তার খোঁজে মন্ত্রী চড়েছিলেন গাছে। জনতা চড়বে কোথায়?
ছাদের এক কোণে যেতে ধরা দিল। সিঁড়ির মুখে এসে দাঁড়াতেই আবার গায়েব!
বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে আছে। কিন্তু রাস্তা পেরিয়ে অফিসে ঢুকতেই চলে গেল!
শিল্প-শহর দুর্গাপুরে এমন সমস্যা নিত্যদিনের। হাতে মোবাইল নিয়ে কেউ নেটওয়ার্ক খুঁজে বেড়াচ্ছেন, এমন ছবি অহরহ দেখা যায় এ শহরে। এমনকী, সিটি সেন্টার বা বিধাননগরের মতো শহরের প্রাণকেন্দ্রগুলিতেও এ দৃশ্য বিরল নয়। কয়েক মাস আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মেঘওয়াল রাজস্থানের বিকানিরে এক গ্রামে গিয়ে মোবাইলের নেটওয়ার্কের খোঁজে মই বেয়ে গাছে চড়েছিলেন। দুর্গাপুরেও কাউকে তেমন কাণ্ড ঘটাতে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কটাক্ষ করেন শহরের অনেকেই।
শহরে ‘ভয়েসকল’ ও ৪-জি পরিষেবা দিয়ে থাকে তিনটি বেসরকারি সংস্থা— ভোডাফোন, এয়ারটেল এবং জিও। বিএসএনএলের ৪-জি পরিষেবা চালু হয়নি। তবে শহর লাগোয়া বা মহকুমার প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে মোবাইল পরিষেবার জন্য বিএসএনএলের উপরে ভরসা রাখেন অনেকে। কিন্তু পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। ঘরে ঢুকে পড়লে ‘নেটওয়ার্ক’ পাওয়াই যায় না, নালিশ করেন অনেকে। প্রত্যন্ত এলাকা তো বটেই, এমন অভিযোগ শোনা যায় শহরের মধ্যেও।
গ্রাহকদের একটা বড় অংশের অভিজ্ঞতা, বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে একটির ইন্টারনেট পরিষেবা বেশ ভাল। কিন্তু তাদের ফোনের ‘নেটওয়ার্ক’ থেকে ‘কল’ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে অন্য প্রান্তের সাড়া পাওয়া যায় না। ‘কল ড্রপ’-এর সমস্যাও আছে। আর অন্য দু’টি বেসরকারি সংস্থার পরিষেবা সম্পর্কে গ্রাহকেরা বলে থাকেন, কখন কোথায় পাওয়া যাবে, বোঝা দায়! তাঁদের অভিযোগ, বিধাননগরে এক মোবাইল সংস্থার ‘নেটওয়ার্ক’ পরিষ্কার। কিন্তু অন্য সংস্থার ‘নেটওয়ার্ক’ গড়বড় করে থাকে। কিন্তু যে়িট বিধাননগরে ভাল, সেটির পরিষেবায় সমস্যায় পড়তে হয় সিটিসেন্টারে। সেখানে অন্যটির যোগাযোগ তুলনায় ভাল। কমলপুর এলাকায় আবার এই দুই সংস্থার নেটওয়ার্কেই সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। শহরের এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রী পুষ্পিতা কর জানান, নেটওয়ার্কের খোঁজে পরিষেবা সংস্থা পাল্টে-পাল্টে তিনি হতাশ হয়ে হাল ছেড়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি পরিষেবার সাহায্য নিয়ে নেটওয়ার্ক বদল করি। কোনও লাভ না হওয়ায় অন্য নেটওয়ার্কের নতুন একটি সিম নিই। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। কল ড্রপ আর কথা কেটে-কেটে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি মেলেনি।’’ এক বেসরকারি বিমা সংস্থার আধিকারিক দেবরাজ রায়ের কথায়, ‘‘এক-এক সময় খুব অস্বস্তিতে পড়ি। মুম্বই থেকে বস কখন ফোন করেন, তখন যেখানে থাকব সেখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে কি না— সেই চিন্তাতেই সময় কেটে যায়। বস তো আর বুঝবেন না, এখানে সমস্যাটা কেমন!’’
সংস্থাগুলির অফিসে বারবার জানিয়েও ফল হয়নি, দাবি গ্রাহকদের। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ সংস্থাগুলির আধিকারিকেরা। ভোডাফোনের দুর্গাপুর জোনের এক কর্তা যেমন জানান, শহরের কোন এলাকায় কেমন ‘কাভারেজ’, তা তাঁদের সাইটে চারটি ভাগ করে দেখানো আছে। গ্রাহকেরা সংযোগ নেওয়ার আগে তা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এয়ারটেলের এক আধিকারিকেরও বক্তব্য, ‘‘গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। তাই শহরের কোথায় ৪-জি নেটওয়ার্ক, কোথায় মোবাইল টাওয়ার (বেস ট্রান্সিভার স্টেশন বা বিটিএস) আছে তা ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট করে বলে থাকি।’’ জিও-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পরিষেবা উন্নত করার প্রক্রিয়া চালু রেখেছি।’’ বিএসএনএলের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘গ্রাহকেরা নির্দিষ্ট অভিযোগ জানালে সমস্যা মেটাতে সুবিধা হবে।’’ তবে সব ক’টি সংস্থার আধিকারিকদের দাবি, দুর্গাপুরের মতো শহরে পর্যাপ্ত ‘বিটিএস’-এর ব্যবস্থা করে পরিষেবা শুরু করা হয়েছিল। পরে গ্রাহক বেড়েছে। নতুন বিটিএস বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। তবে কাছাকাছি ‘বিটিএস’ থাকলেও যে নেটওয়ার্ক পেতে সমস্যা হতে পারে, তা মেনেছে সংস্থাগুলি। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে গ্রাহকের বাড়িতে কর্মী পাঠিয়ে সমাধানের ব্যবস্থা রয়েছে, দাবি তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy