বিলসন্ডা গ্রামের এখানেই তৈরি হচ্ছিল চোলাই। নিজস্ব চিত্র
অজয়ের বাঁধের দু’পাশে কাশের বন। বাঁধ থেকে নেমে প্রায় ২০০ মিটার দূরে একটা বিল। তার পাড়েই বড় উনুনে পদ্মগাছ পুড়িয়ে চলে চোলাই তৈরি। হয়ে গেলে টিনের জারে ভরে তা ডুবিয়ে রাখা হয় বিলের জলে। পরে রাতারাতি টিনের ড্রাম, জারে ওই মদ পাচার হয়ে যায় পূর্ব বর্ধমান, বীরভূমের নানা এলাকায়।
শনিবার রাতে আউশগ্রামের ভেদিয়ার বিলসন্ডা গ্রামে অভিযানে গিয়ে এমনই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ওই বিলের আশপাশ থেকে ন’হাজার লিটার মদ উদ্ধারের পাশাপাশি সাতশো টিনের জার-সহ চোলাই তৈরির নানা সরঞ্জামও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
শান্তিপুরের বিষমদ কাণ্ডে উঠে এসেছিল কালনার নাম। জানা গিয়েছিল, হুগলি থেকে কালনা হয়ে ভাগীরথী পেরিয়ে চোলাই পৌঁছে যায় নদিয়ার বিভিন্ন এলাকায়। শুক্রবার কালনার সভা থেকে পুলিশ ও আবগারি দফতরকে সতর্কও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে টানা অভিযান চালাচ্ছে জেলা পুলিশ ও আবগারি দফতর। শনিবার রাতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে চোলাই পাচার ও তৈরির অভিযোগে পুলিশ ২৮ জনকে গ্রেফতারও করে। রবিবারও ধরা হয় ১০ জনকে। সঙ্গে জেলা পুলিশ ৩০০ লিটার ও আবগারি দফতর ২৭০ লিটার চোলাই বাজেয়াপ্ত করেছে। সব মিলিয়ে ৫ হাজার লিটারের বেশি মদের উপকরণ নষ্ট করা হয়েছে।
জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে দুই জেলার পুলিশ একসঙ্গে অভিযান চালাবে। আবগারি দফতরও থাকবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন থানা ক্রমাগত অভিযান করবে।’’ এ দিন আউশগ্রামের ওই এলাকাতেও যান তিনি। তখনও দেখা যায় জল থেকে চোলাইয়ের জার বের করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরেই এলাকায় এই কারবার চলছে। পুলিশ অভিযান চালালে নদীর তীর বরাবর জায়গা বদলে ফেলে কারবারিরা।
শনিবার আউশগ্রামের গোপীনাথপুর থেকেও ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতরা দিগনগর থেকে ৪টি প্লাস্টিকের পাত্রে ২৫ লিটার মদ পাচার করার সময় ধরে পড়েন। ওই থানার জয়কৃষ্ণপুর থেকেও অশোক মাঝি নামে এক জনকে চোলাই তৈরির সময় ধরেছে পুলিশ। ৬০ লিটার চোলাই উদ্ধার হয়েছে। দু’দিন জেল-হাজতও হয়েছে ধৃতের। দেওয়ানদিঘির সিরাজপুরের বিপদ দাস ও প্রশান্ত দাসকেও চোলাই পাচার করার সময় ভাণ্ডারডিহির পঞ্চবাটি থেকে ধরেছে পুলিশ।
আবগারি দফতর জানিয়েছে, শনিবার শক্তিগড় এলাকা থেকে দু’জন, আউশগ্রামের গোপীনাথবাটি থেকে দু’জন, ভাতারের বসতপুর থেকে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের আদালতে তোলা হলে শর্তাধীন জামিন দিয়েছেন বিচারক। আবগারি কর্তা শশীভূষণ তিওয়ারি বলেন, “টানা অভিযান চালিয়ে মেমারির মণ্ডলগ্রামে চোলাইয়ের ভাটি ভাঙা গিয়েছে। আরও অভিযান চলবে।’’
মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলী থানা এলাকাতেও শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আবাগারি দফতরের অভিযানেও ধরা পড়েছেন বিকাশ রায়, সর্বেশ্বর সরেন, জিসান বাসকে, সাধন মান্ডি, কার্তিক হাঁসদা, জয়দেব বারুই এবং বাবলু সরেন। ধৃতদের কাছ থেকে মিলেছে দশ লিটার চোলাই। মন্তেশ্বর থানার অভিযানে ধরা পড়েছেন সনৎ হাঁসদা, মুক্তি দলুই এবং গোবিন্দ মাল নামে তিন জন। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৭০ লিটার চোলাই, একটি মোটরবাইক এবং চোলাই পাচারে ব্যবহৃত হওয়া একটি ব্লাডার।
রবিবার মদ খাওয়া ছে়ড়ে সুস্থ থাকার বার্তা দিতে কালনা রেলপুলিশের তরফে শহরে একটি সচেতনতামূলক মিছিলও করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy