জেলা ভাগের সম্ভাবনার কথা জানার পর থেকেই তাঁদের এলাকাকে মহকুমা করার দাবি তুলেছিলেন বাসিন্দারা। শেষমেশ আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলকে নতুন জেলা ঘোষণা করতে চলেছে রাজ্য। কিন্তু রানিগঞ্জকে মহকুমা করার দাবি মিটছে না আপাতত। রাজ্য সরকার জেলা ভাগের যে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, সেখানে নতুন জেলা পশ্চিম বর্ধমানের অধীনে দু’টি মহকুমার নাম রয়েছে— আসানসোল ও দুর্গাপুর। তা জানার পরে খানিক হতাশ রানিগঞ্জের বাসিন্দারা।
জামুড়িয়া ও পাণ্ডবেশ্বরকে সঙ্গে জুড়ে রানিগঞ্জকে আলাদা মহকুমা ঘোষণার দাবি অনেক দিন ধরেই জানিয়ে আসছে রানিগঞ্জ সিটিজেন্স ফোরাম। ফোরামের সভাপতি রামদুলাল বসু জানান, ১৮৪৭ থেকে ১৯০৬ পর্যন্ত রানিগঞ্জ মহকুমা ছিল। মঙ্গলপুরে ডাকঘর, মহকুমাশাসকের কার্যালয় থেকে প্রশাসনিক ভবন, সবই ছিল। ১৮৬৫ সালে রানিগঞ্জে স্টেশন তৈরির পরে এলাকায় বসতি বাড়ে। মঙ্গলপুর থেকে বেশ কিছু দফতর নতুন শহর এলাকায় আনা হয়। আদালতও ছিল তখন। ডিভিশনাল কার্যালয় তৈরির জন্য রানিগঞ্জে জায়গা না পেয়ে তা আসানসোলে চালু করে রেল। তার পর থেকেই আসানসোল গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে ওঠে বলে দাবি রামদুলালবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘পরে রানিগঞ্জ মহকুমার মর্যদা হারায়। কিন্তু অতীত ঐতিহ্য ফেরাতে আমরা মহকুমা চাই। তাতে জেলা ভাগের আরও সুফল মিলবে।”
পাণ্ডবেশ্বর বণিকসভার সম্পাদক শ্যামাপদ ভট্টাচার্য, নামোপাড়ার বাসিন্দা দীপক পালদের দাবি, বাসে তাঁরা রানিগঞ্জ পৌঁছন ৪০ মিনিটে। কিন্তু দুর্গাপুর যেতে দেড় ঘণ্টা লাগে। দুর্গাপুরের পর্যাপ্ত বাসও মেলে না। শ্যামাপদবাবু বলেন, “জরুরি কাজে দুর্গাপুরে যেতে বিপাকে পড়েন অনেকে।” জামুড়িয়ার বীরকুলটির রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক স্বরাজ দত্ত জানান, তাঁদের গ্রাম থেকে যত সহজে রানিগঞ্জ যাওয়া যায়, আসানসোলের ক্ষেত্রে তা হয় না। জামুড়িয়ার অনেক পড়ুয়া কলেজ বা টিউশনের জন্য রানিগঞ্জেই যায়। রানিগঞ্জ মহকুমা হলে এলাকার উন্নয়নেও সুবিধে হতো, তাঁর দাবি।
জামুড়িয়া বণিকসভার কর্তা অজয় খেতানের প্রতিক্রিয়া, “রানিগঞ্জ মহকুমা হলে আমাদেরও আপত্তি ছিল না।” রানিগঞ্জ বণিক সংগঠনের কর্তা রাজু খেতান বলেন, “আমরা চার দিন আগে জেলাশাসকের কাছে রানিগঞ্জকে মহকুমা ঘোষণার আবেদন জানিয়ে এসেছি। ৭ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীর হাতেও আবেদনপত্র তুলে দেওয়া হবে।” জামুড়িয়ার সিপিএম কাউন্সিলর তাপস কবী দাবি করেন, ‘‘রানিগঞ্জের সঙ্গে জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বরের যেমন যোগাযোগ তাতে এই তিন এলাকাকে নিয়ে মহকুমা করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করার সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’ ইস্ট কেন্দার সিপিএম নেতা গামা তিওয়ারি থেকে পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুর বাজারির কর্মী সমবায়ের সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, অনেকেরই বক্তব্য, ‘‘রানিগঞ্জকে মহকুমা করা হলেই জেলা ভাগের সুফল পাব আমরা।’’
আসানসোলের তৃণমূল নেতা তথা মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা ভাগের প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। যদি এলাকার সব মানুষ রানিগঞ্জকে মহকুমা হিসেবে চান, তা-ও নিশ্চয় বিবেচিত হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy