কেন্দ্রীয় বাজেটে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় কিছুই প্রাপ্তি হয়নি, দাবি পশ্চিম বর্ধমান জেলা শিল্পাঞ্চলের উদ্যোগপতিদের একাংশের। তবে আয়করে ছাড়ের প্রশংসা করেছেন অনেকে। তাঁরা মনে করছেন, তাতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। বাজারে অর্থের জোগান বাড়বে। পাশাপাশি, ক্যানসারের মতো ওষুধে শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করায় খুশি চিকিৎসকেরাও।
শনিবার বাজেট ভাষণের প্রায় শুরুতেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এমএসএমই-কে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ বলে উল্লেখ করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণের পরিমাণ পাঁচ কোটি থেকে বাড়িয়ে ১০ কোটি করা হয়েছে। এ ছাড়া, ঋণের ক্ষেত্রে নানা ছাড়ের কথাও বলা হয় বাজেটে। এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান দক্ষিণবঙ্গের বৃহৎ বণিক সংগঠন ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সাধারণ সম্পাদক শচীন রায়। তাঁর দাবি, পশ্চিম বর্ধমানে পাঁচ হাজারের কিছু বেশি এমএসএমই সংস্থা আছে। এলাকার রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলি ছাড়াও, ভারী শিল্প সহযোগী, অনুসারী সামগ্রী তৈরি হয় এ সব প্রতিষ্ঠানে। তাই ঋণদানের পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগে সম্প্রসারণে উৎসাহ দেবে। তবে তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ এই বাজেটেএকেবারে বঞ্চিত।’’
আসানসোলের শিল্পোদ্যোগী পবন গুটগুটিয়ার অভিযোগ, ঘোষণা করা হয়েছে দেশে ১২০টি নতুন বিমানবন্দর করা হবে। কিন্তু বার্নপুরের ইস্কো এয়ারস্ট্রিপের আধুনিকীকরণ হয়েছে ২০১৮-য়। কেন্দ্র এখান থেকে অল্প দূরত্বের উড়ান পরিষেবা চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আজও তা হয়নি। তিনি বলেন, “নতুন ঘোষণায় সেটি চালু হবে বলে আশা করতে পারি।” তাঁর আরও অভিযোগ, রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ২০০৮ সালে দামোদরের উপরে একটি সেতু তৈরির জন্য তৎকালীন ইস্পাতমন্ত্রী প্রায় ৫০ কোটি টাকা অনুমোদন করেন। কিন্তু তাআজও হয়নি।
‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের’ সাধারণ সম্পাদক রতন আগরওয়ালের বক্তব্য, “ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগী ও সাধারণ মানুষের জন্য ভাল বাজেট। ব্যবসায়ীদের জন্য চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর নেই। এর পরে যে হারে কর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা সাধারণ ব্যবসায়ীদের জন্য উপকারী।” তাঁর সংযোজন, “নতুন শিল্পোদ্যোগপতিদের জন্য কোনও সিকিওরিটি ছাড়া দু’কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে সিকিওরিটি ছাড়া ঋণের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া, নতুন কর কাঠামোর ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সুদের উপরে কর ছাড়ের সীমা ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লক্ষ টাকা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বহু দিন পরে সরকার ভাল বাজেট নিয়ে এসেছে।”
ক্যানসার-সহ বেশ কয়েকটি জীবনদায়ী ওষুধে পুরোপুরি শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে চিকিৎসক মহল। আসানসোল জেলা হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অমিত মুখোপাধ্যায় জানান, এই ঘোষণায় উপকৃত হবেন ক্যানসার আক্রান্ত ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। তিনি বলেন, “এক জন ক্যানসার রোগীকে বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবা নিতে হলে মাসে ন্যূনতম ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এ বার সেই খরচে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে।” তবে তাঁর দাবি, সরকারি চিকিৎসায় খরচ প্রায় নেইবললেই চলে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)