এখন এমনই হাল প্রাথমিক স্কুলটির। নিজস্ব চিত্র
ওড়িয়াভাষীদের জন্য তৈরি হয়েছিল উৎকলমণি পণ্ডিত গোপবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু পড়ুয়া নেই এক জনও। শিক্ষা দফতরের দাবি, পড়ুয়ার অভাবে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ, ওই স্কুলের চার জন শিক্ষকই এখনও বন্ধ স্কুলের শিক্ষক হিসেবে মাইনে পান বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, এ-ও দাবি, রাজ্য থেকে পাঠ্যবই না আসার কারণেই পড়ুয়ারা এখানে পড়াশোনা করার উৎসাহ হারিয়েছিল।
ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি হাইস্কুলের বদলি সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু শিক্ষা দফতরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, পড়ুয়া অত্যন্ত কম থাকলে স্কুলের অনুমোদন প্রত্যাহার করে নিতে হবে। অযথা শিক্ষক পুষে লাভ নেই। যেখানে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, সেখানে শিক্ষকদের পাঠানোর পরামর্শ দেন তিনি। এই প্রেক্ষিতে খাসকেন্দার এই স্কুলটি নিয়ে আলোচনা রয়েছে শিক্ষক মহলে।
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০০ সালে জামুড়িয়ার খাসকেন্দায় একটি ঘরে উৎকল সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের জন্য তাদের মাতৃভাষা, ওড়িয়ায় শিক্ষা দিতে স্কুলটি চালু হয়। পরে ২০০৬-এ কেন্দা ফাঁড়ির সামনে স্কুলের নিজস্ব ভবন তৈরি হয়। কিন্তু ২০১৭ থেকে পড়ুয়া সংখ্যা একেবারে তলানিতে ঠেকে। পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যায়। জেলার স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) দেবব্রত পাল বলেন, “পড়ুয়াদের অভাবে স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।”
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ছিলেন রোহিত বেহেড়া। তাঁকে ২০২০-তে শ্যামলা প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া, আরও এক শিক্ষক এবং দু’জন পার্শ্বশিক্ষক ওড়িয়া মাধ্যমের ওই স্কুলটিতে ছিলেন। প্রত্যেককেই বদলি করে দেওয়া হয়েছে। রোহিত অবশ্য জানাচ্ছেন, তাঁরা মাইনে পান পুরনো স্কুলের শিক্ষক হিসেবেই।
কিন্তু পড়ুয়া সংখ্যা কমল কেন, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। রোহিতের ব্যাখ্যা, “২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকার পাঠ্যবই পাঠানো বন্ধ করে দেয়। তার পরে পড়ুয়া সংখ্যা কমতে থাকে।” সূত্রের দাবি, ২০১৮-য় তৎকালীন স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন, পাঠ্যবই না আসার ফলেইপড়ুয়া আসছে না। অথচ, স্থানীয় সূত্রে দাবি, ওড়িয়া ভাষায় পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক পড়ুয়ার সংখ্যা এলাকায় কম নয়। এক সময় ওই স্কুলটিতে খাসেকন্দা, নিউকেন্দা, সিএল জামবাদ, বহুলা-সহ সাতটি খনি এলাকা থেকে পড়ুয়ারা আসত। বর্তমানে উপায় না থাকায় উৎকল সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা হিন্দি অথবা বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করে। বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দা সন্তোষ প্রধান, সুরেন্দ্র গৌড়েরা বলেন, “ইচ্ছে থাকলেও ছেলেমেয়েদের ওড়িয়া ভাষায় পড়াতে পারছি না। ছেলেমেয়েদের বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াতে হচ্ছে।” তাঁদের সংযোজন: “সরকার বই পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল। ওড়িয়া বইপত্র এলাকায় কিনতে তেমন পাওয়া যায় না। এই সমস্যার কারণে ওই স্কুলে পাঠানো সম্ভব হয়নি পড়ুয়াদের।”
কিন্তু কেন পাঠ্যবই আসা বন্ধ হয়? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, এটি রাজ্যের সিদ্ধান্ত। ফলে, জেলার ভিত্তিতে কিছুকরার ছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy