Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রতারক, দালালের ভয়ে তটস্থ

শহরের বাসিন্দা ও রোগীর পরিজনেরা দাবি করেন, দালালের সমস্যা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগেও ছিল। এখন যুক্ত হয়েছে প্রতারকের দাপাদাপি।

দালাল নিয়ে সতর্কবার্তা ব্লাড ব্যাঙ্কের দেওয়ালে। নিজস্ব চিত্র

দালাল নিয়ে সতর্কবার্তা ব্লাড ব্যাঙ্কের দেওয়ালে। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৪১
Share: Save:

হাসপাতালের নানা দেওয়ালে পরিষ্কার লেখা রয়েছে ‘দালাল হইতে সাবধান’। অথচ, হাসপাতাল জুড়ে দালাল-দৌরাত্ম্য ও প্রতারকের দাপটের অভিযোগের অন্ত নেই। দালাল-রাজ বন্ধের জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে শুরু করায় হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে এক আধিকারিককে।

শহরের বাসিন্দা ও রোগীর পরিজনেরা দাবি করেন, দালালের সমস্যা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগেও ছিল। এখন যুক্ত হয়েছে প্রতারকের দাপাদাপি। তাদের খপ্পরে পড়ে রোগী বা তাঁর পরিজনেরা সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন। সেই সঙ্গে নার্সিংহোম-চক্রের দালালদের উৎপাতও রয়েছে। সব মিলিয়ে, হাসপাতালে রোগীরা কতটা সুরক্ষিত সে নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে।

পুলিশের হিসাব থেকেই জানা যায়, হাসপাতাল চত্বরে বেআইনি কার্যকলাপের অভিযোগ উঠছে পরপর। কিছু দিন আগে হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে জামালপুরের পাঁচড়া গ্রামের মহিলা কাজল বাগ ভর্তি হয়েছিলেন। রাতে বাইরে ছিলেন ওই মহিলার স্বামী লালু বাগ ও দাদা রামপ্রসাদ মল্লিক। রাধারানি ওয়ার্ডের সামনে এক ব্যক্তি আলাপ জমিয়ে চা দেয় তাঁদের। তা খাওয়ার পরেই তাঁরা বেহুঁশ হয়ে পড়েন। সকালে উঠে তাঁরা দেখেন, মোবাইল, টাকা উধাও। এই ঘটনার আগে, বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের বছর পঞ্চান্নর অনিমারানি মণ্ডলের কাছে সোনা হাতানোর চেষ্টার অভিযোগে ধরা হয় এক জনকে।

ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে প্রকাশ্য কোনও জায়গায় প্রতিদিন কত রক্ত মজুত রয়েছে, তা জানানো বাধ্যতামূলক। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি ডিজিটাল-বোর্ড রয়েছে বটে, কিন্তু অধিকাংশ দিনই রাতের দিকে ওই বোর্ড কাজ করে না। এ ছাড়া ক’দিন আগে পর্যন্ত ওই বোর্ড অচল ছিল। সে কারণেই দালাল-চক্র জাঁকিয়ে বসেছে হাসপাতালে, দাবি রোগীর পরিজনদের একাংশের। শুধু রক্তের প্রয়োজন নয়, রোগী ভর্তি থেকে অস্ত্রোপচারের দিনক্ষণ ঠিক করার ক্ষেত্রেও দালালের সমস্যা রয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের যদিও দাবি, এই হাসপাতালের উপরে হুগলি থেকে ঝাড়খণ্ড পর্যন্ত একটি বড় অংশের মানুষ নির্ভরশীল। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্যে এখানে আসেন। নানা রকম মানুষের ভিড়ে দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে যায়। কিন্তু, হাসপাতালের ভিতরে যাতে কোনও ভাবে অপরাধমূলক ঘটনা না ঘটে, সে জন্য পুলিশ থেকে হাসপাতালে কর্মীরা সতর্ক থাকেন।

শুধু বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মূল ভবন নয়, সুপার স্পেশালিটি শাখা অনাময়েও দালাল-উপদ্রব শুরু হয়েছে। হৃদরোগ থেকে স্নায়ুরোগ, নানা বিভাগে ভর্তি করানোর নামে হাজার-হাজার টাকা দালালেরা আদায় করে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি মেদিনীপুরের এক রোগীর কাছে দালালেরা টাকা নিয়েছে জানার পরেই অনাময় হাসপাতালের সুপার অমিতাভ সাহা হস্তক্ষেপ করেন। সে জন্য হুমকির মুখেও পড়তে হয়। অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার জন্য আমাদের চেষ্টা চলবে। সেই সঙ্গে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অনুরোধ, তাঁরাও যেন সতর্ক থাকেন। তাহলেই প্রতারণা বন্ধ করা যাবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE