Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নাছোড় জেদেই দশমে সফল হাসমত, রহেল

বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার মিশন থেকে আসা ফোনেই ছোট ছেলের রেজাল্টের খবর পান মাহমুদা বেগম। তিনি বলেন, “মিশন থেকে ফোনে বলা হয়, হাসমত দ্বিতীয় হয়েছে। আমরা বুঝতেই পারিনি ও রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে।’’

বাঁ দিক থেকে, হাসমত ও রহেল। নিজস্ব চিত্র

বাঁ দিক থেকে, হাসমত ও রহেল। নিজস্ব চিত্র

প্রদীপ মুখোপাধ্যায় ও সুচন্দ্রা দে
আউশগ্রাম ও কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

দিনদিন পড়াশোনা খারাপ হচ্ছে বলে বার তিনেক ‘গার্জেন কল’ হয়েছিল। মিশনে আর পড়ানো হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাবাকে। কোনও রকমে শেষ বারের মতো ছেলের পড়ার সুযোগ চেয়ে আর্জি জানান তিনি। বাবার দেওয়া আর্জির মুচলেকা জেদ বাড়িয়ে দেয় ছেলের। মাদ্রাসা দশম শ্রেণির পরীক্ষায় বাঁকুড়া সম্মিলনী হাই মাদ্রাসা থেকে ৭৫৭ নম্বর পেয়ে রাজ্যে যুগ্ম দ্বিতীয় হয়েছে আউশগ্রামের মহম্মদ হাসমত আলি শাহ্‌।

বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার মিশন থেকে আসা ফোনেই ছোট ছেলের রেজাল্টের খবর পান মাহমুদা বেগম। তিনি বলেন, “মিশন থেকে ফোনে বলা হয়, হাসমত দ্বিতীয় হয়েছে। আমরা বুঝতেই পারিনি ও রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে।’’ হাসমতের বাবা মহম্মদ ইয়াসিন শাহ্‌ মসজিদে ইমামের কাজ করেন। তিনি জানান, দুই ছেলে, দুই মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে ছ’জনের সংসার। আর্থিক স্বচ্ছলতা কোনও দিনই ছিল না। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে পড়ানোর পরে স্থানীয় পিচকুড়ি তাওহিদ মিশনে ভর্তি করেন হাসমতকে। পরে অর্থাভাবে সেখানেও পড়াতে পারেননি। সপ্তম শ্রেণিতে বাঁকুড়ার মাদ্রাসায় ভর্তি হয় হাসমত। সেখানে থেকে কম খরচে চলছিল পড়াশোনা। মাদ্রাসা সূত্রে জানা গিয়েছে, নবম শ্রেণি পর্যন্ত গড়পরতা রেজাল্ট ছিল হাসমতের। দশম শ্রেণির প্রথম সেমিস্টারেও ৭৮ শতাংশ নম্বর পায় সে। পরে টেস্টে ৯১ শতাংশ নম্বর মেলে। মিশনের ইনচার্জ শেখ মর্তুজা আলম বলেন, “আমরা নানা ভাবে ওর মনের জোর বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত কাজে এসেছে।”

বর্তমানে আল আমিন মিশনের গলসি শাখায় একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে হাসমত। রেজাল্টের খবর পেয়েও ক্লাস কামাই করেনি সে। বাড়িও যায়নি। ফোনে ওই কিশোর বলে, ‘‘এলাকায় চিকিৎসা পরিষেবার খুব সমস্যা। তাই ডাক্তার হতে চাই।’’ ক্রিকেট খেলতে এবং গল্পের বই পড়তে ভালবাসে সে। কুইজ়ের প্রতি রয়েছে ভীষণ ঝোঁক। দৈনিক নিয়মিত ঘন্টা সাতেক পড়ত বলে জানিয়েছে সে। হাসমতের দিদি তাহেরা খাতুন বলেন, ‘‘পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি এসে ভাই একটা কাগজে লিখে দিয়েছিল ৯৫ শতাংশ নম্বর পাবে। ও পেয়েছে ৯৪ শতাংশের কিছুটা বেশি।’’ এ দিন সেই কাগজের টুকরোটাই পাড়ার লোককে দেখাচ্ছিলেন তিনি। খুশি ভাসছিল চোখে-মুখে।

মাদ্রাসার দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৭৪৫ নম্বর পেয়ে জেলায় নজর কেড়েছে কাটোয়ার পাঁচপাড়া হাই মাদ্রাসা ছাত্র রহেল শেখও। কাটোয়ার পেঁকুয়া গ্রামের বাসিন্দা রহেল অঙ্কে পেয়েছে ৯৬। সবচেয়ে বেশি নম্বর ৯৯ পেয়েছে ইতিহাসে। ওই ছাত্রের বাবা শেখ রেজাউল করিম চাষবাসের কাজ করেন। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে মেজ রহেল। ওই ছাত্র বলে, ‘‘বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষক হতে চাই।’’ ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আশিকুর রহমান জানান, এ বছর একশো জন দশম শ্রেণির পরীক্ষা দিয়েছিল। তার মধ্যে ২৫ জন প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘রহেলের পরবর্তী পড়াশোনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE