কন কনে ঠান্ডা জল। বড় বড় জাহাজের ঢেউয়ে উথাল পাথাল জলরাশি। প্রতিকূল পরিবেশে ফের এক সিন্ধু জয় করলেন কালনার সায়নী দাস। শুক্রবার রাতে জিব্রাল্টার প্রণালী অতিক্রম করে এশিয়ার প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসেবে এই নজির গড়েন তিনি। শনিবার সায়নী জানান, এ বার তিনি সপ্তসিন্ধু জয়ের লক্ষ্যে নামবেন জাপানের সুগারু চ্যানেলে।
২০১৭-এ ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন সায়নী। পরের বছর অতিক্রম করেন রটনেস্ট চ্যানেল। যদিও এই প্রণালীকে সপ্তসিন্ধুর মধ্যে ধরা হয় না। ২০১৯-এ তিনি অতিক্রম করেন আমেরিকার ক্যাটালিনা চ্যানেল। ২০২২ সালে মনোকাই এবং ২০২৪-এ কুকস্টেট ও নর্থ চ্যানেল অতিক্রম করেন। এ বছরের শুরুতেই সায়নী পান তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার পুরস্কার। জিব্রাল্টার প্রণালী জিততে সম্প্রতি তিনি পৌঁছন স্পেনের তারিফায়। সঙ্গে ছিলেন বাবা রাধেশ্যাম দাস এবং দ্রোনাচার্য পুরষ্কার প্রাপ্ত জাতীয় স্তরের প্রশিক্ষক তপন পানিগ্রাহী। জাতীয় এই কোচের তত্ত্বাবধানে দিন দশেক অনুশীলন চলে। কয়েক দিন ধরে তারিফায় বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়া ছিল। শুক্রবার অবশ্য আবহাওয়া তুলনায় ভাল ছিল।
সায়নীর সঙ্গে এই চ্যানেল জয়ের লক্ষ্যে জলে নামেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই সাঁতারু রায়ান উৎসুমি এবং সুজানে হেইম। তাঁদের খুব কাছে একটি লাইফ বোটে ছিলেন কয়েক জন বিশেষজ্ঞ। অন্য একটি বোটে ছিলেন সায়নীর বাবা ও তপন। পাঁচ কিলোমিটার সাঁতার কাটার পরে অসুস্থ বোধ করেন সুজানে। তাঁকে তুলে নেওয়া হয় বোটে। সায়নীর সঙ্গে ১৫.১ কিলোমিটার অতিক্রম করেন অন্য মার্কিন সাঁতারু।
সায়নীর বাবা বলেন, ‘‘মেয়ে যখন সাঁতার কাটছিল, আশপাশে কিছু তিমি লক্ষ্য করেছি। বড় বড় জাহাজ যখন যাচ্ছিল, তখন সায়নী সতর্ক ছিল। জিব্রাল্টার চ্যানেল অতিক্রম করতে ওর সময় লেগেছে ৩ ঘণ্টা ৫১ মিনিট। এশিয়ার কোনও মহিলা সাঁতারু এখনও পাঁচটি সিন্ধু অতিক্রম করেননি। মেয়ে রেকর্ড করল।’’
তপনের বক্তব্য, ‘‘ওপেন ওয়াটার সুইমিংয়ে সফল হওয়ার কিছু টেকনিক্যাল দিক থাকে। আমি ওর স্ট্রোক, মাথার অবস্থান নিয়ে কাজ করেছি। দ্রুত সব শিখে প্রয়োগ করেছে সায়নী। সক্ষমতা বাড়াতে বাড়তি অনুশীলন করে জলে নামে। ফলে এতটা পথ অতিক্রম করেও খুব ক্লান্ত হয়নি। পরিকল্পনা মাফিক সাঁতার কাটায় ভাল সময়ে শেষ করেছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)