অরক্ষিত: নানা ওয়ার্ডে ঢোকার মুখেই দেখা মেলে না নিরাপত্তাকর্মীর। নিজস্ব চিত্র
গাড়িতে চড়ে এসে জনা আঠেরো লোক অনায়াসে ঢুকে পড়েছিলেন হাসপাতালে। চড়াও হন চিকিৎসকদের উপরে। ক্যাম্প থেকে পুলিশকর্মীরা যতক্ষণে পরিস্থিতি সামাল দিতে এলেন, গোলমাল বেধে গিয়েছে।
শিশু ওয়ার্ডে পরিজনদের ভিড়ের চোটে পা রাখার জায়গা নেই। ওয়ার্ড ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলায় শুরু হল ক্ষোভ-বিক্ষোভ। বচসা থেকে হাতাহাতিতে জখম হলেন নিরাপত্তাকর্মী।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমন অশান্তির ঘটনা ঘটে চলেছে প্রায়ই। কর্মী ও চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের মতে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী না থাকাই এর কারণ। যথেষ্ট রক্ষী থাকলে অপ্রীতিকর অনেক পরিস্থিতিই এড়ানো যাবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
মন্তেশ্বরের এক শিশুর মৃত্যুর দু’দিন পরে বৃহস্পতিবার কিছু পরিজন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চড়াও হন। তাঁদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তুলে টানা ২৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি করেন হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁ লিখিত আশ্বাস দেওয়ার পরে শুক্রবার বিকেলে কর্মবিরতি তোলেন তাঁরা। তবে তাঁদের অভিযোগ, নিরাপত্তার গাফিলতির জন্য বিনা বাধায় রোগীর পরিজনেরা হামলা চালাতে পারে। রাতে হাসপাতাল কার্যত অরক্ষিত থাকে। সেই সময়ে মহিলা চিকিৎসকেরা ডিউটি করতে রীতিমতো ভয় পান। এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘‘আগেও রোগীর পরিজন, এমনকী হাসপাতালের কিছু কর্মীও চড়াও হয়েছেন। কয়েক বছর ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়ে এলেও কোনও কাজ হয়নি। তাই এত ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’’
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা ফেলে রাখা হয়েছে কেন? হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জরুরি বিভাগ ছাড়াও রাধারানি ভবন, বিজয়চন্দ ভবন-সহ ১৫টি ভবন রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই ২৪ ঘণ্টা রোগী ভর্তি চলছে। রয়েছে বহির্বিভাগ। সব মিলিয়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজার মানুষের যাতায়াত হাসপাতালে। অথচ, নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র ৩৬ জন। প্রয়োজনে তাঁদের মধ্যে থেকেই অনাময় হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে রক্ষী পাঠাতে হয়। তবে আগামী ফেব্রুয়ারির গোড়া থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে চলেছে বলে সুপার উৎপলবাবুর দাবি। জানা গিয়েছে, প্রায় দেড় বছর ধরে আর্জি জানিয়ে ৮ জন সুপারভাইজার ও ২৮৪ জন নিরাপত্তাকর্মীর অনুমোদন মিলেছে। তার মধ্যে ৫০ জন মহিলা নিরাপত্তাকর্মীও থাকবেন। সুপার বলেন, ‘‘অনেক আগেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যেত। কিন্তু দরপত্রে যোগ দেওয়া ঠিকাদার গোষ্ঠীগুলি ঠিক মতো নথি জমা না করায় বিষয়টি পিছিয়ে গিয়েছে।’’ ২৬ ডিসেম্বর ফের দরপত্র খোলা হবে।
হাসপতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতাল ছাড়াও অনাময়, মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং কলেজ ও পড়ুয়া আবাসনগুলিতে রক্ষী রাখা হবে। শুধু নিরাপত্তা নয়, রোগীদের যে কোনও পরিস্থিতিতে যাতে রক্ষীরা সাহায্য করেন, তা-ও ঠিকাদার সংস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে। কোনও রোগীকে সাহায্য না করলে সেই রক্ষীকে বরখাস্ত পর্যন্ত করতে পারেন কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে প্রয়োজনীয় হলুদ কার্ড ছা়ড়া কাউকে ওয়ার্ডে ঢুকতে দিলে বা কাজের সময়ে ঘুমিয়ে পড়লে রক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গোটা হাসপাতাল সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হবে। এখন হাসপাতালে ৮০টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। জেলা পুলিশ হাসপতালে আরও ১৭৬টি ক্যামেরা বসাবে। সুপার বলেন, ‘‘কাজের বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারে ফের তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy