বছরের বেশির ভাগ সময়েই জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলের আকাল একটা বড় সমস্যা। সেই সমস্যার হাল বের করতে এ বার থেকে পুর এলাকায় বাড়ি তৈরি করলে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আসানসোল পুরসভা। পরীক্ষামূলক ভাবে ইতিমধ্যেই জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা শুরু করেছেন ইসিএল কর্তৃপক্ষও।
প্রশাসনের সূত্রে খবর, সম্প্রতি আসানসোল পুরসভায় আয়োজিত উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি বিশেষ বৈঠকে জেলার পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলিকে জল সংরক্ষণের বিষয়ে জোরদার পদক্ষেপ করা এবং প্রচার অভিযানে নামার পরামর্শ দিয়েছেন বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘জল সংরক্ষণ করে রাখলে শুষ্ক এলাকায় দৈনন্দিন কাজ মেটানো সম্ভব। এতে জলের আকালও আর থাকবে না।’’ জেলাশাসকের পরামর্শ এ যাবৎ অবশ্য কেউ বাস্তবায়িত করতে পারেনি।
তবে বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে আসানসোল পুরসভা। পুরসভা সুত্রে জানা গিয়েছে, এ বার থেকে বাড়ি বা বহুতল তৈরি করতে গেলে সেখানে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকতেই হবে। তা না হলে বাড়ির নকশা অনুমোদন করা হবে না। জল সংরক্ষণ নিয়ে আগ্রহী করে তুলতে বাড়ি মালিকদের বিশেষ ছাড়া দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানান পুর কর্তৃপক্ষ।
কী ভাবে বাড়িতে জল সংরক্ষণ করা সম্ভব? পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার সুকোমল মণ্ডল জানান, প্রাথমিক ভাবে নিজের জমিতেই একটি জলাধার বানাতে হবে। তারপরে বাড়ির ছাদে বিশেষ চ্যানেল তৈরি করতে হয়। যাতে করে পাইপলাইনের মাধ্যমে বৃষ্টির জল ওই জলাধারে জমা হয়। পরে বাড়ির দৈনন্দিন কাজে সেই জল ব্যবহার করা যাবে। সুকোমলবাবুর মতে, ‘‘শহরের বহুতল ও কারখানাগুলিতে সাধারণত জলের চাহিদা বেশি থাকে। এই ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য বহুতল ও কারখানা মালিকদেরও পদক্ষেপ করার পরামর্শ দেওয়া হবে।’’ মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির বক্তব্য, ‘‘নাগরিকদের ভালর জন্যই এই পদক্ষেপ করা।’’ পুরসভা সূত্রে খবর, জল সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে পরবর্তী বোর্ড সভায় প্রস্তাব রাখা হবে।
জল সংরক্ষণের জন্য মেয়রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল। ফেডারেশন অফ সাউথবেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের কার্যকরী সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান বলেন, ‘‘ভীষণ ভাল উদ্যোগ। সবরকম ভাবে পাশে থাকছি আমরা।’’ পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তেরও দাবি, ‘‘এই সিদ্ধান্ত বাধ্যতামূলক হলে অদূর ভবিষ্যতে শহরবাসীই উপকৃত হবেন।’’
তবে শিল্পাঞ্চলে জল সংরক্ষণের পদক্ষেপ এই নতুন নয়। ২০০৮ সালে জেলা প্রশাসন দিল্লির সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউটের কারিগরী সহায়তায় ১১ লাখ টাকা খরচ করে সালানপুরে তৈরি করেছিল ‘বৃষ্টিবাড়ি’। সালানপুরের ওই ‘বৃষ্টিবাড়ি’ থেকে বাসিন্দাদের জল সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই ‘বৃষ্টিবাড়ি’ বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এ বারেও তেমনটা যাতে না হয়, তার জন্য দাবি জানিয়েছেন শহরের পরিবেশপ্রেমীরা।
জল সংরক্ষণের বিষয়ে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে ইসিএল। সংস্থার সোদপুর এরিয়া কার্যালয়ে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরিয়ার জিএম অরুণকুমার ঝা বলেন, ‘‘আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে এটি শুরু করা হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে আরও কয়েকটি খনি কার্যালয়ে জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’ ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, খনি এলাকায় এমনিতেই জলের স্তর বেশ নীচে। প্রতিনিয়ত সেই জল তুলে নেওয়ায় ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং ধসের সম্ভাবনা বাড়ছে। খনি কার্যালয়ে জল সংরক্ষণ কী ভাবে হচ্ছে? অরুণবাবু জানান, কার্যালয়ের ছাদে বিশেষ উপায়ে চ্যানেল বানিয়ে বৃষ্টির জল পাইপলাইনের মাধ্যমে মাটির তলায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy