—প্রতীকী ছবি।
শহরে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতার খোঁজ করছে তৃণমূল। দল সূত্রের খবর, পুরভোটের আগে সংগঠন ঢেলে সাজার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সে জন্য ত্রিস্তরীয় সমীক্ষা করা হয়েছে। সেই সব সমীক্ষার ফলাফল মাথায় রেখেই সংগঠন নতুন করে সাজানো হবে বলে জানান তৃণমূল নেতৃত্ব।
২০১২ সালে বামেদের হারিয়ে দুর্গাপুরের পুরবোর্ড দখল করে তৃণমূল। ২০১৭ সালে তারা ক্ষমতা ধরে রাখে। সেই বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। তার পর থেকে পুরসভা সামলাচ্ছে ৫ সদস্যের প্রশাসকমণ্ডলী। লোকসভা ভোটের ফলে দেখা যায়, বিজেপির হাত থেকে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটি তৃণমূল পুনর্দখল করলেও, দুর্গাপুর শহরের ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১০টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। পুর এলাকায় বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ১,৫৫,৮৬৬ (৪৫.২৩%)। সেখানে তৃণমূলের ১,৪২,২১২ (৪১.৪৫%)।
এর পরেই জুনের শেষে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে, দুর্গাপুরে ভাল ফল করতে না পারার পিছনে দলের শ্রমিক সংগঠনের ভূমিকা নিয়েও পরোক্ষে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “দুর্গাপুরে কারখানায় চাঁদা তোলার জুলুম চলছে। যারা চাঁদা তুলছে, তাদের হাতগুলো একটু বন্ধ করো।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মতে, এই পরিস্থিতিতে পুরভোটে ভাল ফল করতে গেলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষজনকে সঙ্গে নিয়ে সংগঠন ঢেলে সাজাতে হবে। তা নিশ্চিত করতে দলের তরফে প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতৃত্বের রাজনৈতিক গতিবিধি নিয়ে দলের তরফে সম্প্রতি সমীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যালয়ের তরফে এবং একটি ভোটকুশলী সংস্থার তরফেও সমীক্ষা করা হয়। ওই সব সমীক্ষায় কর্ম তৎপরতা, মানুষের সঙ্গে যোগ ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখা হয়। তাতে চিন্তাজনক ফল পাওয়া যায় বলে দলের একটি সূত্রের দাবি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, অনেকের বিরুদ্ধেই ঠিকাদারি, প্রোমোটারি, লোহা বা বোল্ডারের অবৈধ কারবার, কারখানায় তোলাবাজি, বড় বাগানবাড়ি তৈরি-সহ নানা অভিযোগ উঠে আসে। কিছু প্রাক্তন পুর প্রতিনিধির বিরুদ্ধে বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও মিলেছে বলে দাবি। লোকসভা ভোটের ফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোনও কোনও প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি নিজের ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকলেও, তাঁর বাড়ি যেখানে, সেই ওয়ার্ডে দল পিছিয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, মানুষের জন্য কাজ করেন, দলের সুনামের কথা ভেবে সংগঠন করেন, এমন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা-কর্মীর খোঁজ চলছে বলে দাবি তৃণমূলের একাংশের। মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা প্রকল্পের সুফল স্বচ্ছ ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছনো ও নেতাদের উপরে মানুষের ভরসা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ বলে জানাচ্ছেন নেতৃত্ব স্থানীয় অনেকে। এ ছাড়া, এ বার ভোটার তালিকায় নজরদারির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া পঙ্কজ রায় সরকার ও দুর্গাপুর ২ ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়কে। দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘দলের তরফে সমীক্ষা হচ্ছে। যাঁরা অনৈতিক কাজে জড়িত বা জনসংযোগে নেই, তাঁদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিক কাজ থেকে সরানো হবে। মানুষ যাতে দলের উপরে ভরসা রাখতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হবে।’’
দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের পাল্টা দাবি, “ও সব করে কিছু হবে না। সারা রাজ্যের মানুষই তৃণমূলকে হাড়ে হাড়ে চিনে নিয়েছেন। স্বচ্ছ ভোট হলেই দুর্গাপুর পুরসভা হাতছাড়া হবে ওদের।” দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীরও দাবি, “শহরের নাগরিক পরিষেবা পুরোপুরি বেহাল। শহরবাসী ফুঁসছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy