রোগাক্রান্ত: বাদামি শিস। নিজস্ব চিত্র
আমন ধানের ঝলসা রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এর ফলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। আচমকা এই রোগের সংক্রমণের ফলে ফলন নিয়ে চিন্তিত চাষিরা।
কালনা মহকুমার পাঁচ ব্লকে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। যার মধ্যে মন্তেশর ব্লকেই চাষ হয় প্রায় ২২ হেক্টর জমিতে। ধানের শিষ বেরিয়ে গিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে চাষিদের চিন্তা ফেলেছে ঝলসা রোগ। চাষিরা জানান, ধান গাছের পাতা ও কাণ্ডে প্রথমে বাদামি রঙের ছোট-ছোট দাগ দেখা যাচ্ছে। পরে দাগগুলি এক হয়ে গোটা গাছটি হলুদ হয়ে যাচ্ছে। এই রোগের প্রকোপ বাড়লেই গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে।
কালনা ১ ব্লকের সুলতানপুর পঞ্চায়েতের চাষি বোরকো হাঁসদা বলেন, ‘‘প্রথমে ছোট এলাকা, পরে জমির নানা জায়াগায় রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ছে।’’ আর এক ধান চাষি সমীর মজুমদার দাবি করেন, ‘‘বেশির ভাগ জমিতেই ধান গাছের বয়স দুই থেকে আড়াই মাস। এই সময়ে ঝলসা রোগ দমন না করতে পারলে ফলন অনেকটা কমে যেতে পারে। কী ভাবে তা করা যায়, সে নিয়ে দিশেহারা অনেক চাষিই।’’
ঝলসা রোগের প্রকোপের কথা স্বীকার করেছে কৃষি দফতরও। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ছত্রাকঘটিত এই রোগ শুধু পাতা ও কাণ্ডে নয়, ছড়াতে পারে শিস ও দানায়। রোগটি বীজ ও বাতাসে বাহিত হয়। মেঘলা ও আর্দ্র আবহাওয়া চলতে থাকলে রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। রাতের দিকে শিশির পড়লে দ্রুত রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। ধানের শিসে ঝলসা দেখা দিলে নীচের অংশে প্রথমে কালো দাগ দেখা দেয়। পরে শিসে কোনও দাগ মেলে না। শিষ বেরোনোর মুহূর্তে রোগ দেখা দিলে গোড়ায় সংক্রমণ বেশি হয়। সেক্ষেত্রে শিসটি নষ্ট হয়ে যায়।
কৃষিকর্তাদের নিদান, যেহেতু রোগটি বীজবাহিত তাই চাষের শুরুতেই বীজ শোধনের দরকার রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে এক গ্রাম কার্বেনডাজিম বা তিন গ্রাম ট্রাইসাইক্লাজোল মিশিয়ে শোধন করতে হবে। জমিতে বেশি পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। রোগ দেখা দিলে কমাতে হবে নাইট্রোজেন জাতীয় সার। প্রতিশেধক হিসেবে আক্রন্ত জমিতে এক লিটার জলে ট্রাইসাইক্লাজল ৭৫% প্রতি গ্রামে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়াও ট্রাইসাইক্লাজল ও ম্যানকোজেবের মিশ্রণ ২ গ্রাম বা হেক্সাকোনাজল দেড় মিলিগ্রাম অথবা ট্রাইফলক্সিস্টবিন এবং টেবুকোনাজল এক গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করলে উপকার হবে।
জেলার এক সহ-কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘জমিতে সকালের শিশির শুকোনোর পরেই স্প্রে করতে হবে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রয়োজন ১০০ লিটার স্প্রে। স্প্রে করার সময়ে আঠা মেশাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy