—প্রতীকী চিত্র।
অনুমতি নিয়েই ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজে হাত দিয়েছিল পঞ্চায়েত। তার পরেও নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে পূর্ব বর্ধমানের চারটি পঞ্চায়েতকে টাকা ফেরত দিতে বলে কেন্দ্র। সেই টাকা আট মাস আগে ফেরত দেওয়া হয়ে গিয়েছে বলে পঞ্চায়েতগুলির দাবি। তার পরেও ওই প্রকল্পের দু’বছরের মজুরি আটকে রাখা হয়েছে কেন, প্রশ্ন তাঁদের। জেলা প্রশাসনের দাবি, মজুরির সঙ্গে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহকারী ঠিকাদারদের টাকাও আটকে রয়েছে। তার প্রভাব জেলার অন্য প্রকল্পের কাজগুলিতে পড়ছে।
সোমবার কেন্দ্রের অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরী দাবি করেছিলেন, পূর্ব বর্ধমানে ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজে গরমিল হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছিল। তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। বার বার রিপোর্ট চাওয়া হলেও তা কেন্দ্রের কাছে জমা পড়েনি, দাবি করেন তিনি। নির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ করেন, “ব্যক্তিগত জায়গায় রাস্তা তৈরি হয়েছে। উপগ্রহ-চিত্রে পুকুর দেখা গিয়েছে, সেটা ১০০ দিনের প্রকল্পে কাটানো পুকুর বলে দেখানো হয়েছে।” মূল কিছু নিয়মও মানা হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলি। মূলত আউশগ্রামের এড়াল, রামনগর ও খণ্ডঘোষের শশঙ্গাকেই মোটা অঙ্কের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ওই তিনটে পঞ্চায়েতেরই দাবি, নিয়ম মেনেই কাজ হয়েছিল। জেলা থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কাজ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পরে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পরিদর্শনে এসে কেন্দ্রীয় দল শশঙ্গার ফুটবল মাঠ সংস্কারে মাটি কোথায় বলে প্রশ্ন তোলে। সেচখাল সংস্কার, দামোদরের বাঁধ কেন সংস্কার করা হয়েছে সে নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। সব মিলিয়ে ওই পঞ্চায়েত ১৪ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দিয়েছে বলে কর্তাদের। আউশগ্রামের এড়ালে পুকুর সংস্কারের কাজের অপ্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়েছিল। ওই পঞ্চায়েতেরই বৃক্ষরোপণ, কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। আবার রামনগর পঞ্চায়েতের মালিয়াড়ায় বাঁধ তৈরি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, ১০০ দিনের প্রকল্প ওই সব কাজ অনুমোদন করে না। দু’টি পঞ্চায়েত থেকেই ৪৪ লক্ষ টাকা করে ফেরত চাওয়া হয়।
ওই দুই পঞ্চায়েতের কর্তারা জানিয়েছিলেন, এলাকায় ওই সব কাজের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেই কারণেই করা হয়েছে। বাঁধ দেওয়ার ফলে আশেপাশের এলাকা অজয়ের জলে প্লাবিত হলেও মালিয়াড়া-সহ কয়েকটি গ্রামে জল ঢোকেনি বলে দাবি করেন তাঁরা। কিন্তু কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন দফতর সেই দাবি মানেনি। টাকা ফেরতের সঙ্গে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়। প্রায় তিন বছর পরে কয়েকটি পঞ্চায়েত সংশ্লিষ্ট কাজের সুপারভাইজারদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে। তাঁরা বলেন, “পঞ্চায়েতের একার পক্ষে ৪৪ লক্ষ টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। আবার শ্রমিকদের কাছ থেকে মজুরি ফিরিয়ে নেওয়াটাও অমানবিক, তাঁরা তো কাজটা করেছেন। সেই কারণে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ যৌথ ভাবে নিজস্ব তহবিল দিয়ে ওই টাকা মিটিয়েছে।” আট-ন’মাস আগে ওই টাকা মেটানোর পরেও কেন একশো দিনের কর্মীরা মজুরি থেকে বঞ্চিত থাকবেন, প্রশ্ন তুলছেন পঞ্চায়েতের কর্তারা।
শশঙ্গা পঞ্চায়েত ১৩০০ জনের মজুরি বাবদ প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা, এড়াল ও রামনগর পঞ্চায়েতে দেড়-দু’হাজার শ্রমিকের মজুরি বাবদ এক কোটি টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে। ওই সব পঞ্চায়েতের কর্তারা বলেন, “দু’বছর ধরে টাকা আসছে না বলে ১০০ দিন প্রকল্পের কাজ করা যাচ্ছে না। পুজোর আগে শ্রমিকেরা মজুরি চেয়ে পঞ্চায়েতে ভিড় করছেন।” শশঙ্গার রাম সোরেন, কুসুম মাণ্ডি, আউশগ্রামের জামাল শেখ, প্রদীপ সাহাদের দাবি, “১০০ দিনের প্রকল্প মানে বাড়তি আয় ছিল। সেটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মজুরি না দিয়ে আমাদের মতো গরিবদের কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে? সেই অধিকার কী কোনও সরকারের আছে?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy