Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সিলিন্ডারের দর ছুঁয়েছে ১১৫০ টাকা

নিভু নিভু ‘উজ্জ্বলা’, কাঁকসার আদিবাসী গ্রামের হেঁশেলে ফিরেছে কাঠ-কয়লা

কাঁকসা ব্লকে আদিবাসী গ্রামের সংখ্যা ৭৫টি। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের সংখ্যাও এই এলাকায় নেহাত কম নয়। এই সব পরিবারে মূলত জঙ্গল থেকে কুড়িয়ে আনা কাঠ দিয়ে রান্নার কাজ হয়।

কাঁকসার ইটেডাঙা গ্রামে।

কাঁকসার ইটেডাঙা গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।

বিপ্লব ভট্টাচার্য
কাঁকসা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৩ ০৯:৩০
Share: Save:

বাড়িতে সিলিন্ডার আছে। তবে ফাঁকা। আছে আভেনও। অথচ, কাঁকসার বিদবিহারের ইটেডাঙা গ্রামের সুমিত্রা মেটে, ত্রিলোকচন্দ্রপুরের বড়বাঁধ আদিবাসীপাড়ার মালতি হেমব্রমের হেঁশেলে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, তাঁরা উনুনে রান্না করছেন।— দু’জনেরই এক রা, ‘উজ্জ্বলা’ যোজনায় গ্যাসের সংযোগ পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু সিলিন্ডারের যা দাম, তা তাঁদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। ফলে, ফিরে গিয়েছেন কাঠের জ্বালানিতে। কেউ বা কিছুটা সস্তায় পাওয়া কয়লার জ্বালানিতে ভরসা করছেন। কেউ আবার উজ্জ্বলা যোজনায় পাওয়া আভেন, সিলিন্ডার বিক্রিও করে দিয়েছেন বলে খবর!

কাঁকসা ব্লকে আদিবাসী গ্রামের সংখ্যা ৭৫টি। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের সংখ্যাও এই এলাকায় নেহাত কম নয়। এই সব পরিবারে মূলত জঙ্গল থেকে কুড়িয়ে আনা কাঠ দিয়ে রান্নার কাজ হয়। কেন্দ্রের ‘উজ্জ্বলা’ যোজনা গ্যাস যোজনা চালু হওয়ার পরে বহু পরিবারই গ্যাসে রান্না করা শুরু করে। ব্লকে ছ’জন ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে প্রায় ৩০ হাজার ‘উজ্জ্বলা’ যোজনার সংযোগ দেওয়া হয়।

কিন্তু ওই ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এই যোজনা শুরুর সময়ে প্রথমে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের জন্য, পরে, সব মহিলাদের জন্যই চালু করা হয়। নতুন সংযোগের সময়ে একটি নতুন আভেন ও একটি নতুন গ্যাস সিলিন্ডার সংশ্লিষ্ট উপভোক্তাকে দেওয়া হয়। এর জন্য গ্রাহককে কোনও নগদ টাকা দিতে হয় না। কিন্তু একটি আভেনের দাম পড়ে ৯৯০ টাকা ও যখন সংযোগ নেওয়া হবে, তখন গ্যাসের যা দাম থাকে, সে দু’টি যোগ করে যা টাকা হবে, তা গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে ‘লোন’ করা হয়। গ্যাসের ভর্তুকি থেকে সেই লোন শোধ হয়।

কিন্তু স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিনামূল্যে গ্যাসের সংযোগ মিললেও, অনেক পরিবার এখন আর গ্যাস ব্যবহার করছেন না। বিশেষ করে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলির দাবি, প্রথম দিকে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে ছিল। এখন তা প্রায় ১১৫০ টাকা। ভর্তুকি মেলে মাত্র দু’শো টাকা। কয়েক মাস আগে সেটা ৩০ টাকার আশপাশে ছিল। ফলে, এত টাকা খরচ করে গ্যাস ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পরিবারগুলি। কাঁকসার কল্পনা রুইদাস, চুরকি মুর্মুরা বলেন, “জঙ্গল থেকে শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে রান্না করতে কোনও খরচ নেই। তাই আর গ্যাস ব্যবহার করি না।” আবার অনেক উপভোক্তা উজ্জ্বলা যোজনায় পাওয়া সিলিন্ডার, আভেন বিক্রিও করে দিয়েছেন বলে খবর। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তেমনই কয়েক জন সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে বলেন, “যে ভাবে গ্যাসের দাম বেড়েছে, তাতে আমরা আর গ্যাস ব্যবহার করতে পারব না। তাই ও-সব রেখে কি হবে!”

বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে তরজাও। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্য বলেন, “কেন্দ্র গরিব মানুষকে প্রতারণা করতেই প্রকল্পটি চালু করে। যা দাম, তাতে তাঁদের পক্ষে গ্যাস ব্যবহার করাটা বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়।” সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডলেরও বক্তব্য, “বিজেপি শুধু মানুষকে বোকা বানাতে ব্যস্ত। এ ধরনের প্রকল্প করে আখেরে গরিব মানুষের কোনও উপকার হয়নি।” যদিও, অভিযোগে আমল দিচ্ছেন না বিজেপির বর্ধমান (সদর) সহ-সভাপতি রমন শর্মা। তাঁর কথায়, “এখনও বহু মহিলা উজ্জ্বলা যোজনার সংযোগের জন্য অপেক্ষা করছেন। এ রাজ্যের দরিদ্র মানুষগুলির আার্থিক উন্নতির জন্য বাম বা তৃণমূল সরকার কোনও কাজ করেনি। এ সব তারই ফল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE