Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

জীবন থেকে বাজার, পড়ছে প্রভাব

বৃদ্ধ চাষি মণিরুল শেখ জানান, একসময়ে ফসল বিক্রির টাকায় পাকা বাড়ি তুলেছেন। কেনা হয়েছে মোটরবাইকও। কিন্তু এখন চাষের খরচই উঠছে না।

চলছে চাষের কাজ। কালনার বাঘনাপাড়ায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

চলছে চাষের কাজ। কালনার বাঘনাপাড়ায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৯ ০০:৩৬
Share: Save:

দিনে দিনে কমছে চাষের আয়। এই পরিস্থিতিতে জেলার নানা প্রান্তের চাষিরা জানান, দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব পড়ছে। চাষ-পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে জেলার সামাজিক ও গ্রামীণ অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রেও, দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।

কালনা-বৈঁচি রোডে একটি চায়ের দোকানে বসে বৃদ্ধ চাষি মণিরুল শেখ জানান, একসময়ে ফসল বিক্রির টাকায় পাকা বাড়ি তুলেছেন। কেনা হয়েছে মোটরবাইকও। কিন্তু এখন চাষের খরচই উঠছে না। তাঁর দাবি, ‘‘পরিস্থিতি এমন যে, অনেকেই জমি বিক্রি করার কথাও ভাবছেন!’’ চাষের আয়ের প্রভাব পড়ায় নাতির ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের খরচ জোগাড় করতে নাভিশ্বাস উঠছে, জানান মেমারির চাষি হরেকৃষ্ণ ঘোষ। তাঁদের মতে, অতীতে চাষের আয়েই বদলে গিয়েছে জীবনযাত্রা। কিন্তু গত তিন বছরের পরিস্থিতি যেন সব কিছুকেই সংশয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে।

সংশয়ে গ্রামের নানা সমবায়গুলিও। চাষের সামগ্রীর পাশাপাশি চাষি ঋণও পান নানা সমবায় থেকে। অতীতে চাষ ভাল হওয়ায় সমবায়গুলির পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। মাঠে মাঠেও গভীর নলকূপ, গুদামঘর তৈরি হয়েছে। কিন্তু কালনার এক সমবায়ের কর্তা ‘শিয়রে সঙ্কট’ দেখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গত তিন বছরে পরিস্থিতি এমনই যে, চাষিদের একাংশ ঋণ শোধ করতে পারছেন না। সমবায়ের আয় কমছে। চাষেও নতুন পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে না।’’

এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন জেলার একশোর বেশি হিমঘর কর্তৃপক্ষও। তাঁরা জানান, টানা তিন বছর ধরে মজুত আলুর দাম তলানিতে ঠেকায় পুঁজিতে টান পড়ছে। তাঁদের দাবি, ‘‘মজুত আলুর উপরে অনেক চাষি ও ব্যবসায়ী ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু আলুর দর না মেলায় অনেকেই ঋণের টাকা মিটিয়ে আলু নিতে পারেননি। ওই আলু নিলামে বিক্রি করেও বকেয়া টাকা মেটেনি।’’ এই পরিস্থিতিতে তাঁদের ব্যাঙ্ক-ঋণ বাড়ছে, দাবি বেশ কয়েকটি হিমঘর কর্তৃপক্ষের।

এখানেই শেষ নয়। চাষাবাদের করুণ পরিস্থিতির আঁচ পড়ছে নানা বাজারেও। শপিংমল থেকে শুরু করে জুতো, জামাকাপড়, মুদিখানা-সহ নানা ধরনের দোকানের ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘‘গত দু’-তিন বছরে নজরে পড়ার মতো ক্রেতা কমেছে।’’ সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁতিরাও। সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রাম, শ্রীরামপুর, পাটুলির মতো এলাকাগুলিতে ফি বছর পুজোর আগে কয়েক কোটি টাকার তাঁতের শাড়ির ব্যবসা হয়। পূর্বস্থলীর তাঁত ব্যবসায়ী অমিয় দেবনাথ বলেন, ‘‘পুজোর মাস তিনেক আগে থেকে তাঁতের শাড়ির ভাল চাহিদা থাকে। অনেক দোকানদার আগেভাগে নকশাও জানিয়ে দেন। এ বার তাঁতের শাড়ির চাহিদা কিন্তু বেশ কম।’’ কেন এই হাল? কালনার বস্ত্র-ব্যবসায়ী গোবিন্দ দেবনাথের দাবি, ‘‘চাষিদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই। গত বছর শারদোৎসব, ইদ-সহ নানা উৎসবের সময়েও বাজারের পরিস্থিতি ভাল ছিল না। এ বার তো চার দিকে চাষের যা হাল তাতে পুজোয় বেশি মালপত্র আনব কি না, ভাবছি।’’ বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ীর আবার দাবি, দোকানে এসে গ্রামের কয়েক জন পুরনো ক্রেতা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ধারে পুজোর জামাকাপড় বিক্রি করার জন্য আর্জি জানিয়েছেন!

এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সময়োপযোগী হতে হবে চাষিদের, পরামর্শ কৃষি বিশেষজ্ঞদের। জেলার এক সহ কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘খরচ কমাতে চাষিরা আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার করুন। মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করতে হবে। এমন জাতের ফসল চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে, যেটির ভাল বাজারদর রয়েছে। বাড়াতে হবে সরু ধানের চাষ। বাড়াতে হবে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের এলাকাও।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers Crops
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy