গত কয়েক মাসে পর পর কয়েকটি বাস দুর্ঘটনা ঘটেছে জেলায়। যেগুলির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাসের অতিরিক্ত গতি ও বেহাল স্বাস্থ্য। পুলিশ মনে করছেন, জেলায় পথ দুর্ঘটনা বাড়ার পিছনে যত্রতত্র ‘হাম্প’ যদি একটি কারণ হয়, তবে অন্যগুলি হল অতিরিক্ত গতিতে যান চলাচল ও হেলমেট না পরার প্রবণতা। ট্র্যাফিক পুলিশ ইতিমধ্যে জেলার বেশ কয়েকটি ‘ব্ল্যাক স্পট’-সহ ৬৮টি জায়গা চিহ্নিত করেছে, যেখানে আলো না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই সব স্থানে সৌর আলোর ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের দাবি, তথ্য-পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পথচারীদের প্রাণ বেশি যাচ্ছে। মোটরবাইক বা অন্য ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক গাড়ির চালকদের পাশপাশি, সাধারণ মানুষের মধ্যে ট্র্যাফিক নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পথ-সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো হবে। জেলার প্রতিটি স্কুল ও কলেজে একটি করে ‘ট্র্যাফিক ক্লাব’ গড়া হবে। শুক্রবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনাসভায় জেলার প্রথম ট্র্যাফিক ক্লাব তৈরি হয়েছে।
জেলাশাসক আয়েষা রানি এ বলেন, “সকলকে সব সময় পথ-সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে। স্কুল, কলেজে ট্র্যাফিক ক্লাবও শুরু করছি, যাতে ছোট থেকেই ট্র্যাফিক-বিধি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে ওঠে।” কয়েক দিন আগে বর্ধমান শহরের কার্জন গেটে পথ-সুরক্ষা সপ্তাহের প্রথম দিন মিছিল হয়। সেখানে জেলাশাসক ছাড়াও পুলিশ সুপার সায়ক দাস পা মিলিয়েছিলেন। মিছিল শেষে জেলাশাসক বলেন “বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশনকে বলব, তাড়াতাড়ি পৌঁছনোর জন্য বাসের গতি বাড়ানোর দরকার নেই। দু’চার মিনিট আগে পৌঁছনোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নেবেন না।”
জেলা ট্র্যাফিক পুলিশ ইতিমধ্যে শহর এলাকায় হেলমেট পরার জন্য অভিযান শুরু করেছে। গ্রাম থেকে শহরে ঢোকার মুখে ‘নাকা’ বসিয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশ। এ ছাড়া, জেলার প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডে ‘গতি নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র’ দেওয়া হয়েছে। গতি মাপাও শুরু করেছে ট্র্যাফিক পুলিশ। এতে অনেক জায়গাতেই পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়ছেন মোটর বাইক ও গাড়ির চালকেরা। পুলিশ সুপার বলেন, “নিজেদের ও পরিবারের স্বার্থে আমাদের সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। এটা সবার দায়িত্ব। সবাইকে অঙ্গীকার করতে হবে।” অভিযানের জেরে হেলমেট পরার প্রবণতা বাড়ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। জেলাশাসককে সভামঞ্চ থেকে বলতে শোনা যায়, ”দেখতে পাচ্ছি, অনেকের মাথায় হেলমেট নেই। পুলিশ জরিমানা করলে হেলমেট পরব, এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।” আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) গোবিন্দ নন্দী বলেন, “পথ-নিরাপত্তা সবার আগে। সময়ে পৌঁছতে হবে ঠিকই, কিন্তু, তা সুরক্ষা-বিধি লঙ্ঘন করে নয়।” (শেষ)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)