কুলটির রানিতলায় রাস্তা ভরা জঞ্জালে। ছবি: শৈলেন সরকার।
এত দিন ছিল পুরসভা। এ বার আসানসোলের সঙ্গে যুক্ত করে শহরকে পুরনিগমে উন্নীত করা হয়েছে। কুলটির বাসিন্দাদের বিশ্বাস, এ বার আরও উন্নত নাগরিক পরিষেবা মিলবে শহরে। তার সঙ্গে মুক্তি মিলবে দূষণ থেকেও।
খনিতে ঘেরা কুলটি শহরের অন্যতম বড় সমস্যা দূষণ। কল-কারখানা ও খনির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনবসতি যত বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে দূষণের মাত্রাও। তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল, কোনও তরফেই তা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ শহরবাসীর। কাটা তেল বা কেরোসিনে চলা অটো থেকে যেখানে-সেখানে ফেলা আবর্জনা, সব কিছুই তাই দূষণ ছড়াচ্ছে।
কাটা তেল বা কেরোসিনে অটো ও অন্য ছোট যানবাহনের চলাচল রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ এই শহরে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলটি, নিয়ামতপুর, চিনাকুড়ি, ডিসেরগড়, বরাকর এলাকায় কয়েকশো অটো কেরোসিন ব্যবহার করে চলাচল করে। দিনের ব্যস্ত সময়ে এই সব এলাকার রাস্তা ঢেকে যায় ধোঁয়ায়। কটু গন্ধে চোখমুখ জ্বালা করে। বাসিন্দারা জানান, অটো রিকশাগুলির অধিকাংশই আসে ঝাড়খণ্ড থেকে। সারা দিন এই শহরে যাত্রী পরিবহণ করে সন্ধ্যায় আবার ফিরে যায়। শুধু তাই নয়, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়াদের আনা-নেওয়ার জন্য চলা ছোট গাড়িগুলিও চলছে কেরোসিনে। স্থানীয় চিকিৎসক অরুণ জেমস বলেন, ‘‘কেরোসিন চালিত যানবাহন থেকে প্রতি দিন প্রচুর সীসা নির্গত হয়। তার ফলস্বরূপ শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, চোখের দৃষ্টি কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়।’’
দেশের নানা শহরের মতো বিভিন্ন সংগঠনের তরফে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ পালিত হয়েছে কুলটিতেও। কিন্তু, বিজ্ঞানসম্মত শৌচাগার নির্মাণে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে এই শহর। দেশের সর্বোচ্চ আদালত ২০০৯-এর মধ্যে সর্বত্র বিজ্ঞানসম্মত শৌচাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল। ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ফের সেই রায়ের কথা মনে করিয়ে আর এক বার দেশ জুড়ে বিজ্ঞানসম্মত শৌচাগার নির্মাণের অভিযান শুরু করে। কিন্তু এ বারও পিছিয়ে রয়েছে কুলটি। শহরের বেশ কিছু এলাকায় এখনও অবৈজ্ঞানিক উপায়ে তৈরি শৌচাগার ব্যবহার হয়।
কুলটির রানিতলা, কুলতড়া এলাকা থেকে প্রতি দিন সাফাই কর্মীরা অবৈজ্ঞানিক শৌচাগারের বর্জ্য সংগ্রহ করে জিটি রোড লাগোয়া এলাকায় জড়ো করেন। এলাকার বাসিন্দাদের অভিয়োগ, দুর্গন্ধে টেকা যায় না। এ সব বন্ধ করার জন্য তাঁরা বহু বার প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। কুলটি পুরসভার প্রাক্তন উপপ্রধান বাচ্চু রায় মেনে নেন, ‘‘বিজ্ঞানসম্মত শৌচাগার তৈরির জন্য কেন্দ্র থেকে টাকা এলেও পরিকল্পনার অভাবে আমরা কাজ করতে পারিনি।’’
নিকাশি ব্যবস্থা থেকে সাফাই, সব কিছু নিয়েই ক্ষোভ রয়েছে শহরে। আসানসোল থেকে জিটি রোড ধরে কুলটি ঢোকার মুখে রাস্তার দু’পাশে দেখা যায় আবর্জনার পাহাড়। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে দিনের পর দিন ধরে তা জমে রয়েছে। ছোট-বড় নানা নর্দমার জল উপচে বয়ে যায় রাস্তা দিয়ে। তাতে দূষণ ছড়ানোর পাশাপাশি মশা, মাছি, পোকার উপদ্রবও বাড়ছে।
সন্ধ্যা নামলেই বালতোড়িয়া, রামনগর, চিনাকুড়ির মতো কিছু এলাকা কয়লা পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। তখন সেই সব এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা যায় না। স্থানীয় সূত্রের দাবি, বিভিন্ন খনি থেকে কয়লা চুরি করে এনে তা পুড়িয়ে জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করে কিছু লোকজন। তার জেরে প্রতি দিন এই ধোঁয়া হয়। ব্যতিব্যস্ত হন এলাকাবাসী। বালতোড়িয়ার বাসিন্দা তারকনাথ মাহাতার অভিযোগ, ‘‘ঘরের মেঝেতে কয়লা গুঁড়োর প্রায় এক ইঞ্চি পুরু আস্তরণ পড়ে যায়। আসবাব থেকে চৌবাচ্চার জল, সবই নষ্ট হয়।’’
দূষণ রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না হওয়ায় এ সব নিয়েই বাস শহরবাসীর। তবে পুরনিগমে উন্নীত হওয়ায় কিছু সুরাহা হবে, সেই আশাই করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy