কালনায় মেলা। নিজস্ব চিত্র
কোনও বছর কাঁকসার গড়-জঙ্গল। আবার কোনও বছর বীরভূমের কোনও প্রত্যন্ত গ্রামের কোনও জায়গার নাম বলে দেন ‘দেয়াসী’ (যাঁদের উপর শিবের ভর হয়)। তাঁর কথা মতো ঢাকঢোল বাজিয়ে যাওয়া হয় সেই জায়গায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় গাছ। যার কোনও ডালে ফুটে আছে কদম ফুল। সেই ফুল পাড়ার আগে গাছকে পুজো করা হয়। এরপর ফুল পেড়ে ফের শোভাযাত্রা করে এসে পুজোয় বসা হয়। লোকবিশ্বাস এমনটাই।
বছরের পর বছর ধরে এই প্রথা মেনেই হয়ে আসছে আউশগ্রামের ধনকোড়ার শিবের গাজন। আর এই গাজনকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠে গোটা গ্রাম। হাজার হাজার ভক্ত সমাবেশ হয়। কলকাতা, ঝাড়খণ্ড, দুর্গাপুর, আসানসোল থেকেও লোকজন আসেন গাজন দেখতে।
শিবের নাম ‘ধনেশ্বর’। অনুমান, এই নাম অনুসারেই গ্রামের নাম হয়েছে ধনকোড়া। স্থানীয় ক্ষেত্র সমীক্ষক রাধামাধব মণ্ডল জানান, আগে এই গ্রামের নাম ছিল ‘শিবপুর’। কুনুরের অববাহিকায় এই গ্রামের চাষিরা আলবাঁধার কাজ করার সময় এই শিবলিঙ্গ বের হয়। যেহেতু মাটি থেকে নিজে নিজেই এই শিবলিঙ্গ বের হয়, সে জন্য একে ‘অনন্তলিঙ্গ’ বলা হয়। রাধামাধববাবুর কথায়, ‘‘এই পুজো দু’শো, আড়াইশো বছরেরও পুরনো। তখন থেকেই এই শিবের পুজো হয়ে আসছে।’’
শিবের পুরোহিত গ্রামেরই কুমুদরঞ্জন মল্লিক জানান, চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন সন্ধ্যার সময় দেয়াসীর ‘ভর’ হয়। সেই ভরের সময় তিনি জানিয়ে দেন কোথায় গেলে কদম ফুল পাওয়া যাবে। সাধারণত ভরা বর্ষায় কদম ফুল ফোটে। কিন্তু এই গ্রীষ্মের সময় কদম ফুল দেখা যায় না। তা-ও আবার যে ডালে কদম ফুল থাকে সেটা সাধারণত শুকনো বা মরা ডাল হয়। এটাই এই শিবের গাজনের বিশেষত্ব। বছরের পর বছর এটাই এখানে হয়ে আসছে। কখনও গ্রামের মধ্যে, কখনও আশপাশের গ্রামে সেই গাছের সন্ধান পাওয়া যায়। কোনও বার অনেক দূরের কোনও জায়গা থেকেও ফুল পেড়ে আনতে হয়। সেই ফুল এনে হোমে উৎসর্গ করা হয়।
লোকবিশ্বাস মতে, এই ফুল গ্রামের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সূচক। ফুল বড় বা ছোটো হওয়ার উপর নির্ভর করে সেই বছর গ্রামের আর্থিক উন্নয়নের ধারা। গাজনের পনেরো দিন আগে থেকেই শুরু হয় রামায়ন পালাগান। এটা চলে গাজনের শেষ দিন পর্যন্ত। অনেকেই দেখেছেন, মাঝেমধ্যেই শিবলিঙ্গ জড়িয়ে থাকে বিষধর সাপ। লৌকিক-অলৌকিক, বিশ্বাস-ভক্তি মিশেলে এই গাজনকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠেন গ্রামবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy