Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
আধার নিস্ক্রীয় করার চিঠি মেমারির কিছু এলাকাতেও
Aadhar Card Issue

‘অনুপ্রবেশকারী’ তকমা মেটার আগেই নতুন ভয়

২০২২ সালের জুনে পরিযায়ী হয়ে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন তেলি গ্রামের পলাশ অধিকারী ও তাঁর স্ত্রী শুক্লা। দু’মাসের মাথায় সেখানকার পুলিশ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে তাঁদের গ্রেফতার করে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেমারি, জামালপুর শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩২
Share: Save:

এখনও ‘বাংলাদেশি’ তকমার ঘা শুকোয়নি জামালপুরের তেলি গ্রামের। তার মধ্যে ওই গ্রামের অন্তত ৬০ জন বাসিন্দার কাছে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার শর্তপূরণ করতে না পারায় আধার নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে এই মর্মে চিঠি পৌঁছেছে। এর ফলে নতুন করে ভয় ধরেছে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের মনে। তাঁদের দাবি, গ্রামের এক দম্পত্তিকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বেঙ্গালুরুতে কর্মরত অবস্থায় সেখানকার পুলিশ ধরেছিল। আইনি ঝামেলা মিটিয়ে সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এখনও আদালতে নিয়মিত চক্কর মারতে হয়। আধার নিষ্ক্রিয় করার বিষয়টিতেও ফেঁসে যাবেন কি না, প্রশ্ন তুলেছেন চিঠি প্রাপকেরা।

মেমারির বিভিন্ন উদ্বাস্তু কলোনি এলাকারও অন্তত তিনশো জন আধার নিষ্ক্রিয় করার চিঠি পেয়েছেন।

২০২২ সালের জুনে পরিযায়ী হয়ে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন তেলি গ্রামের পলাশ অধিকারী ও তাঁর স্ত্রী শুক্লা। দু’মাসের মাথায় সেখানকার পুলিশ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে তাঁদের গ্রেফতার করে। জেলে যেতে হয় তাঁদের শিশুপুত্রও। দীর্ঘ আইনি লড়াই করতে গিয়ে অধিকারী পরিবার কার্যত নিঃস্ব হয়ে পড়েন। ছেলে, বউমা ও নাতিকে ছাড়াতে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে দীর্ঘ দিন ছিলেন পঙ্কজ অধিকারী। সেখানেই অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। প্রায় ১০ মাস পরে গত জুনে পলাশ শর্তাধীন জামিন পান। জামিন পেতে বাড়ির জমির দলিল, পরচা, জামালপুর থানা, বিডিও, এসডিও (বর্ধমান দক্ষিণ)-র কাছ থেকে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার শংসাপত্র আদালতে জমা দিতে হয় তাঁকে। আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ডের সঙ্গে ওই সব নথি ঠিক কি না, বেঙ্গালুরু থেকে পুলিশ এসে খতিয়ে দেখে গিয়ে রিপোর্ট জমা দেয়।

পলাশ বলেন, “জামিন পেলেও অনুপ্রবেশের অভিযোগ থেকে এখনও মুক্তি পাইনি। বাড়িতে বৃদ্ধা মা রয়েছেন। সব সময় চিন্তায় থাকেন। তবে আধার নিষ্ক্রিয় করার কোনও চিঠি আমাদের কাছে আসেনি। আমরা পুরোপুরি এদেশীয়।”

ওই গ্রামে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বাস। চিঠি পেয়েছেন ৬০ জন। তাঁদের কয়েক জনের দাবি, ‘‘চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে ঘুরিয়ে অনুপ্রবেশকারী হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বংশ পরম্পরায় এ দেশের বাসিন্দা হয়েও পলাশদের মাথায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ ঝুলছে, সেখানে অন্য দেশ থেকে আসা বাসিন্দাদের কী হতে পারে, ভেবেই ভয় লাগছে।’’ যোগেন বিশ্বাস, স্মৃতি মণ্ডল, মানবী বিশ্বাস, লাভলি বিশ্বাসদের দাবি, “জন্ম থেকে মৃত্যু, সবেতেই আধার নম্বর প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পাশে আছেন, এটাই ভরসা।’’

জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মল্লিকা মণ্ডল বলেন, “চিঠি পেলেও কেউ মুখ খুলছেন না!”

মেমারির বাগিলা, দেবীপুর, নিমো ২ পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি উদ্বাস্তু কলোনি এলাকার বাসিন্দাদের কাছেও শনিবার থেকে আধার নিষ্ক্রিয় করার চিঠি পৌঁছচ্ছে। অসীম মণ্ডল, অনিমা রায় মণ্ডল, রিতা রায়, শ্রেয়া রায়দের কথায়, “এখনও সব ঠিক আছে। কিন্তু আধার নিষ্ক্রিয় হওয়া শুরু হলেই বিপদে পড়ে যাব। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা শুধু নয়, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, চাকরিতেও সমস্যা হবে।”

মেমারি ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ওঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। চিন্তার কিছু নেই। আমরাও কাদের বাড়িতে চিঠি আসছে, সেই সমীক্ষা করব বলে ঠিক করেছি।”

বিজেপির মেমারি বিধানসভার আহ্বায়ক শৈলেন বিশ্বাসেরও দাবি, “চিঠি প্রাপকদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা এ নিয়ে রাজনৈতিক ভাবেও প্রচার করব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jamalpur Memari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy