চিন্তায় জালুইডাঙার নদীপাড়ের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
বৃষ্টির জল জমা আটকাতে ইট দিয়ে উঁচু করা হচ্ছে মন্দির। রঙের পোঁচ পড়ছে লোহার দরজায়। ক’দিন বাদেই সেখানে ভবানী। তবে ভবানীর সেই ভবনও, তাঁদের ঘরবাড়ির মতো আবার কোন দিন তলিয়ে যাবে, আশঙ্কায় পূর্বস্থলীর জালুইডাঙা গ্রামের বাসিন্দারা।
প্রায় চার দশক ধরে ভাঙনের কবলে ভাগীরথীর পাড়ের এই গ্রাম। নদীর পাড় যত ভেঙেছে তত পিছিয়েছে গ্রাম। ভাঙনের গ্রাসে তলিয়ে গিয়েছে একাধিক বসতবাড়ি, জমি, রাস্তা, প্রাথমিক স্কুল। দুর্গাপুজোর মন্দিরও একবার হারিয়েছে নদীগর্ভে। চাষের জমি, ভিটে হারিয়ে অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন অন্যত্র। এক সময়ে পাঁচশো ঘর বাসিন্দা থাকলেও এখন মেরেকেটে দেড়শো ঘরের বাস গ্রামে। মাঝখান দিয়ে গিয়েছে পূর্ব রেলের ব্যান্ডেল-কাটোয়া রেল লাইন। নদীর পাড় থেকে সেই লাইনের দূরত্বও কোথাও ১০০ মিটার, কোথাও কিছুটা বেশি। রেললাইন পেরিয়ে কয়েক পা হাঁটলেই এসটিকেকে রোডের পাশে দুর্গামন্দির।
স্থানীয় যুবক স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে দুর্গাপুজো আর গঙ্গাপুজো ধূমধাম করে হয়। সরকারি সাহায্য মেলায় কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুজোয় জৌলুস কিছুটা বেড়েছে। অষ্টমীর দিন গোটা গ্রামের মানুষকে খাওয়ানো হয়।’’ তবে একশো বছরের পুরনো এই বারোয়ারি পুজোও একবার বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। মাটির দেওয়াল, টিনের চাল দেওয়া সেই দুর্গামণ্ডপটি ভাগীরথীর ভাঙনে তলিয়ে যায়। তার পর থেকে রাস্তার পাশে গ্রামেরই এক বাসিন্দার দান করা জমিতে নতুন মন্দির তৈরি হয়। বছর তিনেক ধরে অল্পবয়সীরা আরও একটি পুজো শুরু করেছেন।
তবে পুজো আসুক বা অন্য উৎসব ভাঙন আতঙ্ক তাড়িয়ে বেড়ায় জালুইডাঙায়। নদীর ধারেই বাড়ি জয়দেব ঘোষের। তাঁর দাবি, ‘‘চোখের সামনে বাড়ি, জমি সব হারিয়ে যেতে দেখেছি। এখনও রাতে চোখ বুজলেই কানে আসে নদীর গর্জন। মনে হয়, এই বুঝি ধসে গেল বাড়িটা।’’ দুর্গাপুজোতেও আতঙ্ক যায় না তাঁর। তাঁর কথায়, ‘‘ভাঙন মেরামতিতে কাজ হয়নি, বলব না। বেশ কয়েকবার বাঁশের খাঁচা তৈরি করে নদীর পাড়ে ফেলা হয়েছে। তবে তাতে কাজ হয়নি।’’ সম্প্রতি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ১১ কোটি টাকা খরচ করে বিশেষ বস্তা দিয়ে পাড়ের একাংশ বাঁধানো হয়েছে। সেটাও কত দিন চলবে, কয়েক মাস না গেলে বলা যাবে না, দাবি গ্রামবাসীর। গ্রামকে পাকাপাকি বাঁচাতে গেলে রেল এবং রাজ্য সরকারকে যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। কংক্রিটের পাড় বাঁধানো না হলে রেললাইনও তলিয়ে যেতে পারে।
পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিকের আশ্বাস, ‘‘র বিধায়ক স্বপন দেবনাথের চেষ্টায় জালুইডাঙা এলাকায় ভাঙন রোধে ব্যবস্থা হয়েছে। কাজ হয়েছে ১০ কোটি টাকারও বেশি। আশা করছি, আর মানুষকে সমস্যায় পড়তে হবে না।’’
গ্রামে একটি বিশ্রামাগার রয়েছে। সেখানে বসে গল্প করেন বয়স্করা। নদেরচাঁদ ঘোষ, বলরাম ঘোষেরা যদিও ভুলতে পারেন না পুরনো কথা। তাঁরা, ‘‘চোখের সামনে নদী সব কিছু গিলে নিল। দুর্গা মন্দিরটাও তলিয়ে গেল। যাঁরা এখনও আছেন, তাঁরা ভাঙনে কেউ দু’বার ঘর হারিয়েছেন। কেউ বা আরও বেশি। ভাঙন গোটা গ্রামে দারিদ্র্য বাড়িয়েছে।’’ পুজোয় মায়ের কাছে একটাই আর্জি তাঁদের, আর কিছু যেন না হারায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy