবা গাঁধীচরণ মাহাতো দুর্গাপুর স্টেশন বাজার থেকে ফুল কিনে বিভিন্ন এলাকায় সাইকেলে ফেরি করে বিক্রি করেন। উপার্জন খুব কম। মেয়ে ভাল ফল করায় চিন্তার ভাঁজ গাঁধীচরণবাবু ও তাঁর স্ত্রী আশালতাদেবীর কপালেও। চায়না অবশ্য ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করার স্বপ্ন দেখছে। ফাঁকা সময়ে সেলাই করতে ভালবাসে সে। চায়না বলে, ‘‘নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসারের হাল ফেরানোই চ্যালেঞ্জ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Tawfiq support Intelligent students poor students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE